যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাইয়ের একটি কারখানায় মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ব্যাপক অভিযানের পর দেশটিতে বিনিয়োগ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো ‘খুবই দ্বিধাগ্রস্ত’ বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং। খবর বিবিসির।

মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের গত সপ্তাহের অভিযানে আটক হওয়া তিন শতাধিক দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিক শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশে ফিরবেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জটিলতার কারণে তাদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিউল। 

আরো পড়ুন:

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ফের যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন ইউরোপের নেতারা

‘পরিস্থিতি অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর’ উল্লেখ করে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন “বিদেশে কারখানা স্থাপনের সময় কোরিয়ান কোম্পানিগুলো সাধারণত দেশ থেকে কর্মী পাঠায়। যদি এটি আর অনুমোদিত না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কারখানা স্থাপন আরো কঠিন হয়ে উঠবে। কোম্পানিগুলো প্রশ্ন তুলবে যে, যুক্তরাষ্ট্রে আরো বিনিয়োগ করা উচিত হবে কিনা।” 

গত সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তারা হুন্দাইয়ে একটি ব্যাটারি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৪৭৫ জনকে আটক করেন, তাদের মধ্যে ৩০০ জনেরও বেশি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ভিসার নিয়ম ভেঙে কাজ করছিলেন।

লি জানান, ‘ওয়াশিংটনের সঙ্গে ভিসা সংক্রান্ত বিকল্প নিয়ে আলোচনা করছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। শিগগিরই হয়তো বাড়তি কোটার মাধ্যমে অথবা নতুন ভিসা ক্যাটাগরি তৈরির মাধ্যমে বিকল্প তৈরি হতে পারে।’

লি বলেন, ‘আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র যদি এটিকে বাস্তবিক প্রয়োজন হিসেবে দেখে তবে তারা এটির সমাধান করবে।”

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “কর্মীদের দেশে ফেরাতে বিলম্ব হয়েছে হোয়াইট হাউজের নির্দেশে।” 

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আটক কর্মীদের মধ্যে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে থেকে আমেরিকান কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে ইচ্ছুক কি না তা যাচাই করতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

হুন্দাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ওই কারাখানা পরিচালনাকারী এলজি এনার্জি সলিউশন জানিয়েছে, তাদের অনেক কর্মী বিভিন্ন ধরনের ভিসা বা ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের আওতায় ছিলেন।

কারখানার এক কর্মী বিবিসিকে বলেন, অভিযানের সময় চরম আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। আটক অধিকাংশ কর্মী ছিলেন মেকানিক, যারা উৎপাদন লাইন বসানোর কাজে যুক্ত ছিলেন। তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিযুক্ত ছিলেন।

এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্ক আংশিকভাবে এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। তবে অভিযানের ঘটনায় কোরিয়ান গণমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম দোং-আ ইলবো এ ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগে ‘একটি ধাক্কা’ আখ্যা দিয়েছে। 

বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, দুই দেশকে দ্রুত সহযোগিতায় এগিয়ে এসে ‘বন্ধুত্বের ফাটল মেরামত করতে হবে।’

তবে হোয়াইট হাউজ হুন্দাই কারখানায় অভিযানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনায় বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছে।

রবিবার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদেশি কোম্পানিগুলোতে আমেরিকানদের চাকরি দেওয়ার আহ্বান জানান। 

ট্রাম্প বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি মার্কিন অভিবাসন আইন মেনে চলে, তবে তাদের কর্মী আনা ‘দ্রুত ও বৈধভাবে সম্ভব’ হবে। 

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র ক কর ম

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ