নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি বাড়ির তালাবদ্ধ ঘর থেকে পচা বিকৃত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের শীষমহল আমতলা এলাকার স্বপন সরকারের ভাড়াটিয়া বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

এবিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, ২০ জানুয়ারী স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে স্বপন সরকারের ভাড়াটিয়া বাসায় একটি রুম ভাড়া নেয় তারা। ভাড়া দেয়ার সময় বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের কোন পরিচয়পত্র রাখেনি।

এজন্য নিহতের নাম পরিচয় বাড়িওয়ালা বলতে পারছেনা। ধারনা করা হচ্ছে ৪/৫ দিন পূর্বে ওই ব্যক্তিকে রুমের ভিতরে রেখে স্ত্রী পরিচয় দেয়া নারী বাহির থেকে দরজায় তালা দিয়ে চলে যায়। 

ওই বাড়িতে আরো যারা ভাড়াটিয়া রয়েছে তারাও বিষয়টি খেয়াল করেনি। সকালে ওই রুম থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হলে থানায় খবর দেয়। এরপর পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙ্গে দেখেন খাটের উপর সোজা অবস্থায় পচা বিকৃত পুরুষের লাশ পড়ে আছে।

বিকৃত হওয়ায় নিহতের বয়স ধারনা করা যাচ্ছেনা। লাশের পাশেই ইয়াবা নামের মাদক সেবনের সরঞ্জাম পড়ে থাকতে দেখাগেছে। 

ওসি আরো জানান, ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে নাকি অতিরিক্ত মাদক সেবনে মারা গেছে তা ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। লাশ উদ্ধার করে শহরের ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।

বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে স্থানীয়রা জানান, স্বপন সরকারের মত অনেক বাড়িওয়ালাই এ ভুল করে থাকেন। এজন্য এক বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলে অন্য বাড়িওয়ালারাও বাসা ভাড়া দেয়ার সময় ভাড়াটিয়াদের পরিচয়পত্রসহ সনাক্ত করার সকল তথ্য সংগ্রহ করে ভাড়া দিবেন। 

নয়তো এভাবেই পরিচয়হীন ব্যক্তি বা অপরাধীরা বাসা ভাড়া নিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাবে। এতে যেমন এলাকাবাসী আতংকিত হবেন তেমন প্রশাসনকেও পরিচয় সনাক্তার জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে হয়।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে

তাঁর নামে পুলিশের খাতায় কোনো মামলা নেই। পুলিশও তাঁকে ধরেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার আসামি সেজে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর সাত দিন ধরে কারাগারে আছেন মো. রাকিব নামের এক যুবক। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে জেল খাটতে আসেন রাকিব।

এ যেন জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’-এর কাহিনি। এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র শরাফত করিম আয়না (চঞ্চল চৌধুরী) জাহাজে বাবুর্চির কাজ করেন। মাঝেমধ্যে দুই-তিন মাসের জন্য হাওয়া হয়ে যান তিনি। কোথায় যান? আসলে এ সময় তিনি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের হয়ে টাকার বিনিময়ে জেল খাটেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র‌্যাব। যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় একাধিকবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩

আদালতে একের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’

১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার

কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ।

আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো আসামির ওকালতনামা না দিতে বলা আছে। কেউ যাতে প্রতারণার সুযোগ না পান, আইনজীবীদের সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীদের সেরা সঞ্চয়; পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কত, কীভাবে কিনবেন
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে