বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়েছে চট্টগ্রাম কিংস। আজকের ম্যাচে মোহাম্মদ মিঠুনদের দল খুলনা টাইগার্সকে ২০১ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় চট্টগ্রাম। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৫৫ রানে থেমে যায় মেহেদী হাসান মিরাজদের ইনিংস, ফলে ৪৫ রানের বড় জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।  

বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে খুলনা টাইগার্স। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় তারা। ৮ বলে ৩ রান করে ফিরে যান ওপেনার ডম শিবলি। অধিনায়ক মিরাজ ও মোহাম্মদ নাইম ইনিংস মেরামতের ইঙ্গিত দিলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।  

মিরাজ ৩ চারের সঙ্গে ১ ছক্কায় আক্রমণাত্মক শুরু করলেও শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ৩০ রানে মিরাজের বিদায়ের পর দ্রুতই নাইমও ফিরে যান। তিনি করেন ৭ বলে ৯ রান। দলীয় ৪২ রানে নাইমের বিদায়ের পর কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি।  

দারুইশ রাসুল কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও তা যথেষ্ট ছিল না। তিনি ৩১ বলে ৩৭ রান করেন। আফিফ হোসেন ১৫ বলে ১৫ রান যোগ করার পর খুলনার ব্যাটিং লাইনআপ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৫ রানে থামে তাদের ইনিংস।  

টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে চট্টগ্রাম। দলীয় ১৮ রানে ফিরে যান ওপেনার উসমান খান। তবে এর পরেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন গ্রাহাম ক্লার্ক। আবু হায়দার রনির প্রথম বলেই বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন তিনি।  

মিরাজ এবং মোহাম্মদ নেওয়াজের স্পিন সামলে অভিষিক্ত মাহফুজুর রাব্বির এক ওভারে টানা তিন ছক্কা হাঁকান ক্লার্ক। একাই সেই ওভারে তোলেন ২০ রান। সালমান ইরশাদের এক ওভারেও একটি চার এবং একটি ছক্কা মেরে তাণ্ডব চালান।  

ক্লার্কের বিধ্বংসী ইনিংস থামে ৪৮ বলে ১০১ রানে। এই ইনিংসে ছিল সাতটি চার এবং ছয়টি বিশাল ছক্কা। দ্বিতীয় উইকেটে পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে ৬৩ বলে ১২৮ রানের জুটি গড়ে চট্টগ্রামের বড় স্কোরের ভিত গড়েন ক্লার্ক। পারভেজ করেন ২৯ বলে ২৯ রান।  

চলতি বিপিএলে এটি ষষ্ঠ সেঞ্চুরি এবং ক্লার্কের দ্বিতীয় স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। তার ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে চট্টগ্রাম পাচ্ছে বড় ভরসা। আগের তিন ম্যাচে তিনি করেছেন যথাক্রমে ৬০, ৩৯ এবং ৪০ রান।  

খুলনা টাইগার্সের হয়ে মোহাম্মদ নেওয়াজ এবং সালমান ইরশাদ ৩টি করে উইকেট নেন। আবু হায়দার একটি উইকেট পেলেও চট্টগ্রামের রানের পাহাড় ঠেকাতে তা যথেষ্ট ছিল না।  

এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের উপরের দিকে উঠে এসেছে চট্টগ্রাম কিংস। অন্যদিকে, টানা চতুর্থ হারে বিপাকে খুলনা টাইগার্স।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ