কুষ্টিয়ায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জায়গা দখল করে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে বিশাল ফটক নির্মাণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম। একই সঙ্গে গৃহায়ণের বিভিন্ন প্লট দখল করে সেখানে আইটি পার্ক, স্কুল ভবন, জেলা পরিষদের মিলনায়তন নির্মাণ করা হচ্ছিল।

আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ গুঁড়িয়ে দিয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বলছে, জায়গা দখলমুক্ত করে প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ। এ সময় সেখানে অন্তত ৫০ জন প্লটের প্রকৃত মালিক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলছেন, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তাঁরা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তাঁদের জায়গা দখল করে নেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতার দাপটে আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁদের বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে এসব জমি দখল করে সরকারি স্থাপনা করার উদ্যোগ নেন।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন তাদের হাউজিং এলাকায় সাড়ে ১৯ একর জায়গা আছে। এসব জায়গা ২০১৮ সালের আগে লটারি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আড়াই কাঠা, তিন কাঠা ও পাঁচ কাঠার প্লট রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ২১২টি প্লট রয়েছে। তবে ২০১৮ সালের দিকে জেলা প্রশাসন এসব জমি অধিগ্রহণের নামে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়। এদিকে প্লট বরাদ্দ পেয়ে অনেকে তাঁদের জমি নিবন্ধনও করে নেন। প্লটমালিকেরা তাঁদের জমি আর বুঝে পাননি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশাল আকারের শাহি মসজিদ, এক হাজার আসনের অত্যাধুনিক জেলা পরিষদের মিলনায়তন, আইটি পার্ক। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রবিউল ইসলাম দুই বিঘা জমি দখল করে নেন। সেই জমি সীমানাপ্রাচীর দিয়ে বিশাল ফটক নির্মাণ করেন। শাহি মসজিদের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। জেলা পরিষদের মিলনায়তনের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আইটি পার্কের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

প্লটমালিকেরা বলেন, সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়েও প্লট বুঝে পাচ্ছিলেন না। তাঁরা রায় পেলেও প্রভাবশালী নেতারা জায়গা জোর করে দখল করে রেখেছিলেন উন্নয়ন করার নামে। উল্টো মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন। ২০১৮ সালের দিকে ছয়জন প্লটমালিক তাঁদের জমি ফেরত পেতে উচ্চ আদালতে রিট করেন। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তাঁরা তাঁদের পক্ষে রায় পান।

সরেজমিন দেখা যায়, পুলিশ-র‍্যাবের সহযোগিতায় ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামের দখলে থাকা জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। এরপর জেলা পরিষদের মিলনায়তনের সামনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী কার্যালয়ও ভাঙা হয়। আইটি পার্কে গিয়েও উচ্ছেদ চালানো হয়।

ভুক্তভোগী সাইফুল আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বি ব্লকে ৯ নম্বর প্লট পেয়েছিলেন। পাঁচ কাঠা জমি বরাদ্দ পেয়ে রেজিস্ট্রিও করেছিলেন। কিন্তু গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিতে পারেনি। সে সময় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন খাস দেখিয়ে এসব জমি অধিগ্রহণ করেন। কিন্তু তিনিসহ ছয়জন প্লটমালিক উচ্চ আদালতে রিট করেন। এরপর তাঁরা রায় পান।

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ২০ একর জায়গা নিয়ে সমস্যা আছে। আমরা সেগুলো আজ দখলমুক্ত করছি। নতুন করে নকশা করা হবে। যাঁরা রেজিস্ট্রি করেছেন, তাঁদের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার 

আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অশ্লীল ও শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করায় স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরো পড়ুন:

জুলাই বিরোধিতা: ইবির ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’

আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার 

সোমবার (৩ নভেম্বর) নোবিপ্রবির রেজিষ্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজীদ হোসাইন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের  রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

নোটিশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত বিদেশে গমন করেন, যা সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর ধারা ২(চ) অনুযায়ী ‘পলায়ন’ ।

এছাড়া একজন সরকারি চাকরিজীবী হয়েও রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করায় ‘নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ,২০০১’ এর ধারা ৪৭(৫) এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। 

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, গত ২৮ মে  আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হলে সেটির জবাব যথাযথ হয়নি। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি আপনাকে পুনরায় ৭ জুলাই বিজ্ঞ আইনজীবীর মতামত এবং ৩১ জুলাই প্রেরিত নোটিশের জবাব না দেয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবি রিজেন্ট বোর্ডের ৬৭ তম সভার আলোচ্যসূচি-১৮ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ৪৭(৮) ধারা অনুযায়ী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল ) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) ও (গ) অনুযায়ী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সহকারী পরিচালক (সামরিক বরখাস্ত) পদ থেকে চূড়ান্ত বা স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো লেনদেন থাকলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে জিয়াউর রহমান ভূঁইয়া আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে থাকেন এই কর্মকর্তা।

ঢাকা/শফিউল্লাহ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোবিপ্রবির আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তা স্থায়ী বহিষ্কার 
  • আগের ভোটের সবাই বাদ, ‘যোগ্য’ নতুন ডিসি খুঁজে পাচ্ছে না সরকার