কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মার ভাঙনে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহৃত শ্মশানঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ৮০-৯০ জন পান চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুর, হাটখোলাপাড়া ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আরকান্দি ও মাধবপুরে গত চারদিন ধরে পদ্মা নদীতে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
আরো পড়ুন:
দুই মাসে পদ্মার পেটে ২০০ হেক্টর জমি
উজানের পানিতে খাগড়াছড়ির নিচু এলাকা প্লাবিত
জানা গেছে, জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত স্থান থেকে পদ্মা নদী রক্ষা রায়টা-মহিষকুন্ডি বেড়িবাঁধের দূরত্ব ৫০ মিটারেরও কম। হুমকিতে রয়েছে বসতবাড়ীসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। এই নিয়ে এই অঞ্চলের বসবাসকারী মানুষের আতঙ্কে দিন কাটছে। যেকোনো সময় বড় রকমের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
অপরদিকে, মাধবপুরের ভাঙন কবলিত এলাকায় রয়েছে বিস্তীর্ণ প্রান্তিক চাষিদের পান বরজ। গত কয়েক দিনের ভাঙনে ৮০-৯০ জন পান চাষির প্রায় ৩ হাজার সারি পান বরজ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহৃত একমাত্র শ্মশানঘাটটি নদীতে হারিয়ে গেছে।
ওই এলাকার আমিরুল আলী নামের এক কৃষক জানান, তার ভাই আরজেত আলী ও তার ছেলেদের ৭-৮ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এখানে প্রায় ৮০০ সারি পানের বরজ ছিল। একমাত্র উপার্জনের জায়গা হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
মবির পন্ডিত, রেজাউল, জামশেদ, রাব্বি, রহমান, কাশেম, নুরা, নাসির, আনেজ, আজগর, আবু শিহাবরা ১০০ সারি করে পানের বরজ হারিয়েছেন।
পানচাষি আবুল হোসেন বলেন, “মাধবপুর এলাকায় গত ২ বছর আগে এসব বরজ আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। এবার আবার পদ্মা নদী গিলে খেল। আমরা কৃষকরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।”
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, “বাহাদুরপুর ইউনিয়নে ভাঙনের বিষয়টি আমি শুনেছি। শীঘ্রই সেখানে পরিদর্শন করব। আর বসতবাড়ী থাকার কারণে জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ফয়জুল্লাহপুরে নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে কাজ শুরু হবে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, “পদ্মার ভাঙনে পান চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাদের প্রায় ৩০০ সারি পান বরজ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।”
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, “পদ্মা নদীতে ভাঙনের বিষয়টি আমরা জেনেছি। ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষিদের আবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ ব ল ন হয় প ন বরজ
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক।
এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”
বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।”
চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”
ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।”
হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে।
গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।
কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”
ঢাকা/রাঙামাটি/এস