জেল থেকে ‘রানা’ ঘায়েলের মিশনে রিপন!
Published: 18th, January 2025 GMT
পুরো নাম ফারুক হোসেন রিপন। স্থানীয়রা তাকে চেনেন সেমাই রিপন নামেই। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞ্যান করে চলা এই সেমাই রিপন কখনো শামীম ওসমান আবার কখনো ভিড়ে ছিলেন সাবেক মেয়র আইভীর বলয়ে। দলীয় প্রভাব থাকায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ভূমিদস্যুতা, প্রতারণা, কিশোরগ্যাং পরিচালনা, অর্থের বিনিময়ে বিচার-শালিসে প্রভাব খাটানো এমনকি গণমাধ্যমে ভুল তথ্য সরবরাহ করে হয়রানী মূলক সংবাদ প্রকাশ করানো সহ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মামলাবাজ হিসেবে কুখ্যাতি রয়েছে রিপনের। এবার জেলে বন্দি থেকেও এসএস রানা নামে এক ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে ঘায়েল করতে কূটচাল চেলে যাচ্ছে রিপন; এমন অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের তামাকপট্টি এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও মাদার প্রিন্টের স্বত্বাধিকারী এসএম রানার সাথে বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামল থেকেই বিরোধ ছিলো সেমাই রিপনের। রানার জমি ব্যবসায় মধ্যস্থতাকারী তথা দালালের ভূমিকায় থেকেও করেছিলেন একেরপর এক প্রতারণা। এ নিয়ে মামলাও রয়েছে রিপনের বিরুদ্ধে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়া রিপন স্থানীয় কতিপয় বিএনপি নেতাকে হাত করে রাতারাতি ভোলপাল্টে ফেলেন। যুবলীগ থেকে নিজেকে বিএনপি ঘরনার দাবি করে এলাকায় হৈচৈ ফেলে দেন। কেননা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলো রিপন। আওয়ামী লীগের শাসনামলেও যুবলীগের পরিচয়ে এলাকায় সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছিলেন। ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর ও সোনারগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। মামলার এজাহারগুলোতে উল্লেখ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়েছে রিপন।
৫ আগস্টের পর ভোলপাল্টানো এই যুবলীগ ক্যাডার অর্থের বিনিময়ে এক বিএনপি নেতার ছায়ায় থাকলেও রেহায় পায়নি। গত ১২ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে সদর মডেল থানা পুলিশ। তবে ৫ আগস্টের পরে এবং গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্তও রিপন ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়িয়েছিলেন। তার কিশোরগ্যাং বাহিনী নিয়ে গত ৫ আগস্টের পর সৈয়দপুরে ব্যবসায়ী এসএম রানার জমি দখলের জন্য দফায় দফায় হামলা চালিয়েছিলো সে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় যুবলীগ ক্যাডার রিপনকে গ্রেফতার করার পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় থাকা একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজী, প্রতারণা ও ভূমিদস্যুতাসহ সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হককে হেনস্থা ও সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ইমাম শহীদ মাওলানা মোঃ ইকবাল হত্যা মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয় তদন্ত কর্মকর্তারা।
বর্তমানে জেলে বন্দি থাকলেও সেখান থেকেই ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছে রিপন; এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীর। ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত এসএম রানাকে ঘায়েল করতে যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রিপন ও তার পরিবারসহ সিন্ডিকেটের লোকেরা। এর মধ্যে সাগর নামে তার বেতনভুক্ত লোককে দিয়ে কলকাঠি নাড়িয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই দুইটি টেলিভিশন সহ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে এসএম রানাকে নিয়ে যেসকল সংবাদ প্রচার করানো হয়েছে, সেখানে সাগরসহ রিপন সিন্ডিকেটের যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে এসএম রানা বলেছেন, রিপন শত্রæতা বশতঃ তার পরিবার ও সহযোগিদের যোগসাজসে এবং মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতেই মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করিয়ে যাচ্ছে আড়াল থেকে।
এসএম রানা বলেন, “আমি মাদার প্রিন্ট নামক একটি স্বনামধন্য মুদ্রনশিল্প প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সামাজিক কর্মকান্ডে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কাউন্সিলর, সাবেক ক্রিকেটার এবং শীতলক্ষ্যা ক্রিকেট ক্লাব ও শীতলক্ষ্যা ক্রিকেট একাডেমীর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নই এবং কোনো রাজনৈতিক দলের পদপদবী কিংবা প্রাথমিক সদস্যও নই। শহীদনগর সুকুমপট্টি এলাকার চিহ্নিত যুবলীগ ক্যাডার, ভূমিদস্যু, প্রতারক, মামলাবাজ এবং কূটকৌশলী হিসেবে পরিচিত ফারুক হোসেন রিপন আমার জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বেশ কয়েকবার হামলাও চালিয়েছিল তার লোকেরা। জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে সাইনবোর্ড সরিয়ে নিজেদের লোকের নামে সাঁটানো সহ জমি জবর দখল, গাছপালা নিধন ও নির্মান সামগ্রী লুটের ঘটনায় রিপনের লালিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে বিগত ১২ সেপ্টেম্বর সদর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। বর্তমানে রিপন জেল হাজতে থাকলেও আমাকে প্রতিপক্ষ ভেবে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার পরিবার ও সিন্ডিকেটের লোকদের দ্বারা কতিপয় সাংবাদিকদের নানা ভাবে প্রভাবিত করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, মানহানীকর ও অসত্য সংবাদ প্রকাশ করিয়ে যাচ্ছে। আমাকে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন এবং বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এর ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে এবং রাজনৈতিক দলের লোক হিসেবে আখ্যাদিয়ে তানভীর আহমেদ টিটুর অস্ত্রের ভান্ডার নাকি আসার কাছে এবং ভুমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বলে অপবাদ দিয়ে খবরের শিরোনাম করে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর প্রকাশ করা হয়। আমি একজন ব্যবসায়ী এবং ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সংশ্লিষ্ট বহু মানুষের সাথে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু রিপনের লোকেরা আমাকে ঘায়েলের টার্গেট নিয়ে বিসিবির সম্মানিত সভাপতি ও পরিচালকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গত জুলাই-আগস্টে অস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালানোর মত মিথ্যা, কাল্পনিক ও ঘৃণিত অভিযোগে আমাকে জোরপূর্বক অপরাধী হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
একজন ব্যবসায়ী, ক্রীড়া সংগঠক, সমাজ সেবক ও দায়িত্বশীল পদে অবস্থান করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যা বা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলি চালানোর মতো ঘৃণিত কর্মকান্ডে আমি কখনোই জড়িত ছিলাম না এবং আমার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগে কোনও মামলা নেই। অথচ প্রকৃত অপরাধিকে বাঁচানোর হীনস্বার্থে এবং সামাজিকভাবে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও ঘায়েল করতে হত্যাসহ বহু মামলার আসামী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে আটক সেমাই রিপনের লোকদের আর্থিক সহায়তায় উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে স্থানীয় একটি কুচক্রিমহল ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে নিয়ে অপপ্রচার করছে। এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক।”
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ঘ য় ল করত ছ ত র জনত র জন ত ক ব যবস য় ৫ আগস ট এল ক য় আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
গত জুনে সংঘাতের সময় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে উপর্যুপরি আঘাত হানছিল। তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশটির ভান্ডারে থাকা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সে (থাড) টান পড়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে সৌদি আরবের হাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের ছিল। তাই সংকটকালে ইসরায়েলকে কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদ তাতে রাজি হয়নি।
অনুরোধের বিষয়টি জানেন, এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুজনের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা সবাইকে (মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল) তাদের সবাইকে (ইসরায়েলকে কিছু ধার দেওয়া) অনুরোধ করেছিলাম। যখন কাজ হলো না, তখন আমরা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধু কোনো একটি দেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়।’
কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে আসছিলেন, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, সৌদি আরবের জন্যও হুমকি।
তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই দেশের হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আগেই নিজেদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইয়েমেনের হুতিরা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই নিজেদের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম ব্যাটারিটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। ব্যাটারিটি নিজেদের সার্বভৌম তহবিল দিয়েই কিনেছিল রিয়াদ। ঘটনা হলো, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র ৯ দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সেনাবাহিনী এই ব্যাটারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের একপর্যায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ, তখন ইসরায়েলের বিভিন্ন নিশানায় ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল ইরান।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় মিডল ইস্ট আই-ই প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। পরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান নিজেদের প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছিল।
চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মাত্র ২৫ শতাংশ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল, যা পেন্টাগনের পরিকল্পনামাফিক বিশ্বব্যাপী দেশটির সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় মজুতের তুলনায় অনেক কম।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কী পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল, সেই গোপন সংখ্যা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ (এসএম-৩) ছুড়েছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল দেশটির রণতরি আরলি বার্ক ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে।
ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শক্তি। তা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আগপর্যন্ত ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইরান।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যেভাবে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তবে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকটি বুঝে গিয়েছিল ইরান। তাই তারা ইসরায়েলে বেশি পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, দুর্বলতাটা হলো, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে আপনার প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৈরি করার সক্ষমতা সীমিত।
গত শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়েও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৌজন্য অনুরোধ ও চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও বলেছেন, ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল। তবে দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েল আদৌ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়েছিল কি না, এই দুই কর্মকর্তার কেউ তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম থাড কিনেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। দেশটি থাড কিনেছিল ২০১৬ সালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যেভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালাতে পেরেছে, তা উপসাগরীয় অঞ্চলের তুলনামূলক কম সুরক্ষিত দেশগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।