রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের র‍্যাম্প নামানো প্রকৃতিবিধ্বংসী কাজ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে র‍্যাম্প নামানোর পরিকল্পনা বাদ না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছেন তিনি। আনু মুহাম্মদ বলেছেন, গত কয়েক মাসে সরকারের একমাত্র সংগঠিত উদ্যোগ ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভ্যাট–শুল্ক বাড়ানো। মানুষের জীবন যেসব কারণে তছনছ হচ্ছে, সেসব বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।

রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্কে শনিবার বিকেলে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে আনু মুহাম্মদ এসব কথা বলেন। কারওয়ান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত চলমান ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবিতে ৩০ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশের পরিবেশ সচেতন নাগরিক ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’। আন্দোলনের ৩০তম দিনে শনিবার নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

আনু মুহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে শেখ হাসিনা সরকারের চেয়ে ভিন্ন, সেটি তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) প্রমাণ করতে হবে। পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে র‍্যাম্প নামানোর মতো প্রকৃতিবিধ্বংসী কাজ বাদ দিয়ে এই পার্ক পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

এক মাস ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার পরও পান্থকুঞ্জ পার্কটি রক্ষার উদ্যোগ না নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, স্বৈর শাসকের পতনের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ হবে, পরিবর্তন হবে, এসব কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কাজে কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। উপদেষ্টারা বলেছেন, এটা (পান্থকুঞ্জ পার্ক দিয়ে এলিভেটেড এক্সপেসওয়ের র‍্যাম্প নামানো) পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি রামপালের (কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প) মতো ভয়ংকর প্রকল্পও নাকি পরিবর্তন করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, এসব চুক্তি আগের সরকারের আমলে হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসন আমলের ভয়ংকর চুক্তি ও প্রকল্পগুলোর যদি পরিবর্তন করা না যায়, তাহলে পরিবর্তন কোথায় এসেছে?

অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আগের সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করে এখন যেটা হয়েছে, সেটা আগেরটার কিছু কিছু ধারাবাহিকতা দেখতে পাচ্ছি। দায়মুক্তি আইন স্থগিত করা হলো। কিন্তু পেছনে একটা লেজ লাগানো হলো, আগের প্রকল্প ও চুক্তি অব্যাহত থাকবে। এগুলো গণ–অভ্যুত্থানের যে মানুষের ত্যাগ কিংবা তাঁদের যে পরিশ্রম, তাঁদের জীবন—সবকিছুর সঙ্গে প্রতারণা করা।’

পান্থকুঞ্জ পার্ককে রক্ষা করার দাবি জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই পার্কে গাছপালা লাগাতে হবে। এখান দিয়ে র‍্যাম্প নামানোর মূল শর্ত হচ্ছে আশপাশের মানুষের সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে, পার্কটিকে রক্ষা করতে হবে। এগুলো ঠিক রেখে র‍্যাম্প বানাতে পারলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এসব শর্ত ঠিক রেখে র‍্যাম্প নামানো সম্ভব নয়।

সমাবেশে নারীনেত্রী শিরিন হক পান্থকুঞ্জ রক্ষার দাবি জানিয়ে বলেন, ঢাকা শহরে এমনিতেই সব সবুজ আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। যেখানে প্রতিটি এলাকায় ছোট ছোট পার্ক করা দরকার, সেখানে পান্থকুঞ্জ পার্কটিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এটি পুনরুদ্ধার করতে হবে।

বিগত সরকারের সময় নেওয়া সব প্রকল্প নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন করা ভাবা উচিত বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, সব প্রকল্পেই প্রাণ-প্রকৃতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রকল্প বাতিল করার প্রয়োজন হলে বাতিল করতে হবে। সব প্রকল্প পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকায় পার্ক ও খেলার মাঠ মানুষের চাহিদার ৯০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়, কিন্তু পার্ক বা খেলার মাঠের জন্য কোনো প্রকল্প নেওয়া হয় না।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকা শহরে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে, এ নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও নগর–পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদি হাসান।

গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী নাঈম উল হাসান বলেন, দেশের রাজনীতিতে প্রাণ-প্রকৃতির বিষয়টি একেবারেই নেই। রাজনীতির মধ্যে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ একটা কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রাখার দাবি জানান তিনি।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ