একদিকে ফুলের জলসা, অন্যদিকে সুরের উচ্ছ্বাস। কাওয়ালি, বাউল গান আর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে মঞ্চ মাতাচ্ছেন শিল্পীরা। পাশের সরোবরে ঝরনাধারার উচ্ছলতা। বৈচিত্র্যময় পিঠার আয়োজনে চলে মনভোজন। ফৌজদারহাট ডিসি পার্কে ফুল উৎসব জমজমাট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ১৮ হাজার দর্শনার্থী ফুলের মেলায় আসছেন। তবে ছুটির দিনে তা ছাড়িয়ে যায় লাখের কোটা।
ফৌজদারহাট বন্দর সংযোগ সড়ক সংলগ্ন ডিসি পার্কে গত ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। গত শুক্রবার ১৩তম দিনে আড়াই লাখ দর্শনার্থী ফুল উসবে এসেছেন বলে জানিয়েছে আয়োজকপক্ষ। চলতি সপ্তাহে চলছে (১৭-২৩ জানুয়ারি) পিঠা উৎসব। ফুল উৎসবে কথা হয় সপরিবারে ঢাকা থেকে আসা মেট্রোরেলের উপ-প্রকল্প পরিচালক নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এত প্রজাতির একত্রে ফুলের সমারোহ খুব কমই দেখা যায়। ১৩৬ প্রজাতির ফুল দেখে মন ভরে গেছে। মনোরম পরিবেশে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ফুলের উৎসব প্রতিটি মানুষকে মুগ্ধ করবে। যোগাযোগব্যবস্থাও ভালো রয়েছে।’
ঢাকা থেকে আসা নাদিয়া আহমেদ বলেন, ‘মেলায় দেখলাম বেশির ভাগ বিদেশি প্রজাতির শীতকালীন ফুল। ২৫ ধরনের গোলাপ, স্টক, গেজানিয়া, ক্যামেলিয়া, হলিহক, স্নোবক, নেসটিয়াম, লিলিয়াম, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার মতো ফুল রয়েছে। প্রথমদিন ফুল উৎসবে আসতে রাত হয়ে যাওয়ায় ভালোভাবে দেখা হয়নি। পরের দিন সারাদিন ফুলের সুবাস নিয়েছি।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সঞ্চালক মাইকে ঘোষণা করলেন, কাওয়ালি নিয়ে আসছেন শিল্পী সায়েম সানি। ফুল বাগান থেকে এসে দাঁড়িয়ে কাওয়ালি উপভোগ করেন শত শত মানুষ। ১২তম দিনে বাউল ও কাউয়ালি গানে মাতিয়ে রেখেছিলেন উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। শুধু গান নয়, নৃত্যের ছন্দেও আপ্লুত দর্শকরা।
মুনমুন বণিক যখন গাইতে শুরু করলেন তখন দর্শকরা চেয়ার ছেড়ে দিয়ে নাচে মশগুল। এরপর গাইলেন বাউলা নাজিম, শান্তা দাশ, অনন্যা বড়ুয়া।
এ সময় জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম উপস্থিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর উপস্থিত হন বিভাগীয় কমিশনার মো.
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সালাউদ্দিন বলেন, তারা ১৪ জন নৃত্য ও ২০ জন গানের শিল্পী ছয় ঘণ্টা পারফরম্যান্স করার প্রস্তুতি নিয়ে ডিসি পার্কে গিয়েছিলেন। সময়ের কারণে সবাইকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘কাওয়ালি গানে দর্শকরা মাতোয়ারা হয়ে উঠেছিলেন। শিল্পীরাও নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। শিল্পীদের পরিবেশনা ও দর্শকদের
উচ্ছ্বাস দেখে আমি অভিভুত।’ সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিল্পীদের গানের তালে দর্শকদের নাচ অনেক ভালো লেগেছে।
পা ফেলা জায়গা নেই পার্কে : সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ২০ হাজার দর্শনার্থী টিকেট কেটে পার্কে প্রবেশ করেছেন। গত ১৩ দিনেই অনলাইন টিকেট কেটে পার্কে এসেছেন আড়াই লাখ দর্শনার্থী।
শুক্রবার বিকেলে থেকে মূল ফুল উৎসব এলাকায় পা ফেলার জায়গা ছিল না। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছেন। অনেকে ঘুরে ঘুরে ফুল দেখছেন, আর ছবি তুলছেন। ফুল বাগানের ঠিক দক্ষিণ পাশে লোহার চেয়ারে বসেছিলেন বয়সী দুজন। তাদের একজন নিজাম উদ্দিন, তিনি বন বিভাগের একজন অবসরপাপ্ত কর্মকর্তা। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায়। নিজাম উদ্দিন বলেন, মন ভালো রাখতে মাঝে মধ্যে ডিসি পার্কে বেড়াতে আসেন তিনি। ফুল, মানুষের আনাগোনা ভালই উপভোগ করেন তিনি।
চকরিয়া থেকে ডিসি পার্কে আসেন কাতার প্রবাসী হেলাল শিকদার। তিনি বলেন, ‘পরিবার ও কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন নিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে এসেছি। শত ফুলের মধ্যে স্যালোসিয়া নামের ফুলটি আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে।’
উৎসবে কথা হয় সাইফুদ্দিন নামে আরেক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যারা ফুল পাহারা দিচ্ছেন, তারা গাইড হিসেবে নিজ মাচার ফুলের নামগুলো মুখস্থ রাখতে পারতেন। যারা ফুল চেনেন না, তারা জিজ্ঞেস করলে বলতে পারতেন।’
ডিসি পার্কের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘শুক্রবারে দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকে। দর্শনার্থীদের চাপ সামাল নেয়ার আগাম প্রস্তুতিও থাকে আমাদের।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ১৮ হাজারের বেশি দর্শনার্থী ডিসি পার্কে প্রবেশ করছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।