রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে বন্ধ আছে ট্রেন চলাচল। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে ট্রেনের টিকিট ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে শুরু হয়েছে বিআরটিসি বাসের সার্ভিস। 

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে এই সার্ভিস ব্যবহার করে কুমিল্লা রেলস্টেশন থেকে বাসে সিলেটে রওনা হয়েছেন যাত্রীরা। বিকেল ৩টায় যাত্রী নিয়ে ঢাকায় গেছে অপর একটি বাস বলে জানান বিআরটিসির কর্মকর্তারা।

বিআরটিসি কুমিল্লার ম্যানেজার (অপারেশন) মো.

মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, “যারা অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কেটে ফেলেছেন তারা বিনামূল্যে বাসে যেতে পারবেন। এর মধ্যে কুমিল্লা থেকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটে ১৫ যাত্রী বাসে সিলেটে রওনা হয়েছেন।”

আরো পড়ুন:

ঈশ্বরদী জংশনের নিরাপত্তা জোরদার

স্টেশন থেকে হতাশ হয়ে ফিরলেন রংপুরের যাত্রীরা

ট্রেনের টিকেট কেটে বাসে রওনা হওয়া যাত্রী রেহানা আফসার বলেন, “ট্রেনের টিকেটে বাসে সিলেট যাচ্ছি। সকাল ১০টায় রওনা হওয়ার কথা ছিল। এখন দুই ঘণ্টা দেরিতে যেতে হচ্ছে।”

মনিরুল ইসলাম নামে অপর যাত্রী বলেন, “যারা ট্রেনের টিকেট ফেরত দিতে স্টেশনে আসছেন তারা বিষয়টি জানতে পারছেন। অনেকেই জানেন না এভাবে যাওয়া যায়। যাই হোক, দ্রুত ট্রেন না চললে দুর্ভোগ বাড়বে।”

বাস না পাওয়া আরেক যাত্রী সাইদুর মোল্লা বলেন, “আমি জানতাম না ট্রেনের টিকেট দিয়ে বাসে যাওয়া যায়। দুইবার টাকা খরচ করে সিলেট যেতে হচ্ছে।”

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। এতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “এ অবস্থায় রেলের বিকল্প হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা তাদের রেলের টিকেট ব্যবহার করে বিআরটিসি বাসে ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া ওইসব স্থান থেকে ঢাকায় আসতে পারবেন।”

কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শেখ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “যারা স্টেশনের টিকেট রিফান্ড করতে আসছেন তারাই বিষয়টি জানতে পারছেন। যাদের কাছে টিকেট আছে তারা চাইলে বিআরটিসির বাসের সেবাটি ব্যবহার করে গন্তব্যে যেতে পারবেন।”

বিআরটিসি ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, “পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ সুবিধা চালু থাকবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যেখানে চাইবেন আমরা বাস দিতে পারব। কোনো অসুবিধা নেই।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব আরট স র লওয়

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ