Samakal:
2025-11-03@19:17:47 GMT

সচিবরাও গাড়িবিলাসী

Published: 4th, February 2025 GMT

সচিবরাও গাড়িবিলাসী

সরকারি গাড়ি ব্যবহারে আমলারাও কম যাচ্ছেন না। মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টার গাড়ি ব্যবহারের নিয়ম-নীতি থাকলেও সচিবের বেলায় আইনই নেই। এ সুযোগে একজন সচিব তিন থেকে চারটি গাড়ি হাতে রাখছেন। ২০১৪ সালে সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ সুবিধা চালুর পর সচিবদের সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের (পরিবহন পুল) গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবু সচিবরা সুদমুক্ত টাকায় কেনা গাড়ি বাসায় রেখে সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি হাঁকাচ্ছে। এ কারণে প্রত্যেক সচিবের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি জিপও কেনা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্প ও দপ্তর থেকে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন সচিবরা। এসব গাড়ি তাদের পরিবারের সদস্য, সচিবদের পিএস ব্যবহার করছেন। এমনকি কয়েকজন সচিবের ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক গাড়ি সঙ্গে রাখছেন। ফলে ঋণের টাকায় আমলারা ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার পরও সরকারের যাতায়াত খাতে খরচ দাঁড়িয়েছে কয়েক গুণ।

জানা যায়, সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ চালু হওয়ার আগে সচিবরা পরিবহন পুলের একটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। তবে খরচ সাশ্রয়ের যুক্তি দেখিয়ে যুগ্ম সচিব থেকে ওপরের পদের কর্মকর্তাদের প্রাধিকারপ্রাপ্ত হিসেবে গাড়ি ঋণ সুবিধা চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর সচিবের ক্ষেত্রে পুলের গাড়ি ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বৈঠকে মৌখিক নির্দেশনা দেন– ঢাকার বাইরে নির্ধারিত কোনো দাপ্তরিক সফর বা প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি তারা ব্যবহার করতে পারবেন। 
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গাড়ি ব্যবহারের অনিয়ম রোধে সংশ্লিষ্ট আমলাদের কাছে বহুবার চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছে। তবু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত ২ সেপ্টেম্বর আগের মতো আমলাদের শুধু সতর্ক করা হয়েছে। অথচ নীতিমালার ১৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী কোনো কর্মকর্তা তাঁর দপ্তর থেকে রিকুইজিশনের কোনো গাড়ি সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে গাড়ি ব্যবহার বিষয়ে সতর্ক করার পরও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিব, উপদেষ্টাদের পিএস, এপিএস ও বড় মন্ত্রণালয়ের পিয়নরাও যথেচ্ছ গাড়ি ব্যবহার করেছেন।

জানা যায়, পরিবহন পুল থেকে সচিবের গাড়ি সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রশাসনিক কাজসহ নানা যুক্তি দেখিয়ে গাড়ি কেনা বাড়িয়েছে। ফলে খরচ সাশ্রয়ের যুক্তি দেখিয়ে আমলাদের জন্য সুদমুক্ত গাড়ির ঋণ চালু হলেও তা বিফলে গেছে। ২০১৭ সাল থেকে উপসচিবদেরও এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে গাড়ি কিনতে ২০ লাখ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ, তেল ও চালকের বেতন বাবদ মাসে ৩০ হাজার টাকা পেতেন কর্মকর্তারা। ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে গাড়ি কিনতে ৩০ লাখ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণ, তেল ও চালকের বেতন বাবদ মাসে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে সরকার। জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা আরও ২৫০ লিটার পেট্রোল বা অকটেন পাচ্ছেন। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত সরকারিভাবে সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছেন ৪ হাজার ২০০ কর্মকর্তা। এর মধ্যে অধিকাংশ কর্মকর্তা অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ২১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরে সরকারের বাড়তি খরচ হচ্ছে ২৫২ কোটি টাকা।
সুদমুক্ত ঋণ চালু হওয়ার পরও অর্থ বিভাগ জিপ কিনেছে দুটি, কার ছয়টি, মাইক্রোবাস ১৩টি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জিপ কিনেছে চারটি, কার ১৩টি, মাইক্রোবাস ৭টি, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় জিপ দুটি, মাইক্রোবাস তিনটি, খাদ্য মন্ত্রণালয় জিপ কিনেছে একটি, মাইক্রোবাস চারটি। একইভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রশাসনিক কাজের চাহিদা দেখিয়ে বাড়তি গাড়ি কিনে জিপ ব্যবহার করছেন সচিবরা। কার ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করছেন সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি কেনা কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তর ও প্রকল্পের গাড়িতে চড়ছেন উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবরা। অনেক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়ায় খাটানোর অভিযোগও রয়েছে।

সাবেক সচিব একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, সুদমুক্ত ঋণের মাধ্যমে গাড়ি সুবিধা ছিল এক প্রকার ঘুষ। এ জন্য আমি এই ঋণ নিইনি। তিনি বলেন, ঋণ নিয়ে তারা গাড়ি কিনলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা বেআইনিভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন। এতে অনাচার বেড়েছে, খরচ বেড়েছে। রাষ্ট্রের ওপর তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক চাপ, তবে রাষ্ট্রের কোনো লাভ হয়নি। সুশাসন পরিপন্থি কাজ হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেটা আদৌ সাধন হয়নি।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিনের এই অনিয়ম-দুর্নীতি সহজে বন্ধ করা যাবে না। এগুলো বন্ধ করতে একটু সময় দিতে হবে। তবে কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের নির্দিষ্ট তথ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোন সচিবের কয়টা গাড়ি 
গাড়ি কেনার অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অর্থ বিভাগের সচিব। অথচ অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারের পরিবারের সদস্যরা মন্ত্রণালয়ের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪২৭৯৬) সার্বক্ষণিক ব্যবহার করছেন। তিনি ব্যবহার করছেন সোনালী ব্যাংকের বড় জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৯৬২১), সঙ্গে চালকও। আর ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করছেন। তাঁর পিএস চড়েন মন্ত্রণালয়ের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো গ-৩৪৬৫৮০)। পরিবহন পুল থেকে নিয়েছেন চালক।

খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান সার্বক্ষণিক ব্যবহার করছেন মন্ত্রণালয়ের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৬৩৪৭)। তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন খাদ্য অধিদপ্তরের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১২২১০৭)। তাঁর পিএস হাঁকান অধিদপ্তরের বাহন (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৪১৮৬২)। এসব গাড়ির জ্বালানি খরচ দেয় খাদ্য অধিদপ্তর। গাড়ির চালক খাদ্য অধিদপ্তরের জিল্লুর, দ্বীন ইসলাম ও কামাল। খাদ্য অধিদপ্তরের এমন ৯ চালক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। চালক কামাল বলেন, ‘আমি সচিব স্যারের বাসায় গাড়ি চালাই। দ্বীন ইসলাম পিএসের এবং জিল্লুর সচিবের গাড়িচালক।’ 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব কামরুল হাসান রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া জাতিসংঘের একটি প্রকল্পের গাড়ি (অজ-২০১০৫) ব্যবহার করছেন। তাঁর পিএস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৩৬৫৪) চড়ছেন। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, অধিদপ্তরে গাড়ির অনেক সংকট। এর মধ্যেও মন্ত্রণালয়কে গাড়ি সরবরাহ করতে হয়। 
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মুশফিকুর রহমান ব্যবহার করছেন টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৫৬৯০)। তাঁর পিএস চড়েন বিটিসিএলের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৭০০০৮)। রেলপথ সচিব ফাহিমুল ইসলাম ব্যবহার করছেন প্রকল্পের বড় জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৫৪৩১)। রেলপথ সচিব দপ্তরের ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও বিভিন্ন প্রকল্পের গাড়িতে চড়ছেন।

পিছিয়ে নেই অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবরা 
অনিয়মের মাধ্যমে গাড়ি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিবরা। যেসব দপ্তর, সংস্থা দেখভালের দায়িত্বে আছেন, সেসব দপ্তর থেকে নিয়েছেন বড় জিপ। এর মধ্যে এগিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়; সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 
এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা ব্যবহার করছেন ইজিসিবির গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৬২৭৫), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এসএম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১১৩৯৬৫), অতিরিক্ত সচিব ড.

নূরুন্নাহার চৌধুরী বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানির গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৭২৯৮) ব্যবহার করছেন।
পরিবহন পুলের গাড়ি ও চালক অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) ওবায়দুর রহমান (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫৩২০২)। এ ছাড়া পরিবহন পুলের ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৯৮৫৭৯, ঢাকা মেট্রো গ-৩৩৪৪০০, ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৩৪৪০১, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫১৩৮৭, ঢাকা মেট্রো গ-৩৯৮৫৭৭ গাড়িও চলছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা বলেন, ‘জিপটি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করি। যখন প্রয়োজন হয় বা বাইরে ট্যুর থাকে, শুধু তখন।’

বরাদ্দের ৭ গুণ দামে পুলের গাড়ি
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর ব্যবহার করছেন ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দামের বিলাসবহুল জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮৪৪০৪) ল্যান্ড ক্রুজার ভিএক্স-ভিএইট। ইঞ্জিনের ধারণক্ষমতা (সিসি) ৪ হাজার ৫০০। ২০১৮ সালে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সময়ে বরাদ্দের ৭ গুণ দামে এই গাড়ি কেনা হয়। একই ব্র্যান্ডের পরিবহন পুলের জিপ (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩৬৫২৩) ব্যবহার করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান। পরিবহন পুল থেকে ২০২১ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সচিব কেএম আলী আজম এই গাড়ি নেন। এর পর যিনিই মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিব হচ্ছেন, তিনি এই দুই গাড়ির বরাদ্দ ছাড়ছেন না। অর্থ বিভাগের সচিব খায়েরুজ্জমান মজুমদার বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে ওই দুটি গাড়ি কেনা হয়েছিল। 
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের পরিবহন কমিশনার আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর সমকালকে বলেন, সচিবদের গাড়ি ব্যবহার বিষয়ে আইন আছে কিনা, জানি না। তবে সচিবরা পুলের গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। এখন শুধু জনপ্রশাসন সচিব ব্যবহার করছেন। অন্য সচিবরা নিজেদের মন্ত্রণালয়ের একাধিক গাড়ি হয়তো ব্যবহার করছেন। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় আমি আর মন্তব্য করব না। 

বাড়ছে চালকের বেতন ও জ্বালানি খরচ 
সচিব-পিএসদের অফিস সময়ের আগে ও পরে ওভারটাইমের জন্য চালককে দিতে হচ্ছে বাড়তি বেতন। একই সঙ্গে জ্বালানি খরচও গুনতে হচ্ছে। জানুয়ারিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পিএস জয়নাল আবেদীনের গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-৩৪৬২৮৭) চালককে দেওয়া হয়েছে ২৫৩ ঘণ্টার অতিরিক্ত বেতন। জ্বালানিসহ অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। শুধু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র সদস য ব যবহ র করছ ন ব যবহ র করত প রকল প র ব যবহ র র ন মন ত র সরক র র ব যবস থ উপদ ষ ট উপসচ ব র প এস র জন য র পর ব

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ