ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এখন দুর্ঘটনার হটস্পট
Published: 14th, January 2025 GMT
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ে যোগাযোগে নতুন মাত্রা যুক্ত করলেও ক্রমেই দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠছে। প্রশস্ত সড়ক, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ইন্টারচেঞ্জ, ধীরগতির গাড়ির জন্য আলাদা সার্ভিস সড়ক থাকা সত্ত্বেও দুর্ঘটনার হটস্পট এখন এই এক্সপ্রেসওয়ে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলাচলের নির্দিষ্ট গতিসীমা মানছে না যানবাহন। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে সংকেত ব্যবস্থাও আধুনিক নয়। পাশাপাশি রয়েছে পুলিশের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা। এসব কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। যাত্রী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ ও পরিবহন-সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় বাড়ছে দুর্ঘটনা। পুলিশ আরও বলছে, যানবাহনগুলো ট্রাফিক আইন না মানার কারণেই দুর্ঘটনা হচ্ছে।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস ও হাসাড়া হাইওয়ে থানার হিসাবে, গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। আর ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৪টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৮০ জন আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ২১ জন। এ ছাড়া সরকারি হিসাবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়েতে সব মিলিয়ে ৯৮৫টি দুর্ঘটনায় ১৩৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে এক্সপ্রেসওয়েতে কার, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাসের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, মিনিট্রাকসহ সব ধরনের মালবাহী যানের গতিবেগ সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার। আর মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু কেউ এই নীতিমালা কেউ মানছেন না। এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার পেছনে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলাও দায়ী।
সড়ক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়া কিংবা দৃষ্টিসীমা একেবারে কমে গেলে বাংলাদেশে ফেরি ও বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ বা কত গতিতে চলতে দেওয়া উচিত– এ বিষয় দেখভাল করার কোনো ব্যবস্থা নেই। আধুনিক মহাসড়কগুলোয় ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে গতি দেখানোর সংকেত বা সাইনবোর্ড থাকে। সেই অনুযায়ী তা মানা হচ্ছে কিনা, তা হাইওয়ে পুলিশের দেখার কথা। কিন্তু অবকাঠামো, যানবাহন ও জনবল থাকার পরও হাইওয়ে পুলিশ তা করে না।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটিকে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে বলা হয়। মহাসড়কটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা বিশ্বে বিরল। ৫৫ কিলোমিটার এই মহাসড়ক নির্মাণে মোট ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা।
গত বছরের মে মাসে সড়ক ও মহাসড়কে বিভিন্ন যানবাহন কোন গতিতে চলাচল করতে পারবে, এ-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রকাশ করেছিল সরকার। এতে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ গতিসীমার নির্দেশনা শুধু স্বাভাবিক সময়ের জন্য প্রযোজ্য। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, প্রখর রোদ, অতিরিক্ত বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা হলে নিয়ন্ত্রণযোগ্য গতিসীমা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ যতটুকু গতি হলে চালক যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, সেই অনুযায়ী চালাতে হবে। দৃষ্টিসীমা বেশি মাত্রায় কমে গেলে বা একেবারে দেখা না গেলে যানবাহন চালানো বন্ধ রাখতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার জন্য পুলিশের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা এবং সড়কের সংকেত ব্যবস্থা দায়ী। তিনি বলেন, ঘন কুয়াশার সময় হাইওয়ে পুলিশ কিছু দূর দূর অবস্থান নিয়ে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ করার কথা। কিন্তু সেটা তারা করছে না। সবচেয়ে দামি সড়কে মান্ধাতার আমলে সাইন-সংকেত ব্যবস্থা রাখা অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ এসব ব্যবস্থার খরচ খুব সামান্য।
এক্সপ্রেসওয়েতে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, এখানে সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮০ হলেও গাড়ি চালানো হয় একশর ওপরে। একাধিক বাসযাত্রী বলেন, গাড়িগুলো প্রতিযোগিতা করে– কে কার আগে যাবে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা প্রতিযোগিতা কারণে ঘটছে।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, বেপরোয়া গতির কারণেই এত দুর্ঘটনা ঘটছে। যেহেতু এখন কুয়াশা পড়ছে তাই গতি কমানো না গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরো বাড়বে।
মুন্সীগঞ্জের হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, বড় গাড়ির পাশে যদি মোটরসাইকেল বেপরোয়াভাবে চলে তাহলে বড় ঝুঁকি হয়ে যায়। আমাদের কোনো সিস্টেম নেই, এমনকি এক্সপ্রেসওয়েতে এটা নিয়েন্ত্রণ করার কোনো সিস্টেম নেই।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম-আইটিএসর আওতায় ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এক্সপ্রেসওয়ে মনিটরিংয়ের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
ইউনূস-তারেক বৈঠক
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: যৌথ বিবৃতি
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”
বৈঠকে লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সব রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ