চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা: সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড
Published: 20th, January 2025 GMT
ভারতের আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। সিবিআই মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানালেও শেষমেশ আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক অনির্বাণ দাস। সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। খবর হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাবাজার পত্রিকা।
জরিমানার অর্থ দিতে না পারলে আরও পাঁচ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় শিয়ালদহ আদালত। এ ছাড়াও ধর্ষণের জন্য ৭ লক্ষ এবং হত্যার জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিচারক বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।’
এদিকে সাজা ঘোষণার আগে আবারও বিস্ফোরক আর্তি জানিয়েছে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয়। তিনি বলেন, ‘আমি খুন বা ধর্ষণ কোনটাই করিনি। বিনা কারণে ফাঁসানো হয়েছে। আমি যদি ধর্ষণ-খুন করে থাকতাম, তাহলে কি রুদ্রাক্ষের মালা নষ্ট হত না? আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে যখন সিবিআই-এর কাছে যাই। আমি কিছু করিনি।’
যার উত্তরে বিচারক বললেন, ‘কী হয়েছে, সেটা আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমার কাছে বিচার্য হল প্রমাণ। আপনি যা যা বলেছেন, শুনেছি। কিন্তু সিবিআই যা প্রমাণ দিয়েছে, তাতে আমি নিশ্চিত, আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক।’
যদিও তারপরেও দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় বলতে থাকে, ‘আমি দোষ করিনি। তাও দোষী প্রমাণ করা হয়েছে। আমি আর কী বলব! আপনি যা বিচার করার করুন।’
এদিন আদালতে সিবিআই ফের আরজি কর-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয়ের ফাঁসির পক্ষেই জোর দাবি জানায়। সিবিআই বলে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা আছে। কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে। এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। মানুষকে পরিষেবা প্রদানের জন্যই ৩৬ ঘণ্টা ধরে ডিউটিতে ছিলেন। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। তার মৃত্যু শুধুমাত্র পরিবারের ক্ষতি নয়, সমাজেরও ক্ষতি।
সিবিআই এদিন আরও বলে, বহু মেয়ে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য লড়ে যাচ্ছে। সেখানে যদি সুরক্ষা না থাকে, তবে সমাজব্যবস্থা ব্যর্থ বলে পরিগণিত হবে। সমাজ তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে চাইছে। সুরক্ষা চাইছে।
আরজি কর-কাণ্ডে রায় শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি দোষীর ফাঁসি চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ফাঁসির দাবি করেছিলাম। কী করে জানি না.
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪, ৬৬ এবং ১০৩ (১)— এই তিনটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। সিবিআই মৃত্যুদণ্ডের জন্য দাবি করলেও শেষমেশ আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক অনির্বাণ দাস। সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। জরিমানার অর্থ দিতে না পারলে আরও পাঁচ মাসের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় শিয়ালদহ আদালত। এ ছাড়াও ধর্ষণের জন্য ৭ লক্ষ এবং হত্যার জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিচারক বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।’
আদালতের নির্দেশ শুনে কাঁদো কাঁদো দেখা গেল দোষী সঞ্জয় রায়কে। বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকেন তিনি। সঞ্জয়ের আইনজীবী তাকে বলেন, ‘আপনার মৃত্যুদণ্ড নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হল।’ তার প্রেক্ষিতে সঞ্জয় বলেন, ‘আমার তো বদনাম হয়ে গেল।’
ভুক্তভোগীর বাবা জানান, ক্ষতিপূরণ চান না। তার উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘আপনি মনে করবেন না টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে এমন বলা হলে আমিও তাই করতাম।’
বিচারক সঞ্জয়কে বলেন, আপনাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালের উজিরপুরে ‘ভুয়া’ চিকিৎসককে কারাদণ্ড
বরিশালের উজিরপুরে রেজাউল করীম নামে এক ‘ভুয়া’ চিকিৎসককে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাইনুল ইসলাম খান তাকে এ দণ্ডাদেশ দেন।
কয়েক বছর ধরে উপজেলার পশ্চিম সাতলা বাজারে ‘মায়ের দোয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয় দিতেন রেজাউল করিম। ‘ভুয়া’ এই পরিচয় ব্যবহার করে উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পশ্চিম সাতলায় ডায়গনস্টিক সেন্টার খুলেন তিনি। যেখানে সার্জারিসহ জটিল সব রোগের চিকিৎসা দেওয়া হতো। চিকিৎসার নামে গ্রামের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
উজিরপুর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার দুপুরে রেজাউল করীমকে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিকেলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে ওই ডায়গনস্টিক সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাইনুল ইসলাম খান। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে একটি সনদপত্র দেখান রেজাউল। যা ‘চার্টার অব অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব ইন্ডো অ্যালোপ্যাথি অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন’ নামে ভারতীয় একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের। আদতে ওই সনদের কোনো বৈধতা নেই। ভুয়া চিকিৎসক হওয়ায় রেজাউলকে আটক করা হয় এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।