দাবানলে এখনও দাউ দাউ করে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। সবচেয়ে বড় প্যালিসেডস দাবানলটি নেভাতে বিমান থেকে ফেলা হচ্ছে পানি ও অগ্নিনির্বাপক। এ ছাড়া স্থলে থাকা দমকলকর্মীরাও বাড়িয়েছেন কাজের গতি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সেখানে ১১০ কিলোমিটার গতিতে ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। এতে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় প্যালিসেডস দাবানলটি আরও ১ হাজার একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়েছে। এতে নতুন করে পুড়েছে আরও বাড়িঘর। তীব্রতা বাড়ার আগে প্যালিসেডস এবং ইটন দাবানলের বেশ কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু ঝোড়ো বাতাসের কারণে হঠাৎ করে আগুন আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে।
গত মঙ্গলবার থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন জায়গায় ছয়টি আলাদা দাবানল জ্বলে ওঠে। এখন পর্যন্ত সেখানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ১২ হাজারের বেশি অবকাঠামো। এ ছাড়া ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দাবানল পুরোপুরি নিভে গেলে উদ্ধারকারীরা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে খোঁজ চালাবেন। ওই সময় আরও অনেকের মরদেহ পাওয়া যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা টড হপকিন্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, প্যালিসেডস দাবানলের ১১ শতাংশ তারা আটকাতে পেরেছেন। এই দাবানলে পুড়েছে ২২ হাজার একর জায়গা। তবে ভয়ের বিষয় হলো, দাবানলটি ৪০৫ ফ্রি ওয়ে নামের একটি মহাসড়কের কাছে পৌঁছে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ সর্বশেষ বার্তায় জানায়, স্থানীয় সময় শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ভেনচুরা কাউন্টিতে শক্তিশালী বাতাস বইতে পারে। এর পর সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত একই পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে। ওই সময় থেকে ৫০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা আগুনকে উস্কে দিয়ে পরিস্থিতি খারাপ করতে পারে।
দাবানলের কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লাখ ৫৩ হাজার বাসিন্দাকে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৫৭ হাজার অবকাঠামো ধ্বংস হতে পারে বলে সতর্কতা দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি ১ লাখ ৬৬ হাজার বাসিন্দাকে আগাম সতর্কতা দিয়ে বলা হয়েছে, যে কোনো সময় সরে যাওয়ার নির্দেশনা আসতে পারে।
এমন বিপর্যয়ের মধ্যেই সাধারণ মানুষের বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করতে সমর্থ হয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া এডিসন। প্রতিষ্ঠানটির সিইও স্টেভেন পাওয়েল গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, এখন মাত্র ৫০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। গত কয়েক দিন আগেও যা প্রায় ৫ লাখ ছিল। অভিযোগ উঠেছে হার্স্ট দাবানলটি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার যন্ত্রপাতি থেকে লেগেছে। তবে স্টেভেন পাওয়েল জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাননি, যদিও অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে।
দাবানলের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপর্যয় ঘোষণা করেন তিনি। এতে করে সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা পাওয়ার পথ সুগম হয়। যারা দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সহায়তা পাবেন বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৪০টি উদ্ধারকারী দল ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে তল্লাশি চালানো শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুরও রয়েছে। উদ্ধারকারী দলের সদস্য ও কুকুর মরদেহের খোঁজ করবে। খবর রয়টার্সের।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫