Samakal:
2025-11-03@20:52:51 GMT

শিক্ষায় জাতীয় দুর্যোগ চলছে

Published: 23rd, January 2025 GMT

শিক্ষায় জাতীয় দুর্যোগ চলছে

শিক্ষা বিষয়ক এক নাগরিক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, শিক্ষায় এখন জাতীয় দুর্যোগ চলছে। দিন দিন শিক্ষায় বৈষম্য বাড়ছে। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা সংকুচিত হচ্ছে, বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা। দেখা যাচ্ছে, একটা গ্রামে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, সেখানে আছে পাঁচটা মাদ্রাসা। আবার আর্থিক ও পারিবারিক নানা সংকটে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে মাদ্রাসায়। আরও বড় সমস্যা হলো, সরকার জানে না দেশে কী পরিমাণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আছে, মাদ্রাসার সংখ্যা কত। এ অবস্থায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি অসম্ভব।

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সকালে ‌‌‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে ‘জাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আন্দোলন’। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদ সেলিম। সদস্য সচিব রুস্তম আলী খোকনের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও লেখক গবেষক অধ্যাপক ড.

নজরুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ,  ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম হেড সমীর রঞ্জন নাথ, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র পাঠ করেন ড. তারিকুজ্জামান সুদান।

সংলাপে বক্তারা বলেন, শিক্ষা হলো বাঁচতে শেখা, বাঁচাতে শেখা। জাতিকে একত্র করতে পারে শিক্ষা, সংস্কৃতি। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার বহুধা বিভক্তির দিকে আলোকপাত করে বক্তারা বলেন, একমুখী শিক্ষা কাঠামো নির্মাণ না করে একটি বিভাজিত জাতি আমরা গড়ে তুলেছি। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া হতে পিছিয়ে পড়বে।

বারবার পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, ইতিহাস কখনও মুজিবময়, কখনও মুজিবশূন্য, কখনও জিয়াময়, কখনও জিয়াশূন্য হতে পারে না। ইতিহাস ইতিহাসই, সেটা বিকৃতি করার আজকের চেষ্টা আগামী দিনের ইতিহাস। সুতরাং এ সকল প্রবণতা হতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সরে আসতে হবে। তারা বলেন, শিক্ষায় প্রতিবেশী দেশেও জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় হয়, আমাদের এখানে ২ শতাংশের কম। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতির জন্য আগে মানসিক বিপ্লব দরকার। পরিবর্তন মনো ও সমাজ জীবনে জরুরি।

পরিস্থিতি বদলাতে জাতীয় আন্দোলন প্রয়োজন বলে মনে করেন বক্তারা। জাতীয় শিক্ষা সংস্কৃতি আন্দোলনের মতো নির্দলীয় দেশপ্রেমিক সংগঠনগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, মুখে নয় কাজের আন্দোলন চাই।

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষায় বৈষম্য খুব বেশি। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা এখন মনোপলি হয়ে গেছে ধনিক শ্রেণির। সমাজে আর্থিক বিভাজনের তীব্র প্রভাব পড়ছে শিক্ষাতেও। বিদেশি পরামর্শকেরা আমাদের শিক্ষাখাতের নীতিনির্ধারক বনে যাচ্ছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের হাতে আগে আসতে হবে। এটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। 

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিমাণগত কিছু পরিবর্তন বিগত দিনে ঘটেছে। তবে গুণগত পরিবর্তন ঘটেনি। বিজ্ঞানমনস্ক বৈশ্বিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা চাই। অথচ আমাদের এখন মানবিক শিক্ষার ভুরিভুরি গ্র্যাজুয়েট পাস করে বের হচ্ছে। তারা বেকার হচ্ছে, হতাশ হয়ে পড়ছে। নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তাদের কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই শিক্ষা হতে হবে সার্বজনীন। আর এসবের পূর্বশর্ত শিক্ষার বাজেট বর্তমানের দ্বিগুণ হতে হবে।

সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, শিক্ষায় এখন দুর্যোগ চলছে, বলা যায় জাতীয় দুর্যোগ। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা সংকুচিত হচ্ছে, বাড়ছে ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসা। একটা গ্রামে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, সেখানে আছে পাঁচটা মাদ্রাসা। আবার আর্থিক ও পারিবারিক নানা সংকটে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে মাদ্রাসায়। আরও বড় সমস্যা হলো, সরকার জানে না দেশে কী পরিমাণ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আছে, মাদ্রাসার সংখ্যা কত। আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নয়, এখনও তৃতীয় শিল্প বিপ্লবই ধরতে পারিনি।  পরিস্থিতি বদলাতে জাতীয় আন্দোলন প্রয়োজন। তবে মুখে নয় কাজের আন্দোলন চাই।

সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, শিক্ষার মূল অর্থ হলো- বাঁচতে শেখা ও বাঁচাতে শেখা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি তা পারছে? শিক্ষার বৈষম্য সমাজের বৈষম্য বাড়াচ্ছে নাকি সমাজের বৈষম্য শিক্ষার বৈষম্য বাড়াচ্ছে- এটি এখন গবেষণার বিষয়। তিনি বলেন, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতার ইতিহাস বদলে যায় যে দেশে সেখানে প্রকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন ব্যাপার। গত ৫৩ বছরে যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেননি।

সংলাগে আরও বক্তব্য রাখেন পরিজা সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, বাকশিস যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সহসভাপতি আব্দুর রশিদ, গ্রীণ ভয়েস এর সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন, বাংলাদেশ রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং মালিক শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন চন্দ্র দাস, টিটিসির শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আহমেদ, ক্লাইমেস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ সিএনবি কোর্ডিনেটর মুনসাফা তৃপ্তিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র শ ক ষ ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত