দুর্নীতি আর ‘নেপো বেবি’দের বিরুদ্ধে ফুঁসছে ফিলিপাইন
Published: 18th, September 2025 GMT
ক্রিসা টোলেন্টিনো দীর্ঘদিন ধরে বন্যার মধ্যেই জীবনযাপন করছেন। সরকারি স্কুলের ৩৬ বছর বয়সী এই শিক্ষিকা প্রায় প্রতিদিনই তার নিজের প্লাবিত এলাকা থেকে নৌকা দিয়ে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার কাছাকাছি অবস্থিত অ্যাপালিট শহরতলিতে যান। অবশ্য বছরের মাত্র দুই মাস তিনি যাতায়াতের জন্য শুকনো সড়ক ব্যবহার করতে পারেন।
দুর্ভোগের শিকার ক্রিসা চলতি বছর খুব রেগে আছেন। অস্বাভাবিকভাবে তীব্র বর্ষা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিতে দৈনন্দিন জীবনকে আগের চেয়ে অনেক বেশি বিপর্যস্ত করে তুলেছে এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
বৃষ্টিপাতের ফলে লাখ লাখ মানুষকে মাঝেমধ্যেইষ মাঝপথে আটকা পড়তে হয়। রাস্তাগুলো নদীতে পরিণত হয় এবং গাড়ি ভাসতে থাকে সড়কগুলোতে। এর পাশপাশি নর্দমার ইঁদুরের মলমূত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে লিভারের রোগ লেপ্টোস্পাইরোসিস।
ক্রিসা বলেন, “আমি নিজেকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার বলে মনে করছি। আমি কঠোর পরিশ্রম করি, আমি খুব বেশি খরচ করি না এবং প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে কর কেটে নেওয়া হয়। তারপর আমি জানতে পারি যে আমাদের করের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদরা উপভোগ করছেন।”
এই অভিযোগ কেবল ক্রিসার কণ্ঠেই নয়, বরং ফিলিপাইনজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মানুষের প্রশ্ন এখন, সরকার কেন রাস্তা, সেতু এবং বাঁধের মতো অবকাঠামোতে কোটি কোটি টাকা ঢেলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
তাদের ক্ষোভ টিকটক, ফেসবুক এবং এক্স-এ স্পষ্ট। সেখানে তারা আইনপ্রণেতা এবং নির্মাণ খাতের ধনকুবেরদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তাদের অভিযোগ, এই ব্যক্তির ‘ভৌতিক’ প্রকল্পের জন্য চুক্তি পেয়েছে যা কখনো বাস্তবায়িত হয় না।
প্রেসিডেন্ট ফার্ডিনান্ড মার্কোস জুনিয়র নিজেই একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শন করতে গিয়ে এটিকে একটি চলমান চ্যালেঞ্জ হিসাবে স্বীকার করেছেন। সেখানে তিনি তখন দেখতে পান যে বাঁধটির অস্তিত্বই নেই। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মন্ত্রী পরে জানিয়েছিলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি তহবিলের ৭০ শতাংশই দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হাউস স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং সিনেটের নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ ফিলিপিনোরা ‘নেপো বেবি’ অর্থাৎ ধনী রাজনীতিবিদ বা ঠিকাদারদের সন্তানদের উপরও তাদের ক্ষোভ ঝাড়ছেন। এই নেপো বেবিদের অমিতব্যয়ী জীবনযাপন পদ্ধতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে আছে।
২১ সেপ্টেম্বর একটি বিশাল দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে ফিলিপিনোরা। কারণ ১৯৭২ সালের এই দিনে তৎকালীন নেতা ফার্ডিনান্দ মার্কোস সামরিক আইন জারি করেছিলেন। এই মার্কোসের ছেলে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট। জনরোষ কতটা দূরে যেতে পারে তা তিনি ভালোভাবেই জানেন। ১৯৮৬ সালে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভই তার বাবাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল।
অতি সম্প্রতি, দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের কারণে ইন্দোনেশিয়ায আইনসভা সংস্কার করতে বাধ্য হয়। গত সপ্তাহেই নেপালে সরকারকে উৎখাত করে। তাই সোমবার, ফিলিপিনোরা ব্যাখ্যা দাবি করার সাথে সাথে,প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়র তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুর গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা, নির্বাচনী আচরণবিধির সংশোধন চায় ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) গঠন ও পরিচালনা বিধিমালা এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের কাছে এ স্মারকলিপি দেন ছাত্রদলের নেতারা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘আসন্ন জকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন গোষ্ঠী জকসু সংবিধি এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। ন্যায্য ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিতে আমাদের অনুরোধ, ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় প্রত্যেক ভোটারের ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনে অমোচনীয় কালি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং স্বচ্ছ, নাম্বারযুক্ত ব্যালট বক্স রাখা আবশ্যক।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যালট ছাপার সংখ্যা, ভোট প্রদানকারীর সংখ্যা এবং নষ্ট ব্যালটের তথ্য প্রকাশ করতে হবে। মিডিয়া ট্রায়াল বা ভুল তথ্য প্রচার হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার অনুমোদিত সব মিডিয়াকে নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসুর তফসিল ঘোষণার ৪১ দিন, চাকসুর ৪৪ দিন, রাকসুর ৮০ দিন এবং জাকসুর তফসিল ঘোষণার ৩১ দিন পর নির্বাচন হয়েছে। যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, তাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া বাকি চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তফসিল ঘোষণার সময় ও নির্বাচনের মধ্যবর্তী পার্থক্য বিবেচনা করে জকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠু একটা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, এজন্য ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেবে।’