২০২৪ সালে সারা দেশে ২৬ হাজার ৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ৭৩টি। এসব অগ্নিকাণ্ডে ১৪০ জন নিহত এবং ৩৪১ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা, চুলা এবং গ্যাস-সংক্রান্ত কারণে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। ২৬ হাজার ৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ডে ৪৪৬ কোটি ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৭ টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে এবং ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনির্বাপণের মাধ্যেমে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৫ টাকার সম্পদ রক্ষা করেছে।
আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ জন কর্মী আহত এবং ২ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। অগ্নিনির্বাপণকালে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ফায়ার সার্ভিসের ৩৪টি গাড়ি ভাঙচুর ও ৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
গত বছর বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ৯ হাজার ৬৯টি (৩৩.
২০২৪ সালে বসতবাড়ি/আবাসিক ভবনে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সারা দেশে বসতবাড়িতে মোট ৭ হাজার ১৩১টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা মোট অগ্নিকাণ্ডের ২৬.৭৪ শতাংশ। এছাড়া, খড়ের গাদায় ৪ হাজার ৫১৩টি (১৬.৯২ শতাংশ), রান্নাঘরে ২ হাজার ৪১১টি (৯.০৪ শতাংশ), দোকানে ১ হাজার ৮৮৭টি, হাট-বাজারে ৯১১টি, শপিং মলে ৪৮১টি, পোশাক কারখানায় ২৩৬টি, অন্যান্য কলকারখানায় ৪৯৪টি, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে ২১১টি, বহুতল ভবনে (৬ তলার বেশি) ১৫৩টি, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে ১৫০টি, কেপিআই ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১২৯টি, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১২৬টি, পাট গুদাম-পাটকলে ১২৩টি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ৮৫টি, বস্তিতে ৮৪টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৮টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। একই সময় সারা দেশে বাসে ১১৪টি, ট্রেনে ১৩টি, লঞ্চে ৩টি এবং অন্যান্য যানবাহনে ২৬৮টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিসের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। সারা দেশে ৩৪১ জন আহতের মধ্যে পুরুষ ২৩৭ জন ও নারী ১০৪ জন। নিহত ১৪০ জনের মধ্যে ১০৭ জন পুরুষ ও ৩৩ জন নারী।
হতাহতের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বসতবাড়ি/আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৭২ জন আহত ও ৩৬ জন নিহত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫৩ জন আহত ও ৮ জন নিহত এবং রেস্তোরাঁ ও হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে ৭৮ জন আহত ও ৪৭ জন নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা ১৫৬ জন আহত ও ৭৫০ জন নিহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছেন। ৩০৩টি গবাদি পশু, ৫০টি পাখি এবং ২২৭টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
ঢাকা/এমআর/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।