রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আরবি বিভাগে পরীক্ষার তিন মাস পার হলেও ফলাফল না দেওয়ায় অফিস, ক্লাসরুম এবং সেমিনারে ফের তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ফলাফলের দাবিতে বিভাগে তালা দেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত খোলা হযনি তালা।

আরো পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থী ও তার মায়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ

আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী: উমামা ফাতেমা

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বিভাগের সামনে এসে ফের বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় ফলাফল না দেওয়া পযর্ন্ত আরবি বিভাগে শাটডাউন ঘোষণা দেন তারা। ক্লাসরুম ও অফিসে তালা থাকায় শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারছেন না বলে জানান বিভাগের অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, বিক্ষোভ চলাকালে আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.

গাফফার আলী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেবাস অনুযায়ী আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে বিএআর-৪১০৪ ‘সাইন্স অফ ট্রানসলেশন’ কোর্সে বিভাগের দুইজন শিক্ষক রয়েছে।

পরীক্ষা কমিটি তথ্য মতে, এ সেমিস্টারে প্রায় সব শিক্ষক তাদের নম্বর দিয়েছেন। কিন্তু এ কোর্সের দুইজন শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক নিজাম উদ্দীন পরীক্ষার নম্বর জমা দিলেও বাকি একজন শিক্ষক জমা দেননি। তিনি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবং আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসঊদ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফলাফল নিয়ে বিভাগের শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে টালবাহানা করতেছে। এর আগে ২৫ আগস্ট ফলাফলের জন্য বিভাগে তালা দেওয়া হয়। পরে শিক্ষকদের মৌখিক আশ্বাসে তালা খোলা হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ফলাফল দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে পারেননি।

আজ সকালে বিভাগের সভাপতি ফোন দিয়ে একটা কাগজ নেওয়ার জন্য অফিসের তালা খুলতে বললেও ফলাফল না দেওয়া পযর্ন্ত বিভাগে শাটডাউন থাকার কথা জানান শিক্ষার্থীরা।

বিভাগের চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসেন বলেন, “আমাদের একজন সম্মানিত শিক্ষক একটা কোর্সের নম্বর না দেওয়ায় আমরা ফলাফল দিতে পারছি না। আজ উনার কোর্সের নম্বর দেওয়ার কথা। আমরা নম্বরটা পেলে ফলাফল দিতে পারব।”

এ বিষয়ে জানতে আরবী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন বলেন, “আমরা সকাল থেকে মিটিং এ ছিলাম, যেতে পারিনি। এখন আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করে সরাসরি কথা বলবো।”

এর আগে, সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিভাগে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১১টা থেকে বিভাগের সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফল ফল ন পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে