চালকের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে গাড়ি থেকে নায়িকার লাফ
Published: 22nd, January 2025 GMT
রাজধানীতে দিন-দুপুরে অপহরণের মুখে পড়েছিলেন বলে দাবি করেছেন চিত্রনায়িকা নিঝুম রুবিনা। তাঁর ভাষ্য, বিপদ আঁচ করে রাইড শেয়ারিংয়ের গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি।
বনশ্রী থেকে ধানমন্ডি যাওয়ার পথে মঙ্গলবার দুপুরের ঘটনা নিজের ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন নিঝুম। সেখানে ভিডিও বার্তায় ভয়াবহ ঘটনার কথা মনে করে কান্না করেন তিনি।
পোস্টে উবার চালকের ছবি শেয়ার করে বিস্তারিত তুলে ধরেন নিঝুম। তিনি লিখেছেন, ‘স্বামী গ্রামের বাড়ি গেছে। এ কারণে নিজের গাড়ি রেখে বের হতে হই। আমি ড্রাইভিং পারি না। উবার কল করি বনশ্রী থেকে ধানমন্ডি যেতে। উবার চালক হাতিরঝিলে উঠে সরাসরি ধানমন্ডির রোডে না ঢুকে গুলশানের দিকে প্রবেশ করেন।’ জানতে চাইলে বলেন, ‘আপনার লোকেশনেই যাচ্ছি চুপ থাকেন’। মঙ্গলবার রাস্তা ফাঁকা, তারপরও তিনি গুলশান রোডে ঢুকেন।
পরের ঘটনা উল্লেখ করে নায়িকা লেখেন, ‘গাড়ির গতি প্রায় ৮০ থেকে ১০০। হাই স্পিডে চালাচ্ছিলেন। বিষয়টি আমার কাছে সন্দেহ লাগে। তাকে বলি, আমাকে এখানেই নামিয়ে দেন।’ তখন তিনি আমাকে বললেন, “চুপ থাক, কোনো কথা বলবি না।’ তারপর আমি গাড়ির গ্লাস তুলে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করি। কারও সাড়া পাইনি। এক পর্যায়ে গাড়ির গতি একটু কম মনে হলে লাফ দিয়ে নেমে যাই।”
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি লেখেন, ‘আমরা কোন দেশে বাস করছি? দিন-দুপুরেও কি নিরাপত্তা পাব না? উবার থেকে এমন হলে কাকে ভরসা করব? আজ গাড়ি থেকে জাম্প দিয়ে যদি না নামতাম, তাহলে আমাকে কি খুঁজে পাওয়া যেত?’ পরে এ ঘটনায় ঢাকার হাতিরঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানান নিঝুম।
নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এর বেশি ভালোবাসা যায় না’ সিনেমার মাধ্যমে ২০১৩ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক নিঝুম রুবিনার। এর পর তিনি ‘অনেক সাধনার পরে’, ‘মেঘকন্যা’, ‘বেসামাল’, সর্বশেষ ‘লিপিস্টিক’ ছবিতে অভিনয় করেছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট
এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:
হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।
মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।
প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।
কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?
Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?
হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।
বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?
জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।
তাহলে বাবা-মা কী করবেন?
শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।
একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।
তারা//