গুলেইন-বারি সিনড্রোম (জিবিএস) একটি ইমিউন প্রক্রিয়াজাত রোগ, যেখানে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আমাদের গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টিনাল ট্রাক্ট বা খাদ্যনালিতে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ হয়। সাধারণত ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার এক থেকে চার সপ্তাহ পর লক্ষণ প্রকাশ পায়। কখনও সার্জারি বা ভ্যাকসিনেশন থেকেও এ লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যে কোনো লিঙ্গ বা বয়সেই হতে পারে। তবে নারীর তুলনায় পুরুষের এই সমস্যা একটু বেশি হয়ে থাকে।
লক্ষণ
-সমান্তরালভাবে হাত-পায়ের মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা যায়।
-পায়ের পাতা থেকে ওপরের দিকে হাতের বা মুখমণ্ডলের দিকে শক্তি কমে যায়। পেশিগুলো অবশ হতে থাকে।
-কথা বলা বা চিবানোর সমস্যা হওয়া।
-লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর দ্রুত বাড়তে থাকে।
-পায়ে ব্যথা, প্রস্রাব-পায়খানা নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
-ব্যথা, বিশেষ করে রাতে গুরুতর হতে পারে।
-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা।
-শ্বাস-প্রশ্বাসের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া।
কারণ
-ক্যামপাইলোব্যাক্টার জেজুনি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে।
-সাইটোমেগালো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে।
-এপসটিনবার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে।
-সার্জারি, ইমিউনাইজেশন, অর্থাৎ ভ্যাকসিন থেকেও হতে পারে।
ডায়াগনসিস
রোগীর হিস্ট্রি ও রোগের লক্ষণ থেকেই অনেকটা রোগ নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া রক্তের পরীক্ষা, সিএসএফ স্টাডি, স্টুল কালচার এবং সেরোলজিক্যাল টেস্ট, এনসিভি, ইএমজি ইত্যাদি করা হয়। অন্য রোগ কিনা, তা আলাদা করতে আরও পরীক্ষার দরকার হতে পারে।
চিকিৎসা
এ রকম লক্ষণ বা সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখাবেন।
ফিজিওথেরাপি
যথাযথ চিকিৎসার পাশাপাশি দরকার প্রথম দিন থেকেই একজন ফিজিওথেরাপিস্ট থেকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেওয়া। এর মধ্যে রয়েছে যথাযথ পজিশনিং, কফ জমলে বিভিন্ন টেকনিক অবলম্বন করে সেগুলো বের করা, ব্রেথিং এক্সারসাইজ করা, স্পাইরোমেট্রি ব্যবহার করা, জয়েন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, প্রতিরোধ করা, মাংসপেশির শক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শক্তি বাড়ানোর জন্য এক্সারসাইজ করা, ব্যালান্স কো-অর্ডিনেশন ট্রেইনিং দেওয়া ইত্যাদি। প্রথম থেকেই নিয়মিত ফিজিওথেরাপি পেলে অধিকাংশ আক্রান্ত রোগীই তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাপন ফিরে পেতে পারবেন এবং রেসপিরেটরি মাংসপেশি প্যারালাইজ হয়ে মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস পাবে।
লেখক : ফিজিওথেরাপিস্ট, আশা সমন্বিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মহিপুর, পটুয়াখালী
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮৯তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে সার্বিকভাবে আসন সংখ্যা কমানোসহ অর্গানোগ্রামে আরো ১৮টি নতুন বিভাগের অন্তর্ভুক্তি, চারটি ইনস্টিটিউট চালু এবং ১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ল্যাবভিত্তিক বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা ৪০টি এবং ল্যাববিহীন বিভাগগুলোতে ৫০টি আসন রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন ১৮টি বিভাগ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিজ্ঞান বিভাগ এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো—সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জনসংখ্যা বিজ্ঞান বিভাগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ। কলা ও মানবিক অনুষদভুক্ত গুলো হলো—ইসলামিক স্টাডিজ ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ এবং দর্শন বিভাগ। ব্যবসায় অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ব্যবসায়িক তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগ এবং লজিস্টিক ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো হলো— বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগ। আইন অনুষদভুক্ত বিভাগটি হলো— অপরাধবিদ্যা বিভাগ।
পাশাপাশি চারটি ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্র। এগুলোর গঠন কাঠামোও সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, নিয়মিত অধ্যাপক দুইজন, তিনজন সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার বা ম্যানেজার একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং একজন ক্লিনার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত গবেষণা কেন্দ্র এবং একাডেমিক মান বৃদ্ধি কেন্দ্রের জন্য পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক, একজন অতিথি অধ্যাপক, অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে একজন অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক, সেকশন অফিসার অথবা ম্যানেজার হিসেবে একজন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট একজন, অফিস সহায়ক দুইজন এবং ক্লিনার একজন।
১২টি বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগে ন্যূনতম ২৬ জন করে শিক্ষক রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, “আমরা মিটিংয়ে এগুলো সুপারিশ করেছি। অর্গানোগ্রাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ডিপার্টমেন্টের জন্য ছাড়পত্র চায়, তারপর কমিশন (ইউজিসি) যদি অনুমোদন দেয়, তখন সেটা অর্গানাগ্রামে যুক্ত হয়। অর্গানোগ্রামে থাকলেই যে বিভাগ হয়ে যাবে, এমন না। একটা অনুমোদন দিয়ে রাখে। এই অনুমোদনের আলোকে আবার যখন দরখাস্ত দেওয়া হয়, তখন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি আরো বলেন, “ইউজিসি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে আসন সংখ্যা কমাতে, যাতে কোয়ালিটি এডুকেশনের নিশ্চিত হয়। তারা ল্যাববেজড বিভাগের জন্য ৪০টি আসন এবং ল্যাববিহীন বিভাগের জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেছেন, “অনেকগুলো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনই না দেখে বলা যাচ্ছে না। রেজ্যুলেশন পাস হলে বিস্তারিত বলতে পারব।”
ঢাকা/এমদাদুল/রফিক