প্রচণ্ড একটা মানসিক দ্বন্দ্ব প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছিল মেয়েটিকে। মেরুদণ্ডের ব্যথাটা তাঁর এতটাই গুরুতর, ঘুম ভাঙা প্রতিটি সকাল ঈশ্বরের আশীর্বাদ মনে করতে শুরু করেন পাওলা বাদোসা। ডাক্তার বলে দিয়েছেন, বছরে মাত্র তিনটি কর্টসন ইনজেকশন নিতে পারবেন। তার একটি বেশি হয়ে গেলে জীবন সংকট। এদিকে এপ্রিলের মধ্যেই দুটি নেওয়া হয়ে গেছে। বিছানার পাশে টেনিস র্যাকেটের দিকে তাকিয়ে তখন পাওলা নীরবে ভাবতে থাকেন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শুরু হতে এখনও আট মাস বাকি। তিনি কি পারবেন মেলবোর্নের রেড লেভার অ্যারেনার কোর্টে দর্শকদের সামনে সার্ভ করতে।
সাহস দেন তাঁর চিকিৎসক, খাদ্যাভ্যাস বদলে দেন তাঁর নিউট্রিশনিস্ট, জিমের ধরন বদলে দেন তাঁর ইনস্ট্রাক্টর। এভাবে প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তে একেকটি যুদ্ধ জয় করে অবশেষে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পা পড়ল স্প্যানিশ কন্যা পাওলার। সেখানেই গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের কোকো গফকে কোয়ার্টার ফাইনালে সরাসরি ৭-৫, ৬-৪ সেটে হারিয়ে দিয়েছেন।
দুই নম্বর র্যাঙ্কিংয়ে থাকা এই মার্কিন টেনিস তারকাকে যে পাওলা এতটা সহজেই নাস্তানাবুদ করে দেবেন, তা দেখে টেনিস বিশ্ব রীতিমতো অবাক। যিনি কিনা এক বছর আগেও র্যাঙ্কিংয়ে একশর মধ্যে ছিলেন না, সেই তিনি কিনা কোকো গফকে এভাবে হারিয়ে দিলেন। হাঁটু গেড়ে বসে মাটিতে মুখ লুকিয়ে কাঁদছিলেন পাওলা। পেছনের সে দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল কি তার?
‘ডাক্তার আমাকে খেলা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। আমি একটা শেষ চেষ্টা করতে চেয়েছিলাম এই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশ নিতে। আমি এ জন্য আমার সেসব কোচিং স্টাফকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা মানসিকভাবে আমাকে ভীষণভাবে শক্তি জুগিয়েছিলেন।’
বছর সাতাশের এই বার্সেলোনার মেয়ের জন্য এটিই ছিল ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো কোনো গ্র্যান্ডস্লামের সেমিফাইনালে ওঠা। যেখানে তাঁকে আগামীকালই মোকাবিলা করতে হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সাবালেঙ্কাকে। পারবেন কি স্বপ্নের আরেকটু কাছে যেতে?
‘আমার এই সংগ্রাম তখনই শেষ হবে, যতক্ষণ না আমি এই টুর্নামেন্ট না জিতি।’ ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে পাওলার এই কথাগুলো ভীষণভাবে ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবাইকে। ২০২৩ সালে খেলতে গিয়ে গুরুতর ইনজুরিতে পড়েন তিনি। বড় বড় সার্ভ করা, গ্রাউন্ডস্ট্রোকসের পাশাপাশি বেসলাইনে ভীষণ আক্রমণাত্মক পাওলা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘কলঙ্কমুক্ত হলো কী না’ প্রশ্নে যা বললেন আবাহনী কোচ
এমন একটা অবস্থা ছিল, ঢাকা লিগ শুরুর আগেই আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরা হতো। দল চালানো থেকে বাইশ গজে নানা সুযোগ-সুবিধা পেতো ক্রিকেটাঙ্গনে এমন আলোচনা ছিল ওপেন সিক্রেট।
এবার দেশের পট পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় ক্রীড়াঙ্গনের দৃশ্যও। ঢাকা লিগে এবার আর্থিক কারণে দল গড়তে হিমশিম খেয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল ক্লাবটি। এক ক্রিকেটার স্বাক্ষর করেও টাকা কম দেখে চলে যান অন্য দলে।
সব মিলিয়ে আবাহনীর জন্য মাঠে নামাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। সব ছাপিয়ে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, দাপুটে ক্রিকেটে বিগ বাজেটের দলগুলোকে হারিয়ে শেষপর্যন্ত চব্বিশতম ট্রফি ঘরে তোলে ক্লাবটি।
আরো পড়ুন:
টিম গড়া থেকে সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ ছিল, এ বছরের ট্রফি স্পেশাল: মোসাদ্দেক
দর্শককে মারতে গেলেন মাহমুদউল্লাহ
আবাহনীর কোচিংয়েও এসেছিল বদল। নির্বাচক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে কোচিং বেছে নেন হান্নান সরকার। আবাহনীর হয়ে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল এই কোচ।
ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন হান্নান, “আমার কাছে মনে হয় ঢাকা ক্রিকেট লিগে আবাহনী বা মোহামেডানের জার্সি পড়লে বাড়তি মোটিভেশন চলে আসে।’’
আবাহনী কি এবার কলঙ্কমুক্ত হয়েছে? উত্তরে হান্নান বলেন, “এর আগে আবাহনীর চ্যাম্পিয়নশিপকে অনেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে আলোচনায় এনেছে। এবার দেশের প্রেক্ষাপট বদলানোর পর সব দলকে নিউট্রাল জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারেন। অনেক দিক থেকে বিতর্ক হয়েছে, আম্পায়ারিং নিয়ে কথা হয়েছে। তবে দিন শেষে সবাই যার যার জায়গায় ফেয়ার থাকার চেষ্টা করেছে।”
“ঠিক একইভাবে মাঠের ক্রিকেটে সবাই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মাঠের ক্রিকেটে যদি ভালো খেলে যদি চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় তাতে আলাদা তৃপ্তি কাজ করে। আমার মনে হয় এবার আবাহনীর সেভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার অনেকে মন থেকেই আবাহনীর জন্য দোয়া করেছে। এটা নিশ্চয়ই অন্যরকম ফিলিংস, বিতর্ক ছাড়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আলাদা ভালো লাগা থাকে।’’
এবার বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা ছিল না। দলটির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে অবদান রেখেছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন হান্নান।
“আগে আবাহনী অনেক টাকা খরচ করে দল বানাতো চ্যাম্পিয়ন মোটামুটি ধরে নেওয়াই যেতো। সেজন্য মাঠের ক্রিকেটকে আপনি ছোট করে দেখতে পারবেন না। এবার ভারি নাম ছিল না, মাঠের ক্রিকেটে ভিন্ন স্ট্রাটেজি সাজিয়ে জিততে হয়েছে, এটার তৃপ্তি অন্যরকম।’’
ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল