‘লিটল বাংলাদেশ’: লস অ্যাঞ্জেলেসে মাতৃভূমির ছোঁয়া
Published: 16th, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নান্দনিক শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। এখানকার থার্ড স্ট্রিটের নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে আলেকজান্দ্রিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত অংশটুকুতে দাঁড়ালেই মনে হবে, আপনি লস অ্যাঞ্জেলেসে নন, ঢাকার ব্যস্ত কোনো রাস্তায় আছেন। চোখে পড়বে রাস্তার মোড়ে নীল রঙের সাইনবোর্ডে লেখা ‘লিটল বাংলাদেশ’। আর তাই, দূরদেশে থেকেও মাতৃভূমির ছোঁয়া পেতে বাংলাদেশিদের একটি অংশ এ এলাকাকে বসবাসের জন্য বেছে নেন।
হলিউডের আলোঝলমলে নগর থেকে মাত্র তিন মাইল দূরে অবস্থিত এই ছোট্ট বাংলাদেশ যেন এক টুকরা স্বপ্ন; যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের আনন্দ, মাটির ঘ্রাণ ও সংস্কৃতি ফিরে পান।
প্রথম দেখাতেই বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি ও দেশীয় সংস্কৃতির উপস্থিতিতে অবাক লাগলেও সত্যি এ ‘লিটল বাংলাদেশ’ গড়ে উঠেছে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বুকে লস অ্যাঞ্জেলেসে। নামটাও দেওয়া হয়েছে সরকারিভাবেই। চারপাশে ছায়া দেওয়া গাছ, দূরে গাড়ির হর্ন ও শহুরে ব্যস্ততা মনে করিয়ে দেয় এখানকার মাটি যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু বাতাসের ঘ্রাণ, দোকানের সাইনবোর্ডের বাংলা নাম, খাবার, দেশি সাজপোশাক, মানুষের আড্ডা ও দোকানপাটের ভিড় বলে দেয়, এখানে রয়েছে ছোট্ট এক টুকরা বাংলাদেশ।
শহরের মধ্যে আরেক শহরথার্ড স্ট্রিট ধরে হাঁটতে শুরু করলে চোখে পড়ে অনেক বাংলাদেশি দোকান। রাস্তার দুই পাশে সরু ফুটপাত, এর পাশে সাজানো মুদিদোকান, বিউটি স্যালন, রেস্তোরাঁ, মোবাইল শোরুম বা মানি অর্ডারের দোকান। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই ভেসে আসে ভাজা সমুচা, পুরি, পেঁয়াজু বা কাবাবের সুবাস। মুহূর্তেই মনে হবে লস অ্যাঞ্জেলেসে নয়, আপনি পুরান ঢাকা বা মিরপুরের কোনো গলিতে দাঁড়িয়ে আছেন।
ওই সড়ক ধরে হাঁটার সময় লিটল বাংলাদেশের দোকানগুলো থেকে ভেসে আসে বাংলাদেশিদের কণ্ঠ। কোথাও বাজে রবীন্দ্রসংগীত, কোথাও আধুনিক বাংলা গান। পথচারীর মুখেও শোনা যায় বাংলার টান। দোকানের সামনে জটলা পাকিয়ে দাঁড়ানো তরুণদের আড্ডা, হাতে মুড়ি-চানাচুর বা চা। দোকানগুলোয় ছোট ছোট টেলিভিশন স্ক্রিনে বাংলাদেশি চ্যানেলের খবর চলছে। কেউ মুঠোফোনে ইউটিউবে বাংলাদেশের নাটক দেখছেন, কেউ আড্ডা দিচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে। সব মিলিয়ে শহরের ভেতর এক অন্য শহর।
আঞ্জুমান আরা শিউলি বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সম্প্রদায়ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইউনিটি ফেডারেশন অব লস অ্যাঞ্জেলেস’ এর সাধারণ সম্পাদক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘লিটল বাংলাদেশ আমাদের কমিউনিটির হৃদয়। এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা শুধু বসবাস করেন না, তাঁরা নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সামাজিক বন্ধনও ধরে রাখেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, নতুন ও পুরোনো সব প্রজন্ম এই কমিউনিটিতে একসঙ্গে অংশগ্রহণ করুক। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সবাই মাতৃভূমির সঙ্গে সংযুক্ত থাকুক।’
নীল রঙের সাইনবোর্ডে লেখা ‘লিটল বাংলাদেশ’.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স
এছাড়াও পড়ুন:
রাজবাড়ীতে প্রভাষককে পেটালেন সহযোগী অধ্যাপক
রাজবাড়ী সরকারি কলেজে এক প্রভাষককে কলার ধরে টেনে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই কলেজের এক সহযোগী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে মারধরের অংশবিশেষ দেখা গেছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে কলেজের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষক হলেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এ কে এম আজাদুর রহমান। অভিযুক্ত শিক্ষক অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোস্তফা কামাল। তিনি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকও।
প্রভাষক আজাদুর রহমান বলেন, “দুপুর একটার দিকে পরীক্ষার ডিউটি চলাকালে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু ও একই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক কুতুব উদ্দিনকে হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের আমির স্যার। এ ঘটনার পর কুতুব উদ্দিন অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমি তার সঙ্গে ছিলাম। কুতুব অভিযোগ লিখে প্রিন্ট করতে যায়। এর মধ্যে মোস্তফা কামাল স্যার এসে আমাকে কলার ধরে টেনে নিচে নিয়ে গিয়ে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এতে আমার ঘাড়, চোখ ও মুখে আঘাত লাগে। পরে সন্ধ্যায় আমি সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। এ ঘটনার বিচার চাই, আমি মামলা করব।”
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক কুতুব উদ্দিন বলেন, “দুপুরে পরীক্ষার ডিউটি চলাকালে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের আমির স্যার আমাকে হঠাৎ ধাক্কা দেন। বিষয়টি নিয়ে আমি অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। অভিযোগ লিখে প্রিন্ট করতে যাই। তখন মোস্তফা কামাল স্যার গিয়ে আজাদুর রহমানকে বলে, ‘এই আজাদ, এদিকে এসো’ এ কথা বলেই তিনি আজাদের কলার ধরে নাক-মুখে কিল ঘুষি দেন। ঠেকাতে গেলে বাংলা বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকেও ঘুষি মারেন মোস্তফা কামাল স্যার। আজাদুর রহমানকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছি। ওকে অনেক মারধর করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তফা কামাল বলেন, “ওরা একজন শিক্ষককে হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি জানতেই আমি তাদের কাছে যাই। তখন আমার সাথেও আজাদুর খারাপ ব্যবহার করে। তাই কলার ধরেছি, তবে মারধর করিনি।”
কোন শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তার বাড়ি খুলনা, এখানে চাকরি করে।”
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজবাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ কে এম ইকরামুল করিম বলেন, “আমি শুনেছি দুই শিক্ষকের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়েছে। তবে মারধরের বিষয়টি আমি জানি না।”
ঢাকা/রবিউল/এস