চট্টগ্রাম পর্বে পারিশ্রমিক নিয়ে বিতর্ক ও অনুশীলন বয়কটের খবরকে ছাপিয়ে নিজেদের মাঠের লড়াইয়ে জয়ে ফিরল দুর্বার রাজশাহী। শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সিলেটকে ৬৫ রানে হারিয়ে বিপিএলে নিজেদের তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে দলটি। রাজশাহী দলের এই সাফল্যের পেছনে অবদান রেখেছেন বিজয়, তাসকিন এবং সানজামুলরা। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে রাজশাহী তুলে নেয় ১৮৪ রানের সংগ্রহ। জবাবে সিলেট ১৭ ওভার তিন বল খেলে ১১৯ রানে অলআউট হয়ে যায়।  

ব্যাট করতে নেমে ২৯ রানের ওপেনিং জুটি পায় রাজশাহী। এর মধ্যে ১৯ রান করে ফিরে যান হারিস রউফ। পরে জিসান আলম ২০ রান করে ফিরে যান। তিনে নেমে বিজয় খেলেন ২২ বলে ৩২ রানের ইনিংস। তিনটি চার ও দুটি ছক্কার শট খেলেন রাজশাহীর অধিনায়ক। 

দলটির পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন জিম্বাবুয়ের লেগ স্পিন অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল। তিনি ৪টি ছক্কা ও একটি চারের শট খেলেন। এর মধ্যে ছক্কার হ্যাটট্রিক করেন সিলেটের অধিনায়ক আরিফুলের বলে। ইয়াসির রাব্বি ১০ বলে ১৯ রান যোগ করেন। স্লগে বাজে ব্যাটিং করেছেন আকবর আলী। তিনি ১৫ বলে মাত্র ১৪ রান করতে পারেন। 

সিলেটের হয়ে বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার রুয়েল মিয়া ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভারে মাত্র ২ রান দেন তিনি। ডানহাতি স্পিনার নাহিদুল ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। বাঁ-হাতি তরুণ স্পিনার নাহিদুজ্জামান ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন।

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সিলেট শুরু থেকেই হোঁচট খায়। প্রথম ওভারেই পল স্টার্লিং (২) আউট হন। দ্বিতীয় ওভারে রনি তালুকদারকেও (০) হারায় দল। এরপর জাকির হাসান এবং জর্জি মানজির ছোট জুটি দলের স্কোর একটু এগিয়ে নেয়। তবে ২৮ বলে ৩৯ রান করা জাকির এবং ২২ বলে ২০ রান করা মানজির বিদায়ের পর সিলেটের ইনিংস ধসে পড়ে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ১০৪ রানেই ৮ উইকেট হারায় দলটি।  

শেষ দিকে জাকের আলী কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। ২০ বলে ৩১ রান করেন তিনি। তবে সঙ্গীর অভাবে লড়াই করতে পারেননি। রিস টপলির বোল্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে ১১৯ রানেই গুটিয়ে যায় সিলেট।  এতে ৬৫ রানের জয় পায় বিজয়ের দল।

রাজশাহীর হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন সানজামুল ইসলাম। এ ছাড়াও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী, তাসকিন আহমেদ, আফতাব ইসলাম নেন দুটি করে উইকেট। আর একটি মাত্র শিকার করেন মার্ক দয়াল। পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনার মাঝে রাজশাহীর এমন জয় দলটির আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতে এ ধরনের পারফরম্যান্স ধরে রাখাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল র ন কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোট ফিরিয়ে এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সংক্রান্ত যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চারজন। তাঁদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে এই আবেদন করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছিল। বিলোপ হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রিট আবেদন হলে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং গণভোট বাদ দেওয়া সংক্রান্ত সেই সংবিধান আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই দুটিসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ, ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিলও ঘোষণা করেন আদালত।

চলতি বছরের ৮ জুলাই ১৩৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল দায়ের করলেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।

আপিলের কারণ ব্যাখ্যা করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। পুরো সংশোধনীর বাতিল চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু পুরোটা বাতিল করেননি। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে আবেদন করা হয়েছে। ‘যথাসময়ে’ এর শুনানি হবে।

শরীফ ভূঁইয়া বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল করা হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনতে পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের আরও কিছু ধারা বাতিল করা প্রয়োজন ছিল। হাইকোর্ট রায়ে সেসব ধারা বাতিল করেননি। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সম্পর্কিত ত্রয়োদশ সংশোধনীর সবগুলো বিধান সংবিধানে ফিরে আসেনি। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। ত্রুটিগুলোর বিষয়ে আদালতও বলেছেন। তারপরে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল না করে আংশিক বাতিল করেছেন। এতে করে সংবিধানে সংশোধনীর ব্যাপারে পদ্ধতিগত যে সুরক্ষা আছে, তা অকার্যকর হয়েছে। এসব কারণে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।’

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি অবৈধ ক্ষমতা দখল করলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংরক্ষিত নারী আসন ৫০-এ উন্নীত করা হয়। জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংবিধানে জাতীয় চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়। সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের সাতই মার্চের ভাষণ, ছাব্বিশে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।

একই সঙ্গে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।

পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে গত বছর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন হয়। সুজন সম্পাদকসহ পাঁচ ব্যক্তি একটি এবং আরেকজন ব্যক্তি আরেকটি রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।

রায়ে বলা হয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। এই দুটিসহ আইনের ৪৭ ধারা, ৭ক ও ৭খ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ৭ ধারা এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করা সংক্রান্ত আইনের ১৮ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

রায়ে গণভোটের বিধান সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ (দ্বাদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে আনা) পুনর্বহাল করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করে বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ