বাংলাদেশে পাবলিক স্পেস, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ইউএন উইমেন ঢাকার মধ্যে একটি অংশীদারত্ব চুক্তি সই হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকায় ইইউ অফিসে এ চুক্তি হয়।

এই প্রকল্পটি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার (২০১৮-২০৩০) লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে একটি সহিংসতামুক্ত সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং মোকাবিলার কৌশলগুলো একীভূত করবে।

প্রকল্পটি বিশেষত পাবলিক স্পেস, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি এবং যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করবে। এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক জেন্ডার সমতা এবং মানবাধিকারের মানদণ্ডের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করবে। 

প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউর সুপারিশমালা, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন (সিডও) এবং নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। এর পাশাপাশি, এই প্রকল্পটি নারীদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যের অবসানের জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য সূচক ৫.

১.১ অর্জনে অবদান রাখবে।

ইইউর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা এবং গত পাঁচ বছর ধরে চলমান ইউএন উইমেনের জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে এই ৪.৮ মিলিয়ন ইউরো অনুদানের প্রকল্পটি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফোকাস করবে। সেগুলো হলো পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন ও জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে নীতি ও সিস্টেমের মাধ্যমে সহায়ক পরিবেশকে শক্তিশালী করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান, সম্পদ এবং অনুশীলনের উন্নয়ন, ক্ষতিকারক সামাজিক ও জেন্ডারভিত্তিক নিয়ম এবং অভ্যাস পরিবর্তন এবং সুশীল সমাজ ও নারী অধিকার সংগঠনের এজেন্সি এবং নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিশ্চিতকরণ।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার বলেন, ‘জেন্ডার সমতা উন্নয়ন এবং নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা দূর করার ক্ষেত্রে প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ইইউর প্রতিশ্রুতির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই উদ্যোগ। এটি এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করবে যেখানে নারী ও মেয়েরা হয়রানি বা বৈষম্যের ভয় ছাড়াই উন্নতি করতে পারবে।

ইউএন উইমেনের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে এবং বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য প্রত্যাশা পূরণে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে পেরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন গর্বিত।’

সমর্থন ও কৌশলগত অংশীদারত্বের জন্য ইইউকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং বলেন, ‘এই বছর নারী বিষয়ক চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলন এবং বেইজিং ঘোষণা ও প্ল্যাটফর্ম গ্রহণের ৩০তম বার্ষিকী, যা নারী অধিকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, বৈষম্যমূলক নিয়মকানুন মোকাবেলা এবং সুশীল সমাজে বিনিয়োগের মাধ্যমে, বাংলাদেশে জেন্ডার সমতাকে বাস্তবে পরিণত করায় ইউএন উইমেনের কার্যক্রমকে আরো জোরদার করতে ইইউর এই সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ন ড র সমত র জন য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ