ফলাফল না দেওয়া পর্যন্ত রাবির আরবি বিভাগে শাটডাউন ঘোষণা
Published: 9th, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আরবি বিভাগে পরীক্ষার তিন মাস পার হলেও ফলাফল না দেওয়ায় অফিস, ক্লাসরুম এবং সেমিনারে ফের তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ফলাফলের দাবিতে বিভাগে তালা দেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত খোলা হযনি তালা।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থী ও তার মায়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ
আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী: উমামা ফাতেমা
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিভাগের সামনে এসে ফের বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় ফলাফল না দেওয়া পযর্ন্ত আরবি বিভাগে শাটডাউন ঘোষণা দেন তারা। ক্লাসরুম ও অফিসে তালা থাকায় শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারছেন না বলে জানান বিভাগের অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালে আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেবাস অনুযায়ী আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে বিএআর-৪১০৪ ‘সাইন্স অফ ট্রানসলেশন’ কোর্সে বিভাগের দুইজন শিক্ষক রয়েছে।
পরীক্ষা কমিটি তথ্য মতে, এ সেমিস্টারে প্রায় সব শিক্ষক তাদের নম্বর দিয়েছেন। কিন্তু এ কোর্সের দুইজন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক নিজাম উদ্দীন পরীক্ষার নম্বর জমা দিলেও বাকি একজন শিক্ষক জমা দেননি। তিনি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবং আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসঊদ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফলাফল নিয়ে বিভাগের শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে টালবাহানা করতেছে। এর আগে ২৫ আগস্ট ফলাফলের জন্য বিভাগে তালা দেওয়া হয়। পরে শিক্ষকদের মৌখিক আশ্বাসে তালা খোলা হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ফলাফল দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারেননি।
আজ সকালে বিভাগের সভাপতি ফোন দিয়ে একটা কাগজ নেওয়ার জন্য অফিসের তালা খুলতে বললেও ফলাফল না দেওয়া পযর্ন্ত বিভাগে শাটডাউন থাকার কথা জানান শিক্ষার্থীরা।
বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন বলেন, “আমাদের একজন সম্মানিত শিক্ষক একটা কোর্সের নম্বর না দেওয়ায় আমরা ফলাফল দিতে পারছি না। আজ উনার কোর্সের নম্বর দেওয়ার কথা। আমরা নম্বরটা পেলে ফলাফল দিতে পারব।”
এ বিষয়ে জানতে আরবী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন বলেন, “আমরা সকাল থেকে মিটিং এ ছিলাম, যেতে পারিনি। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে সরাসরি কথা বলবো।”
এর আগে, সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিভাগে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১১টা থেকে বিভাগের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফল ফল ন পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫