কলম্বোর আকাশের মেঘ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) নির্ধারণ করল নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচের ভাগ্য। শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনীর পর বৃষ্টির কারণে মাঠে আর নামা হয়নি নিউ জিল্যান্ডের। ফলে নির্ধারিত ম্যাচটি পরিণত হলো ‘নো রেজাল্ট’-এ। দুই দলকেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো সমান পয়েন্টে।

প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা তোলে ৬ উইকেটে ২৫৮ রান। যা এই আসরের কলম্বো পর্বে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ঘরের মাঠে স্পিনবান্ধব উইকেটে এমন রান যে প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারত, তা বলাই বাহুল্য।

আরো পড়ুন:

আফগান যুবারা আসছেন বাংলাদেশে

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে বাংলাদেশকে করতে হবে ২৯৪ রান

দিনের নায়ক নিঃসন্দেহে নিলাক্ষিকা সিলভা। ইনিংসের শেষ দিকে নামিয়ে দেন তাণ্ডব। মাত্র ২৬ বলেই ঝড় তোলা হাফ-সেঞ্চুরি করেন! এই বিশ্বকাপে এটিই এখন পর্যন্ত দ্রুততম অর্ধশতক, আগের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের শর্না আখতারের ৩৪ বলে। নিজের পুরোনো রেকর্ড (২৮ বলে) ভেঙেই নতুন ইতিহাস গড়লেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটার। ইনিংসে তিনি তুলে নেন ব্যক্তিগত চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি এবং পেরিয়ে যান ওয়ানডেতে এক হাজার রানের মাইলফলক। যা ছুঁয়েছেন লঙ্কানদের মধ্যে মাত্র অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে।

তবে ম্যাচের শুরুটা গড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক চামারী আথাপাত্থু ও তরুণ ওপেনার বিষ্মি গুনারত্নে। তাদের ১০১ রানের জুটি এনে দেয় দলকে শক্ত ভিত। আথাপাত্থু ফেরেন ৫০ রানে, আর বিষ্মি যোগ করেন ৪২। এরপর হাসিনি পেরেরা (৪৪) ও হর্ষিতা সমারাবিক্রমা (২৬) ইনিংস স্থিতিশীল করেন। তাদের পর নিলাক্ষিকার আগুনে ব্যাটে শেষ ১০ ওভারে আসে ৮০ রান। শেষ ওভারে একাই তোলেন ১৬ রান। পুরো ইনিংসটিকেই যেন রঙিন করে তোলেন তিনি।

নিউ জিল্যান্ডের পক্ষে অধিনায়ক সোফি ডিভাইন নিয়েছেন তিনটি উইকেট। তবে বাঁহাতি পেসার ব্রি ইলিংয়ের বোলিংও নজর কেড়েছে। মাত্র সাত ওভারেই দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি।

কিন্তু সব হিসাব পাল্টে দিল হঠাৎ নেমে আসা কলম্বোর বৃষ্টি। ইনিংস বিরতির পর আর খেলা শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে নির্ধারিত ফল ছাড়াই ম্যাচ শেষ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।

আগামী শুক্রবার শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার। অন্যদিকে শনিবার নিউ জিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

মেরে আন্দোলন ‘ঠান্ডা’ করার নীতি ছিল শেখ হাসিনার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর লেথাল উইপন বা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন—তাঁর কথোপকথনের বিভিন্ন অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে এটি এখন অকাট্যভাবে প্রমাণিত। মুঠোফোনে কথোপকথনের তিনটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মেরে ফেলে আন্দোলনকে ‘ঠান্ডা’ করার নীতি ছিল শেখ হাসিনার।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পৃথক আলাপে (মুঠোফোনে) প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারসহ আন্দোলন দমনে বল প্রয়োগের বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে।

মুঠোফোনে কথোপকথনের (হাসিনা-তাপস, হাসিনা-মাকসুদ ও হাসিনা-ইনু) পৃথক তিনটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ওয়্যারলেসে (বেতার বার্তা) তখন যে বার্তা দিয়েছিলেন, তার রেকর্ডও (অডিও) ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তাপসের সঙ্গে আলাপে শেখ হাসিনা লেথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কমান্ড রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের দায়) জায়গায় সব অ্যাভিডেন্স (প্রমাণ) বাদ দিলেও শুধু এই সরাসরি নির্দেশই তাঁর (শেখ হাসিনা) অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

শেখ হাসিনার সঙ্গে মাকসুদ কামালের কথোপকথন প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, খুব পরিষ্কারভাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, র‍্যাব ও বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তাঁর নির্দেশ ও সেটির পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে র‍্যাব ও বিজিবির যে অ্যাকশন (আক্রমণ), সেগুলো বিবেচনায় নিলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কয়েকটি অডিও কথোপকথন, পুলিশের ওয়্যারলেস মেসেজ (বেতার বার্তা) এবং এর সঙ্গে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের সাক্ষ্য বিবেচনায় নিলে লেথাল উইপন ব্যবহারের আদেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে যায়। আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের কাছে যায়। তাঁর কাছ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও অন্যদের কাছে যায়। এই বার্তা দেওয়ার পর দেখা গেছে, কীভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের হত্যার জন্য রাস্তার মোড়ে বা থানার সামনে বালুর বস্তা দিয়ে বাংকারসদৃশ ঘাঁটি তৈরি করে তার ওপর এলএমজি (লাইট মেশিনগান) বসানো হয়েছিল বলেও যুক্তিতর্কে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলএমজি হলো মারণাস্ত্র। এটি ছিল শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের বাস্তবায়ন।

আন্দোলনকারীদের শরীর থেকে উদ্ধার করা বুলেট ও পিলেট (ছররা গুলি বা রাবার বুলেট) ট্রাইব্যুনালে এর আগে প্রদর্শন করা হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এসব থেকে খুব পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, অস্ত্রগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মারণাস্ত্র ব্যবহার করার আদেশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার হাজারো ভিডিও রয়েছে। এ সময় ট্রাইব্যুনালে গণ–অভ্যুত্থানের সময়কার কয়েকটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। যার মধ্যে ছিল রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি, রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ইমাম হাসানকে (তাইম) গুলি করাসহ বেশ কিছু ভিডিও ।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তাতে নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ আছে। প্রতিবেদনের এই অংশ ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। এর পাশাপাশি তিনি গণ–অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরার জন্য প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের শিরোনাম পড়ে শোনান। সেই সঙ্গে গণ–অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছাত্রলীগ (এখন নিষিদ্ধ) নেতা–কর্মী নির্যাতন করেছেন, তাঁদের নাম ও ছবিসহ বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটির বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ইনুর মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির সময় বাড়ল

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের বিষয়ে শুনানির সময় বাড়ানো হয়েছে। ২৩ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

ট্রাইব্যুনালে ইনুর পক্ষে আইনজীবী নাজনীন নাহার সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। তিনি বলেন, ১ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠার নথিপত্র দেখে তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁদের ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে।

পরে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

হানিফকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২।

এ মামলার অপর তিন আসামি হলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।

গতকাল শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়, এই মামলার চার আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পরে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ