Samakal:
2025-07-31@06:42:33 GMT

সচিবরাও গাড়িবিলাসী

Published: 4th, February 2025 GMT

সচিবরাও গাড়িবিলাসী

সরকারি গাড়ি ব্যবহারে আমলারাও কম যাচ্ছেন না। মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টার গাড়ি ব্যবহারের নিয়ম-নীতি থাকলেও সচিবের বেলায় আইনই নেই। এ সুযোগে একজন সচিব তিন থেকে চারটি গাড়ি হাতে রাখছেন। ২০১৪ সালে সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ সুবিধা চালুর পর সচিবদের সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের (পরিবহন পুল) গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবু সচিবরা সুদমুক্ত টাকায় কেনা গাড়ি বাসায় রেখে সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি হাঁকাচ্ছে। এ কারণে প্রত্যেক সচিবের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি জিপও কেনা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্প ও দপ্তর থেকে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন সচিবরা। এসব গাড়ি তাদের পরিবারের সদস্য, সচিবদের পিএস ব্যবহার করছেন। এমনকি কয়েকজন সচিবের ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক গাড়ি সঙ্গে রাখছেন। ফলে ঋণের টাকায় আমলারা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার পরও সরকারের যাতায়াত খাতে খরচ দাঁড়িয়েছে কয়েক গুণ।

জানা যায়, সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ চালু হওয়ার আগে সচিবরা পরিবহন পুলের একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। তবে খরচ সাশ্রয়ের যুক্তি দেখিয়ে যুগ্ম সচিব থেকে ওপরের পদের কর্মকর্তাদের প্রাধিকারপ্রাপ্ত হিসেবে গাড়ি ঋণ সুবিধা চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর সচিবের ক্ষেত্রে পুলের গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বৈঠকে মৌখিক নির্দেশনা দেন– ঢাকার বাইরে নির্ধারিত কোনো দাপ্তরিক সফর বা প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি তারা ব্যবহার করতে পারবেন। 
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গাড়ি ব্যবহারের অনিয়ম রোধে সংশ্লিষ্ট আমলাদের কাছে বহুবার চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে। তবু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত ২ সেপ্টেম্বর আগের মতো আমলাদের শুধু সতর্ক করা হয়েছে। অথচ নীতিমালার ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী কোনো কর্মকর্তা তাঁর দপ্তর থেকে রিকুইজিশনের কোনো গাড়ি সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে গাড়ি ব্যবহার বিষয়ে সতর্ক করার পরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, উপদেষ্টাদের পিএস, এপিএস ও বড় মন্ত্রণালয়ের পিয়নরাও যথেচ্ছ গাড়ি ব্যবহার করেছেন।

জানা যায়, পরিবহন পুল থেকে সচিবের গাড়ি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রশাসনিক কাজসহ নানা যুক্তি দেখিয়ে গাড়ি কেনা বাড়িয়েছে। ফলে খরচ সাশ্রয়ের যুক্তি দেখিয়ে আমলাদের জন্য সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ চালু হলেও তা বিফলে গেছে। ২০১৭ সাল থেকে উপসচিবদেরও এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে গাড়ি কিনতে ২০ লাখ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ, তেল ও চালকের বেতন বাবদ মাসে ৩০ হাজার টাকা পেতেন কর্মকর্তারা। ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে গাড়ি কিনতে ৩০ লাখ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ, তেল ও চালকের বেতন বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে সরকার। জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা আরও ২৫০ লিটার পেট্রোল বা অকটেন পাচ্ছেন। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছেন ৪ হাজার ২০০ কর্মকর্তা। এর মধ্যে অধিকাংশ কর্মকর্তা অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরে সরকারের বাড়তি খরচ হচ্ছে ২৫২ কোটি টাকা।
সুদমুক্ত ঋণ চালু হওয়ার পরও অর্থ বিভাগ জিপ কিনেছে দুটি, কার ছয়টি, মাইক্রোবাস ১৩টি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জিপ কিনেছে চারটি, কার ১৩টি, মাইক্রোবাস ৭টি, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় জিপ দুটি, মাইক্রোবাস তিনটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় জিপ কিনেছে একটি, মাইক্রোবাস চারটি। একইভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রশাসনিক কাজের চাহিদা দেখিয়ে বাড়তি গাড়ি কিনে জিপ ব্যবহার করছেন সচিবরা। কার ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করছেন সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি কেনা কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তর ও প্রকল্পের গাড়িতে চড়ছেন উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবরা। অনেক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর অভিযোগও রয়েছে।

সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, সুদমুক্ত ঋণের মাধ্যমে গাড়ি সুবিধা ছিল এক প্রকার ঘুষ। এ জন্য আমি এই ঋণ নিইনি। তিনি বলেন, ঋণ নিয়ে তারা গাড়ি কিনলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা বেআইনিভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে অনাচার বেড়েছে, খরচ বেড়েছে। রাষ্ট্রের ওপর তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক চাপ, তবে রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। সুশাসন পরিপন্থি কাজ হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেটা আদৌ সাধন হয়নি।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিনের এই অনিয়ম-দুর্নীতি সহজে বন্ধ করা যাবে না। এগুলো বন্ধ করতে একটু সময় দিতে হবে। তবে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের নির্দিষ্ট তথ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোন সচিবের কয়টা গাড়ি 
গাড়ি কেনার অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অর্থ বিভাগের সচিব। অথচ অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারের পরিবারের সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪২৭৯৬) সার্বক্ষণিক ব্যবহার করছেন। তিনি ব্যবহার করছেন সোনালী ব্যাংকের বড় জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৯৬২১), সঙ্গে চালকও। আর ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করছেন। তাঁর পিএস চড়েন মন্ত্রণালয়ের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো গ-৩৪৬৫৮০)। পরিবহন পুল থেকে নিয়েছেন চালক।

খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান সার্বক্ষণিক ব্যবহার করছেন মন্ত্রণালয়ের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৬৩৪৭)। তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন খাদ্য অধিদপ্তরের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১২২১০৭)। তাঁর পিএস হাঁকান অধিদপ্তরের বাহন (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪১৮৬২)। এসব গাড়ির জ্বালানি খরচ দেয় খাদ্য অধিদপ্তর। গাড়ির চালক খাদ্য অধিদপ্তরের জিল্লুর, দ্বীন ইসলাম ও কামাল। খাদ্য অধিদপ্তরের এমন ৯ চালক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। চালক কামাল বলেন, ‘আমি সচিব স্যারের বাসায় গাড়ি চালাই। দ্বীন ইসলাম পিএসের এবং জিল্লুর সচিবের গাড়িচালক।’ 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া জাতিসংঘের একটি প্রকল্পের গাড়ি (অজ-২০১০৫) ব্যবহার করছেন। তাঁর পিএস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৩৬৫৪) চড়ছেন। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, অধিদপ্তরে গাড়ির অনেক সংকট। এর মধ্যেও মন্ত্রণালয়কে গাড়ি সরবরাহ করতে হয়। 
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মুশফিকুর রহমান ব্যবহার করছেন টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৫৬৯০)। তাঁর পিএস চড়েন বিটিসিএলের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৭০০০৮)। রেলপথ সচিব ফাহিমুল ইসলাম ব্যবহার করছেন প্রকল্পের বড় জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৫৪৩১)। রেলপথ সচিব দপ্তরের ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়িতে চড়ছেন।

পিছিয়ে নেই অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবরা 
অনিয়মের মাধ্যমে গাড়ি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবরা। যেসব দপ্তর, সংস্থা দেখভালের দায়িত্বে আছেন, সেসব দপ্তর থেকে নিয়েছেন বড় জিপ। এর মধ্যে এগিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়; সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 
এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা ব্যবহার করছেন ইজিসিবির গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৬২৭৫), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এসএম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১৩৯৬৫), অতিরিক্ত সচিব ড.

নূরুন্নাহার চৌধুরী বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানির গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৭২৯৮) ব্যবহার করছেন।
পরিবহন পুলের গাড়ি ও চালক অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) ওবায়দুর রহমান (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৩২০২)। এ ছাড়া পরিবহন পুলের ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৯৮৫৭৯, ঢাকা মেট্রো গ-৩৩৪৪০০, ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৩৪৪০১, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫১৩৮৭, ঢাকা মেট্রো গ-৩৯৮৫৭৭ গাড়িও চলছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা বলেন, ‘জিপটি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করি। যখন প্রয়োজন হয় বা বাইরে ট্যুর থাকে, শুধু তখন।’

বরাদ্দের ৭ গুণ দামে পুলের গাড়ি
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর ব্যবহার করছেন ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দামের বিলাসবহুল জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৪৪০৪) ল্যান্ড ক্রুজার ভিএক্স-ভিএইট। ইঞ্জিনের ধারণক্ষমতা (সিসি) ৪ হাজার ৫০০। ২০১৮ সালে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সময়ে বরাদ্দের ৭ গুণ দামে এই গাড়ি কেনা হয়। একই ব্র্যান্ডের পরিবহন পুলের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৬৫২৩) ব্যবহার করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান। পরিবহন পুল থেকে ২০২১ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সচিব কেএম আলী আজম এই গাড়ি নেন। এর পর যিনিই মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিব হচ্ছেন, তিনি এই দুই গাড়ির বরাদ্দ ছাড়ছেন না। অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরুজ্জমান মজুমদার বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে ওই দুটি গাড়ি কেনা হয়েছিল। 
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর সমকালকে বলেন, সচিবদের গাড়ি ব্যবহার বিষয়ে আইন আছে কিনা, জানি না। তবে সচিবরা পুলের গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। এখন শুধু জনপ্রশাসন সচিব ব্যবহার করছেন। অন্য সচিবরা নিজেদের মন্ত্রণালয়ের একাধিক গাড়ি হয়তো ব্যবহার করছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমি আর মন্তব্য করব না। 

বাড়ছে চালকের বেতন ও জ্বালানি খরচ 
সচিব-পিএসদের অফিস সময়ের আগে ও পরে ওভারটাইমের জন্য চালককে দিতে হচ্ছে বাড়তি বেতন। একই সঙ্গে জ্বালানি খরচও গুনতে হচ্ছে। জানুয়ারিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পিএস জয়নাল আবেদীনের গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-৩৪৬২৮৭) চালককে দেওয়া হয়েছে ২৫৩ ঘণ্টার অতিরিক্ত বেতন। জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। শুধু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র সদস য ব যবহ র করছ ন ব যবহ র করত প রকল প র ব যবহ র র ন মন ত র সরক র র ব যবস থ উপদ ষ ট উপসচ ব র প এস র জন য র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

‘কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজের’ শিরোনামে ২৭ জুলাই প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ‘৫-জি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শিরোনামের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদনটির প্রতিবাদ পাঠানো হয় ২৮ জুলাই।

প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, প্রকল্পটি নিয়ে করা প্রতিবেদনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবকে জড়িয়ে যে ‘অভিযোগ ও ব্যাখ্যাহীন অনুমানমূলক’ মন্তব্য করা হয়েছে, তা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর, একপক্ষীয় এবং ভিত্তিহীন। এতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করে ফয়েজ আহমদের মানহানি করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা সাংবাদিকতার নৈতিকতা বিরুদ্ধ।

টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রতিবাদপত্রে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছে। নিচে সেই সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রতিবেদকের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

আরও পড়ুনদুর্নীতির অভিযোগে কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজ আহমদের২৭ জুলাই ২০২৫

এক. প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ফয়েজ আহমদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানাধীন একটি প্রকল্পের কার্যক্রম ‘এগিয়ে নিতে’ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেছেন। বাস্তবতা হলো, বিটিসিএলের ৫–জি রেডিনেস প্রকল্পে ২৯০ কোটি টাকার ঋণপত্র (এলসি) পূর্ববর্তী সরকারের আমলে চূড়ান্ত হয়েছে। সেই টাকা ফেরত পাওয়ার আর কোনো বাস্তবসম্মত পথ নেই। এবং এসব যন্ত্রপাতি গ্রহণ না করলে সম্পূর্ণ অর্থই রাষ্ট্রের অপচয়ে পরিণত হবে।

টেলিযোগাযোগ বিভাগ আরও বলেছে, ফয়েজ আহমদ শুধু অর্থনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে, আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকে দুদকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেছেন, যেখানে দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিও তিনি তুলে ধরেছেন। এটি দুর্নীতির ‘সহযোগিতা’ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় দায়িত্বশীল পদক্ষেপ।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে বিটিসিএল একটি বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দুদকের অনুসন্ধানাধীন প্রকল্পের বাকি কাজ এগিয়ে দিতে আইনগত মতামত নেয় (২৭ মার্চ, ২০২৫)। যদিও এ ধরনের আইনগত মতামত দেওয়ার জন্য বিটিসিএলের নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল রয়েছে। বেসরকারি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রথমে ইতিবাচক মতামত দিলেও পরে (৮ এপ্রিল, ২০২৫) দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরে সতর্ক করে দেয় যে তদন্তাধীন প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

দুদক চিঠি দিয়ে বিটিসিএলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় (১৮ জুন, ২০২৫) যে তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ক্রয় আইনের লঙ্ঘন পাওয়া গেছে। তাই কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নিলে আইনের ব্যত্যয় হবে এবং অর্থ ব্যয় আইনসিদ্ধ হবে না। দুদক তাদের মতামত জানানোর পরও ফয়েজ আহমদ আবার (২২ জুন) সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

দুদকের নেতিবাচক মতামতের পরও কেনাকাটার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া টেলিযোগাযোগ বিভাগের (প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা) দাবিকে সমর্থন করে না। ফয়েজ আহমদ দুদককে দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করার অনুরোধ করতে পারতেন। অনুসন্ধান শেষ হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারতেন। বিটিসিএলের ওই প্রকল্পে দুদক গত ৯ জানুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। এই অনুসন্ধান নিশ্চয়ই বছরের পর বছর চলবে না। কেনাকাটায় আর কিছুদিন দেরি হলে রাষ্ট্রের বিপুল ক্ষতি হয়ে যাবে, এ দাবি যৌক্তিক নয়।

‘দুর্নীতি সহায়ক’ বক্তব্যটি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের মতামত, প্রথম আলোর নয়।

দুই. প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে ৫ গুণ সক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিয়ে অর্থ অপচয়ের চেষ্টার অভিযোগ অসত্য। প্রতিবাদপত্রে কারিগরি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের চাহিদা বিবেচনা করা হয়নি। সেসব বিবেচনায় নেওয়া হলে যন্ত্রপাতির সক্ষমতা ২৬ টিবিপিএস (টেরাবাইট পার সেকেন্ড) নয়, ১২৬ টিবিপিএসের প্রয়োজন হবে। ফাইভ-জি প্রকল্পে ১২৬ টেরাবাইট ক্ষমতা ‘রিডান্ডেন্ট’সহ নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে কোনো যন্ত্রপাতি বা সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকার সুযোগ নেই।

প্রতিবাদপত্রে আরও বলা হয়, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ২০২১ সালে প্রণীত বিটিসিএলের ফাইভ-জি প্রকল্পের একটি সমীক্ষায় মতামত দেয় যে শুধু আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ যদি ২৬ টিবিপিএস হয়, তাহলে সব মিলিয়ে ‘সিস্টেমের লাইন ক্যাপাসিটি’ ১২৬ টিবিপিএস প্রয়োজন হবে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: এই প্রকল্প নিয়ে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুই হলো ‘দরপত্রের শর্তানুযায়ী দরদাতাদের মূল্যায়ন না করে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি লঙ্ঘনপূর্বক শুধু প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের ভিত্তিতে তিনজন দরদাতাকেই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ (যোগ্য) ঘোষণা করাসহ নন-রেসপনসিভ দরদাতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সক্ষমতার পাঁচ গুণ বেশি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ।’ প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এ ‘অভিযোগ’ই শুধু তুলে ধরা হয়েছে।

তা ছাড়া ২০৩০ সাল পর্যন্ত যে ২৬ টিবিপিএস চাহিদা নিরূপিত হয়েছিল, কিন্তু কেনা হচ্ছে ১২৬ টেরাবাইট—এটা ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিটিসিএলের ২১৩তম পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীতে রয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে টেলিকম যন্ত্রপাতিও অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। এ কারণে দীর্ঘ সময় যন্ত্রপাতির খুচরা যন্ত্রাংশ সহজলভ্য থাকে না। সাধারণভাবে টেলিকম যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহারযোগ্য আয়ুষ্কাল সাত বছর ধরা হয়। এই দরপত্রের ক্ষেত্রেও কারিগরি নির্দেশে যন্ত্রপাতির আয়ুষ্কাল সাত বছর নির্ধারিত রয়েছে। তিনি সাবধান করেছিলেন যে ২০৪০ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণে বেশি সক্ষমতার যন্ত্রপাতি চাওয়া হলেও বাস্তবে তা সচল থাকার নিশ্চয়তা ২০৩০ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ যে পরিমাণ যন্ত্রপাতি কেনা হবে, তার একটি বড় অংশই ২০৩০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হবে না এবং ব্যবহারের পূর্বেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

বিগত সরকারের সময় অতিরিক্ত সক্ষমতার যন্ত্র কেনার অনুমোদন না দেওয়ার কারণেই আসাদুজ্জামানকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হয় এবং নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

তিন. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, দুদকের ওপর প্রভাব বিস্তারের দাবি তথ্যভিত্তিক নয়। দুদকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করা এবং চিঠি পাঠানো একটি প্রাতিষ্ঠানিক, নীতিগত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার অংশ। এর মধ্য দিয়ে কোনোভাবেই সংস্থাটির ওপর ‘প্রভাব বিস্তার’ করা হয়নি; বরং তদন্তকাজ চলমান রাখতে এবং যন্ত্রপাতি গ্রহণের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে একটি প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা হয়েছে। তা ছাড়া বিশেষ সহকারীর দুদকে প্রেরিত আধা সরকারি পত্রের বক্তব্যকে প্রকল্পের কেনাকাটা করতে বিশেষ কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ বলে প্রচার করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এটা অপসংবাদিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক নম্বর পয়েন্টেও একই বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানেই প্রতিবেদকের বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ বিভাগের এই বক্তব্য আবার উল্লেখ করা হলো। এখানে বলে রাখা দরকার, দুদকের স্পষ্ট মতামত পাওয়ার পরও চেয়ারম্যানকে দ্বিতীয় দফা চিঠি দেওয়া এবং অভিযোগকে ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করা স্বাধীন সংস্থাটিকে প্রভাবিত করারই চেষ্টা। দুদকের মতামত যাতে কেনাকাটার পক্ষে পরিবর্তিত হয়, সে জন্যই ফয়েজ আহমদ দ্বিতীয় দফা আধা সরকারি পত্র দিয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে দুদক চেয়ারম্যানের ‘ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা’ কামনা করেন।

চার. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কারখানা পরিদর্শন ও জিও (সরকারি আদেশ) জারির প্রেক্ষাপট চেপে রাখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেই জিও অনুমোদন না হওয়ায় চীনে কারখানা পরিদর্শনের জন্য প্রতিনিধিদল পাঠানো সম্ভব হয়নি। সরকারের নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী, যখন কারখানা পরিদর্শন সম্ভব নয়, তখন পণ্য সরবরাহ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জাহাজীকরণ করা যেতে পারে—বিষয়টি সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্রের নিয়মানুযায়ী কারখানা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা বিটিসিএলের চারজন প্রকৌশলীর। সেখানে নিয়মবহির্ভূতভাবে চারজনের জায়গায় পাঁচজনকে কারখানা পরিদর্শনে পাঠানোর জন্য জিও জারির অনুরোধ করা হয়। নতুন দলে বিটিসিএলের প্রকৌশলী রাখা হয় দুজন আর টেলিযোগাযোগ বিভাগের তিনজন। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে তাঁদের চীন সফরে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। যদিও তাঁদের চীনে যাওয়া হয়নি। কারণ, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জিও (সরকারি আদেশ) জারির বিষয়টি আটকে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত ৯ ডিসেম্বর বিদেশ ভ্রমণসংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে সাধারণভাবে বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে নির্দেশনার ৯ নম্বরে কেনাকাটা, জাহাজীকরণের আগে কারখানা পরিদর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কেবল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ প্রেরণের বিষয় বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ‘ফ্যাক্টরি একসেপটেন্সের’ জন্য বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ নয়। আরও উল্লেখ্য যে এই কেনাকাটার জন্য কারখানায় যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জিও গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর জারি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ২৪ সেপ্টেম্বর তা বাতিল করা হয়। ২৪ অক্টোবর (২০২৪) বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদ প্রকল্প নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এ বছরের ৬ জানুয়ারি সেই তদন্ত প্রতিবেদন দুদকে পাঠাতে বলে।  

পাঁচ. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ফয়েজ আহমদের চীন সফর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। এতে চীন সফরের ব্যাখ্যা এবং এর সরকার অনুমোদিত বৈধতা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এটিকে ‘অপরিচিত সংস্থার অর্থে’ পরিচালিত বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ এটি ছিল সরকারি অনুমোদিত সফর, যার উদ্দেশ্য ছিল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন ও অবকাঠামোগত সক্ষমতা পর্যালোচনা।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: এ সফর সরকারের অনুমোদনহীন, তা প্রথম আলোর প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি। বলা হয়েছে, জিওতে উল্লিখিত ‘চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারস ইন বাংলাদেশ’ নামের সংগঠনটি অপরিচিত। তবে ‘চায়নিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন রয়েছে। উল্লেখ্য, ওই সফরে বিশেষ সহকারীর একান্ত সচিব সফরসঙ্গী ছিলেন, যা সরকারের বিদেশ ভ্রমণবিষয়ক নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ নির্দেশনায় একান্ত সচিবদের জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত সঙ্গে নেওয়া পরিহার করতে বলা হয়েছে।

ছয়. প্রতিবাদপত্রে টেলিযোগাযোগ বিভাগ বলেছে, একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত বাস্তবতা বিশ্লেষণ না করে শুধু প্রাক্তন আমলাদের বক্তব্য, বাতিল হওয়া দরপত্র এবং অনুমাননির্ভর ব্যাখ্যা দিয়ে ফয়েজ আহমদের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজের অবস্থান গণমাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যার কিছু অংশ প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকলেও প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের প্রতি উত্তরের অনুপস্থিতিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: বক্তব্য জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ১৬ জুলাই ফয়েজ আহমদ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হয়। পরে ফয়েজ আহমদকে ফোন করা হয় এবং খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে ফোনে বিষয়টি জানানো হয়। ২০ জুলাই আইসিটি বিভাগে গেলে অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে জানানো হয়, ফয়েজ আহমদ অফিসে উপস্থিত নেই। তখন আইসিটি বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠাবেন বলে জানান। তিনি পাঠাননি। পরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ৭ জুলাই ফয়েজ আহমদ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সেটাই তাঁর বক্তব্য। উল্লেখ্য, ফয়েজ আহমদের আগের বক্তব্যের চুম্বক অংশ প্রতিবেদনে রয়েছে। পাশাপাশি ৭ জুলাই তা প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে অনুমাননির্ভর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

সাত. টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে দুজন কারিগরি ও দুজন ক্রয় বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস’ (ব্যয়ের বিপরীতে সুফল পর্যালোচনা) কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রতিবেদকের বক্তব্য: ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস’ করা হয়েছে কি না, সেটা প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে জানতে চেয়েছিলেন টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, প্রথম আলোর প্রতিবেদন মোটেও ‘ব্যাখ্যাহীন অনুমানমূলক’ নয়, এটা ‘বিভ্রান্তিকর, একপক্ষীয় এবং ভিত্তিহীন’ও নয়; বরং প্রথম আলোর প্রতিবেদন সঠিক এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র প্রথম আলোর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ