পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “জলবায়ু অর্থায়ন প্রশমন ও অভিযোজন খাতে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী প্রয়োজনীয় সহায়তা পায়।”

বৃহস্প‌তিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সমন্বিত জলবায়ু অর্থায়ন বিষয়ে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি) বোর্ডের প্রথম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ‌তি‌নি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “জলবায়ু ঝুঁকি কার্যকরভাবে মোকাবিলায় প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার স্পষ্ট করা জরুরি এবং প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে ন্যায্য।”

জাতীয় জলবায়ু কার্যক্রমে বিসিডিপির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিসিডিপি নীতি, পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সমন্বয়ের একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম।’’

তিনি সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনসের (সিএসও) সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উপদেষ্টা বলেন, “সিএসওরা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্প উন্নয়ন সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক তহবিল সহজে পাওয়া যায়।”

পরিবেশ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তন কেবল পরিবেশগত সমস্যা নয়-এটি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জ। প্রশমন খাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বনায়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে জরুরি অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। 

অভিযোজন কার্যক্রমে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক খাল পুনরুদ্ধার এবং উপকূলীয় জেলাগুলিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে।”

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.

ফারহিনা আহমেদসহ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউয়ুন জিয়ং এবং ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রম সভায় উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, এডিবি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সভায় যোগ দেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিসিডিপির মূল বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।

সভায় বিসিডিপির অগ্রগতি, বোর্ড ও ওয়ার্কিং গ্রুপের টার্মস অব রেফারেন্স সংশোধন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থায়ন, সচিবালয় প্রতিষ্ঠা এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কার্যকরী বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট পর ব শ জলব য

এছাড়াও পড়ুন:

দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি

মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’

এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’

ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’

আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫

এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’

ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।

আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫

চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।

২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।

নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’

আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ