সেন্টমার্টিনের ১৬৫ হোটেলকে ৭ দিনের মধ্যে অপসারণ করতে নোটিশ
Published: 13th, January 2025 GMT
সেন্টমার্টিন দ্বীপে কার্যক্রম বন্ধ করে ১৬৫ আবাসিক হোটেলকে নিজ উদ্যোগে ৭ দিনের মধ্যে অপসারণ করতে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারির মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার স্বাক্ষরিত বিভিন্ন সময়ে এ নোটিশগুলো দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) অবস্থানগত অথবা পরিবেশগত ছাড়পত্র না নিয়ে হোটেলগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সেখানে আরও বলা হয়, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সেন্টমার্টিন দ্বীপ এলাকাকে ইসিএ ঘোষণা করে।
এর ফলে প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কর্তন, আহরণ, সব প্রকার শিকার ও বন্যপ্রাণী হত্যা, ঝিনুক, কোরাল, কচ্ছপ ও অন্যান্য প্রাণী ধরা বা সংগ্রহ, প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী সব কার্যক্রম, ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট অথবা পরিবর্তন করতে পারে এমন কার্যক্রম, মাটি-পানি-বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোন প্রকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে পাথর উত্তোলন ও বেড়িবাঁধ তৈরি করে ইসিএ এলাকায় এসব রিসোর্ট নির্মাণ করে পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়াও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সেন্টমার্টিন দ্বীপে নির্মিত এসব স্থাপনা বন্ধ ও অপসারণ করা অত্যাবশ্যক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ জমির উদ্দিন বলেন, নোটিশে উল্লিখিত সাত দিনের মধ্যে কার্যক্রম বন্ধ করে অপসারণ করা না হলে এসব স্থাপনার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ পর্যন্ত ১৬৪টি হোটেল-রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জমির উদ্দিন বলেন, পর্যায়ক্রমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবৈধভাবে নির্মিত সব হোটেল- রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হবে।
নোটিশপ্রাপ্ত হোটেল-রিসোর্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্লু -মেরিন, ফ্যান্টাসি, আটলান্টিক, সী-প্রবাল, সিনবাদ, স্যান্ড ক্যাসেল, কিং শোক, দ্বীপান্তর, জলকুটির, জ্যোস্নালয়, সূর্যস্নান, সান অ্যান্ড স্যান্ড টুইন বিচ রিসোর্ট, সেইলর, গোধূলি, জল কুটির, বীচ-ভেলি।
সম্প্রতি সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, ২৭টি হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০টিই বহুতল ভবন। এ ছাড়া সেমিপাকা স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে সাতটি। এসব ভবন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রকাশ্যে নির্মিত হচ্ছে।
দ্বীপের হোটেল মালিক সমিতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সেন্টমার্টিনে বহুতল ও এক তলা মিলিয়ে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা আড়াইশর বেশি। এর মধ্যে গত দুই বছরে তৈরি হয়েছে ১৩০টি। ২৭টি নির্মাণাধীন আছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, একটি স্থাপনা নির্মাণেও তাদের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।
দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, নির্জন সৈকতের বালিয়াড়ি ও কেয়াবন উজাড় করে অবকাঠামো তৈরি, গভীর রাত পর্যন্ত সংরক্ষিত এলাকায় আলোকসজ্জা, লোকজনের হইচইয়ে ডিম পাড়তে আসতে পারছে না মা কচ্ছপ। এলেও কচ্ছপের ডিম খেয়ে নিচ্ছে কুকুর। সৈকতের বালুচর দিয়ে পর্যটকবাহী ইজিবাইক (টমটম) ও মোটরসাইকেল চলাচল করে। ফলে শামুক, ঝিনুক, লাল কাঁকড়াসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে সরকার সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি– এ চার মাস সেখানে পর্যটক সীমিত থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকরা যেতে পারবেন, কিন্তু রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্টমার্টিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে পর্যটক যাওয়া বন্ধ রাখা হবে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত গত নভেম্বর মাস থেকে বাস্তবায়নও করা হচ্ছে। পর্যটক সীমিতকরণের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে একদিকে যেমন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে গেছে, অপরদিকে দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অনেকটা সংরক্ষণ হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, সেন্টমার্টিনে যে অবৈধ হোটেল-রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা প্রশাসনের কারও অজানা নয়। তারপরও আশার বাণী হচ্ছে পর্যটক সীমিতকরণের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে একদিকে যেমন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে গেছে, অপরদিকে দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অনেকটা সংরক্ষণ হচ্ছে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। ২০২০ সালে সেন্টমার্টিন নিয়ে আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নাল-এ প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, পদক্ষেপ না নিলে ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর
বেসরকারি খাতের পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত (মার্জার) করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে এই একীভূতকরণের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করি, আগামী সরকারও এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত হবে।’
আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি ব্যাংককর্মীদের আশ্বস্ত করেন, এই একীভূতকরণের ফলে কোনো কর্মীকে চাকরি হারাতে হবে না।
গভর্নর বলেন, কর্মীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে কিছু শাখা পুনর্বিন্যাস করা হবে। যেসব ব্যাংকের শাখা শহর এলাকায় বেশি, সেগুলোর কিছু শাখা গ্রামাঞ্চলে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
এ সময় পাচার করা সম্পদ উদ্ধার করা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘সম্পদ উদ্ধারের বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়া। আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া এসব অর্থ উদ্ধার সম্ভব নয়। এ জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা চাই, আদালতের মাধ্যমে যাচাই হোক, আমাদের দাবি কতটা সঠিক। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।’
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরতের পথও খোলা আছে। সে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজবেন। সরকার যে পথ নির্ধারণ করবে, আদালত কিংবা এডিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে।
গভর্নর আরও বলেন, দেশীয় সম্পদ উদ্ধারে দেশের আদালতে এবং বিদেশি সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে।