বিআরটিএর মাহাবুবের হাতে ‘জাদুর চেরাগ’
Published: 4th, February 2025 GMT
সরদার মাহাবুবুর রহমান। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআরটিএ) ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগ দেন। তখন তাঁর বেতন ছিল সাকল্যে দেড় হাজার টাকা। দুই ধাপ পদোন্নতি পেয়ে ২০২৩ সালে উপপরিচালক (ডিডি, অর্থ) হন তিনি। এখন তাঁর বেতন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। সরকারি এই কর্মকর্তা ঢাকায় গড়েছেন বহুতল ভবন, ফ্ল্যাট। কিনেছেন গাড়ি। গোপালগঞ্জ জেলা শহরে নির্মাণ করছেন ১৪ তলা ভবন।
মাহাবুবুর রহমানের পুরো চাকরিজীবনের হিসাব করলে দেখা যায়, তিনি বেতন পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৮৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে তাঁর প্রয়াত কৃষক বাবা কিছু আবাদি জমি রেখে গেছেন, সেগুলো সেভাবেই আছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর বিপুল সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মাহাবুবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া আবাদি জমিজমা এখন পর্যন্ত বিক্রি করেননি মাহাবুবুর রহমান বা তাঁর শরিকরা। তাঁর স্ত্রী মিন্নি বেগম গৃহিণী। তিন ছেলেমেয়ে এখনও শিক্ষার্থী। শ্বশুরবাড়ি থেকেও বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতির অর্থ দিয়েই গড়েছেন এসব সম্পদ।
বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেলা ও সার্কেল অফিসগুলোর জন্য বার্ষিক বরাদ্দ হয়। কোন অফিস কত বরাদ্দ পাবে তা নির্ধারণ করতেন মাহাবুবুর রহমান। একক ক্ষমতা ছিল তাঁর হাতে। বাজেট বাড়িয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট সার্কেল থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন তিনি। কেনাকাটার ভাউচার পাস করাতেও কমিশন দিতে হতো তাঁকে। এ ছাড়া বিআরটিএর বেসরকারি ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের বিল পাস করাতে উৎকোচ নিতেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাজেট সংক্রান্ত কমিটি হওয়ায় বর্তমানে তাঁর ক্ষমতা অনেকটা খর্ব হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাবুবের বাবা আব্দুর রাশেদ সরদার প্রায় ৩০ বছর আগে মারা গেছেন। তারা দুই ভাই ও দুই বোন। ডুমুরিয়া গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ছয়জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাহাবুবের বাবা রাশেদ সরদার কৃষিকাজ করতেন। তিনি চাষাবাদের যে জমিজমা রেখে গেছেন, তা ছেলেমেয়েরা বিক্রি করেননি। পৈতৃক টিনের বাড়ি ছিল। সেটি ভেঙে এখন একতলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।
ঢাকা উদ্যানে বহুতল ভবন
মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যানে মাহবুবুর রহমানের একটি বহুতল ভবন রয়েছে। ব্লক-এ। রোড-২। বাড়ি নম্বর-২১। আটতলা অট্টালিকা। ছাদের ওপরে অর্ধেকাংশে আরও একটি ফ্ল্যাট করা হয়েছে। সে হিসাবে বাড়িটি সাড়ে আটতলা। নিচতলায় তিনটি দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া আছে। বাড়িটির ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন আরজু মিয়া।
ভাড়াটিয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে ৭-৮ বছর আগে। মাহবুবুর রহমান সেখানে কখনোই বাস করেননি। প্রতি তলায় দুটি করে ইউনিট। সব ক’টিতে ভাড়াটিয়া রয়েছে।
কর্নার প্লটের ভবনটির বাইরের অংশে রং করা নেই। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, সাধারণত বাইরের দিকে চাকচিক্য থাকলে মানুষের মনে ভবন ও মালিক সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সেটা এড়াতে রং করা হয়নি।
গোপালগঞ্জে নির্মাণাধীন ১৪ তলা ভবন
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাবুবুর রহমান ২০১৪ সালে গোপালগঞ্জ জেলা শহরের থানাপাড়া জামে মসজিদের পাশে ৬৫ লাখ টাকায় স্ত্রীর নামে সাড়ে ৬ শতাংশ জমি কেনেন। বছর দুয়েক আগে সেখানে ১৪ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন মাহাবুব।
সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ৯ তলা পর্যন্ত উঠেছে। বাইরের অংশের প্লাস্টারের কাজ চলছে। ভবনের প্রতিটি তলায় তিন ইউনিট। নির্মাণ শ্রমিকরা বলেন, তারা বাড়িটির মালিক হিসেবে মাহাবুবুর রহমানকেই জানেন। তিনি ঢাকায় সরকারি বড় কর্মকর্তা। মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে নির্মাণকাজ দেখতে এখানে আসেন। নির্দেশনা দেন। তাঁর নির্দেশনায় কাজ এগিয়ে চলছে।
ছয় মাসের মধ্যে ভবনটি বসবাসের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানান শ্রমিকরা। ভবন নির্মাণে প্রতি বর্গফুটে অন্তত ২ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় হবে।
মাহাবুবুর রহমানের শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, মাহাবুবের শ্বশুর প্রয়াত মোহাম্মদ আলী পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন। নব্বই দশকে তিনি অবসরে যান। এরপর গোপালগঞ্জ শহরের মিয়াপাড়ায় জমি কিনে ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করতেন। সাত মেয়ে ও চার ছেলে নিয়ে দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। শহরে মুদি ব্যবসা করেছেন। ভিটে জমি ছাড়া তাঁর কোনো সম্পদ ছিল না। মিন্নির স্বামীর টাকায় জমি কেনার পর বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুরে ফ্ল্যাট
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহাবুবুর রহমান একসময় মিরপুরের উত্তর টোলারবাগে পরিবার নিয়ে থাকতেন। গত ২৯ জানুয়ারি দুপুরে উত্তর টোলারবাগের ১৯/সি-২ নম্বর ভবনে গিয়ে এর সত্যতা মেলে। ভবনের ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান জানান, একই হোল্ডিংয়ে পাশাপাশি দুটি ছয়তলা ভবন। প্রথম ভবনের ৩/এ ফ্ল্যাটের মালিক মাহবুবুর রহমান। ফ্ল্যাটের আয়তন আনুমানিক ১২০০ বর্গফুট। ২০১০ সালে ভবন নির্মিত হয়। ওই সময়ই ফ্ল্যাটটি কেনেন মাহাবুব। সেখানেই বসবাস করতেন। তবে প্রায় ১০ বছর আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে উত্তরায় চলে যান। বর্তমানে ধানমন্ডি এলাকার ফ্ল্যাটে থাকেন।
সরকারি চালক চালান ব্যক্তিগত গাড়ি
মাহাবুবুর রহমানের একটি প্রাইভেটকার রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন। তবে ব্যক্তিগত চালক রাখেননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, মাহাবুবুর রহমানের সরকারি গাড়ির চালক সেলিমকে দিয়ে ওই গাড়ি চালানো হয়। মাহাবুবুর রহমান সরকারি গাড়িতে সকালে অফিসে আসেন, ছুটি হয় বিকেলে। এই সময়ের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন হলে তিনি চালক সেলিমকে ধানমন্ডির বাসায় পাঠিয়ে দেন প্রাইভেটকার ড্রাইভিং করার জন্য।
জানতে চাইলে মাহাবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘আমার যা সম্পদ রয়েছে সব আয়কর ফাইলে ওঠানো আছে।’ এই সম্পদ কি চাকরির টাকায় করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ব্যাংক ঋণ নিয়ে ঢাকা উদ্যানের বাড়ি করেছি। এখন ভাড়া থেকে ঋণ শোধ করছি।’
মাহাবুবের সম্পদের বিবরণ শোনার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড.
তিনি বলেন, যোগসাজশমূলক দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতা ব্যবহার করে সম্পদ গড়েছেন। তাঁকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি যাদের যোগসাজশে, সুরক্ষায় এই সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদেরও একইভাবে সম্পদের হিসাব নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব আরট ম হ ব ব র রহম ন র গ প লগঞ জ ব আরট এ পর য য় পর ব র করত ন ভবন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।