সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিন
Published: 21st, October 2025 GMT
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ৯ দিন ধরে চলা আন্দোলন শুধু একটি অর্থনৈতিক দাবি নয়। এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘদিনের অসংগতি ও অবহেলার আভাস দিচ্ছে। কালো পতাকা মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, শহীদ মিনার ও সচিবালয়ের পথে লংমার্চ, ভুখা মিছিল, অনশন—এসব কর্মসূচি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে শিক্ষকেরা শুধু নিজের অধিকার আদায়ের জন্যই রাস্তায় নেমেছেন, তা নয়; বরং শিক্ষকের মর্যাদা এবং শিক্ষাদানের মান রক্ষার জন্য তাঁরা আন্দোলন করছেন।
শিক্ষকেরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার দাবি জানিয়েছেন। সরকার এর বিপরীতে ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শিক্ষকেরা গ্রহণ করছেন না। তাঁদের দাবিতে তাঁরা অনড়—এই অর্থবছরে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং আগামী অর্থবছরে আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এই দাবিতে গতকাল সোমবারও তাঁরা অনশন করছিলেন। তাঁদের দাবি শুধু আর্থিক নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা অবহেলার প্রতিকার এবং শিক্ষকের ন্যায্য মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি।
দাবির যৌক্তিকতা স্পষ্ট। কারণ, দেশের শিক্ষকেরা বহু বছর ধরে সরকারি ও বেসরকারি সুবিধার তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক সমতা থেকে বঞ্চিত। সরকারি আমলাদের গাড়ি, বাড়ি, অতিরিক্ত ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধার বিপরীতে শিক্ষক-কর্মচারীরা সামান্য মানবিক অধিকার আদায়ের জন্য রাস্তায় নেমেছেন। এটি কোনো রাজনৈতিক বা সুবিধাবাদী আন্দোলন নয়; এটি শিক্ষকের ন্যায্য দাবি। এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্থিতিশীলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
এ আন্দোলন শুধু শিক্ষকেরই সমস্যা নয়; এটি দেশের শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনের ওপরও প্রভাব ফেলছে। জাতীয় প্রেসক্লাব, শহীদ মিনার এবং সচিবালয়ের পথে চলমান কর্মসূচি, অনশন এবং লংমার্চ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশ করতে পারছেন না, পাঠদান বন্ধ হচ্ছে। ফলে শিক্ষকের দাবির প্রতি অবহেলা করা মানে শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান ও দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি স্পষ্ট অবহেলা।
সরকারের শিক্ষক–কর্মচারীদের দাবি যথাসম্ভব মেনে নেওয়া উচিত। সব দাবি পূরণ করা সম্ভব না হলেও, শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করে দ্রুত একটি সন্তোষজনক সমাধান বের করতে হবে। এটি শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস কার্যক্রম পুনরায় স্বাভাবিক হবে এবং দেশের শিক্ষার মান রক্ষা পাবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ও ন্যায়পরায়ণতার প্রতিফলন।
এ আন্দোলন শুধু শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য নয়; এটি সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সতর্কবার্তা। শিক্ষকদের বঞ্চিত রাখা কোনো রাষ্ট্রের শিক্ষার জন্য গ্রহণযোগ্য নীতি নয়। শিক্ষক যদি ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে স্বীকৃতি না পান, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীর আগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকারের উচিত এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা—শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণে উদ্যোগ নেওয়া, অর্থ বরাদ্দের সঙ্গে বাজেট পরিকল্পনায় সমন্বয় করা এবং ভবিষ্যতের পে কমিশনের প্রস্তাবে শিক্ষকের ন্যায্য বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। শুধু এটিই শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করবে, শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান সংরক্ষণ করবে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলন ৯ দিন পেরিয়ে গেছে। আন্দোলনের কারণে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীরাই ভোগান্তিতে পড়ছে, তাদের ক্লাস–পরীক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে দ্রুত এ অচলাবস্থার সমাধান করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ শ র শ ক ষ ব যবস থ র শ ক ষ ব যবস থ র শ ক ষকদ র র জন য সরক র অবহ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা
সম্পূরক বৃত্তির তালিকা প্রকাশ ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল ও ছাত্র অধিকার পরিষদ প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’। আগামীকাল রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা।
গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী বি এম আতিকুর রহমান তানজিল বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বঞ্চনার শিকার। এখানে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হল নেই, ভালো ক্যাম্পাস নেই। প্রতিনিয়ত পুরান ঢাকায় এক প্রকার যুদ্ধ করে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’
আতিকুর রহমান তানজিল বলেন, ‘আমাদের এই সংগ্রাম অনশন কর্মসূচি থেকে শুরু হয়েছিল। আমরা সচিবালয় ঘেরাও করেছিলাম। কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নিলেও বাস্তবায়ন করেনি। এই প্রেক্ষিতে আমরা ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি দিই। সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের মুখোমুখি হয়েও আমরা দাবি আদায়ে পিছপা হইনি।’
তানজিল আরও বলেন, ‘সম্পূরক বৃত্তি প্রদান করা হলে শিক্ষার্থীদের টিউশনের চাপ কমবে। তাঁরা পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারে বিনিয়োগ করতে পারবে। অথচ গতকালের সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়ে কোনো আলোচনাই ওঠেনি। যমুনা আন্দোলনে ভাই-বোনদের রক্তঝরা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সম্পূরক বৃত্তি আদায় করেছিলাম।’
প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংগ্রাম ও সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন পার করছে। আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি, কিন্তু ফল ঘরে তুলতে পারিনি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ আবাসন সুবিধা আছে, আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ আবাসন সুবিধা আছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তা থেকে বঞ্চিত। তাই আমরা অনশন কর্মসূচি থেকে যমুনা আন্দোলনে সম্পূরক বৃত্তির জন্য আওয়াজ তুলি।’
রাকিব আরও বলেন, ‘আমাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার পাশাপাশি শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে হবে। সে জন্য সম্পূরক বৃত্তির কোনো বিকল্প দেখছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী খাদিজাতুল কুবরা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র বিষয়ক সম্পাদক অনিক কুমার দাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মাশফিকুল ইসলাম রাইন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক অর্ঘ্য শ্রেষ্ঠ দাস, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অপু মুন্সী, ক্রীড়া সম্পাদক মো. কামরুল হাসান নাফিজ এবং সদস্য পদপ্রার্থী মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ উপস্থিত ছিলেন।