বরিশালের একটি হোটেলে নবজাতক মাসুদ রানাকে মৃত মায়ের পাশে কান্নারত অবস্থায় পাওয়া যায়। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঢাকার শ্যামলীর এসওএস শিশুপল্লি তাকে উদ্ধার করে। সেখানে কৃত্রিম মা-বাবার স্নেহে বড় হয়ে হারম্যান মেইনার স্কুলে পড়াশোনা শুরু করে। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় মাসুদের মনে নারীত্বের অনুভূতি জাগে। ২০১৮ সালে তিনি নারীতে রূপান্তরিত হয়ে নাম রাখেন রানী চৌধুরী। নৃত্যগুরু ফারহানা চৌধুরী বেবীর অধীনে লোকনৃত্যে পারদর্শী রানী নাচের সব শাখায় দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর স্বপ্ন একটা যন্ত্রণাদায়ক সমাজের দৃষ্টি থেকে বেরিয়ে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডারদের সাধারণ মানুষের মতো জীবন-যাপনের জায়গা তৈরি করা।
একটি শিশু তার বাসস্থানেই থাকবে এবং সেই শিশু স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কেন একটি শিশু জন্মের পর থেকে অবহেলা ও যন্ত্রণার মধ্যে বেড়ে উঠবে? আমি যেসব আয়োজনে আমন্ত্রিত হয়, সব জায়গায় এটিই বলি, আমাদের মধ্যে থাকা ট্যাবুর জায়গাটা দূর করে স্বাভাবিকতার জায়গা গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণের সময় ও বয়ঃসন্ধিকালে আমরা দেখি, শিশুরা নিজেদের শারীরিক পরিবর্তনের ফলে দ্বিধান্বিত থাকেই, একই সঙ্গে পরিবার ও সামাজিক চাপের ফলে মানসিক বিপর্যস্ত নিয়ে তারা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এটি আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না। একটি শিশু যদি হিজড়া হিসেবেই জন্ম নেয় তাহলে সে তার মতো করেই বেড়ে উঠবে। আমি ‘হিজড়া’ শব্দটা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি এ জন্য, আমাদের দেশে এ শব্দটা বেশি পরিচিত। এমনকি ‘হিজড়া সংস্কৃতি’ আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত। সমাজ ঐতিহ্য গ্রহণ করছে; মানুষগুলোকে সমাজ থেকে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে যেতে বাধ্য করছে। এ জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জনশুমারিতে প্রায় ১২ হাজারের মতো হিজড়ার সংখ্যা উল্লেখ থাকলেও, আমাদের দেশে প্রায় ৬ লাখের ওপরে হিজড়াসহ বিভিন্ন মানুষ রয়েছে। জনশুমারিতে কম হিজড়া তালিকাভুক্ত হওয়ার বড় কারণ, পরিবারের সংকোচবোধ। তারা সন্তানকে তার সঠিক লিঙ্গীয় পরিচয় দিতে দ্বিধাবোধ করে।
একজন হিজড়াকে সমাধিস্থ করতে গেলেও আমাদের অসহায় লাগে। কেননা, সাড়ে তিন হাত মাটি আমাদের কেউ দিতে চায় না এখনও। এ রকম বহু ঘটনার মুখোমুখি আমাদের হতে হয়; যা মর্মস্পর্শী। আমি নিজে সাফল্য লাভ করেছি হিজড়া কমিউনিটি থেকে এসে। তাতে লাভ কী? বাকিদের আমি টেনে আনতে চাইলেও সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা আমাকে আটকে দিচ্ছে। এ থেকে বেরোতে আরও ৫৩ বছর লাগবে কিনা, তাও জানি না আমি। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”
তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস