জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ গতকাল রোববার শুনানি শেষে এ পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ২৩ মার্চ মামলাটির পরবর্তী দিন ধার্য রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে যখনই হারুনকে গ্রেপ্তার করা হবে, তাৎক্ষণিক তাঁকে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি, গণহত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন হারুন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল ‘হারুন কোথায়’ জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে তদন্ত সংস্থা।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে, তার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পেয়েছে। র‍্যাবের যিনি মহাপরিচালক ছিলেন হারুন অর রশিদ, তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ছিলেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার যে নির্দেশ বা পরিকল্পনা ছিল, তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন।  

তাজুল ইসলাম আরও বলেন, হারুনের বিরুদ্ধে ‘কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি’র অভিযোগ আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার ব্যবহারের যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তাঁর দেওয়া। এ ছাড়া র‍্যাবের মাধ্যমে যেসব অপরাধ হয়েছিল, তা সবই তাঁর নির্দেশনায় করা। 

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের কম আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, শুরুর দিকে দুর্বলতা থাকলেও এখন গ্রেপ্তারে তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে সাভারের আশুলিয়ায় ৬ জনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় গতকাল দুই পুলিশ সদস্য এস আই আবদুল মালেক ও কনস্টেবল মুকুলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের এক দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

সাবেক এমপি নদভী ছয় দিনের রিমান্ডে 

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে তিন মামলায় ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনে সংঘটিত আরেকটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এদিন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় নদভীকে আদালতে আনা হয়।

মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া জানান, চান্দগাঁও থানায় করা তিন মামলায় নদভীকে দুই দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। আদালত সেটা মঞ্জুর করেছেন।

গত ২২ জানুয়ারি পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক দুই মামলায় নদভীর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী খালিদ হাসান হত্যা মামলায় তাঁকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। তখন থেকে তিনি কারাগারে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট তদন ত স স থ ল ইসল ম কর ছ ন অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে

সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।

শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।

পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।

শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল