চট্টগ্রাম ডিসি পার্কে ফুল উৎসবে তাণ্ডব, ভাঙচুর
Published: 5th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের ডিসি পার্কে ফুল উৎসবে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। পার্কের গেটসহ তারা ভাঙচুর করেছে ২০টির বেশি দোকান। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ফুল উৎসবে আসা দর্শনার্থী, গাড়িচালক, হেলপারসহ শতাধিক ব্যক্তি। পরে সেনাবাহিনীর টিম এলে রাত সাড়ে ১০টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ সড়কের ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটে। হামলার জেরে ফুল উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ডিসি পার্কের গেটের সামনে একটি কার পার্কিং রয়েছে। এর দক্ষিণে লরি ও কাভার্ডভ্যান দাঁড়ালে কার পার্কিংয়ে দায়িত্বরতদের সঙ্গে চালকদের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন এসে ট্রাকচালকদের মারধর করেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ট্রাকচালকসহ বহিরাগতরা পার্কের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। তারা পার্কের ভেতরে ফুল উৎসবের ২০টির বেশি অধিক দোকান ভাঙচুর করেন।
ডিসি পার্কে ফুল উৎসবে আসা দর্শনাথী রাবেয়া বেগম বলেন, হঠাৎ করে লাঠি নিয়ে কিছু যুবক হামলা শুরু করে। এতে তাঁরসহ অনেক দর্শনার্থীর মোবাইল ও ভ্যানেটি ব্যাগ হারিয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা যায়, কিছু উচ্ছৃখল যুবক ডিসি পার্কের গেট ভেঙে ভেতরে লাঠি নিয়ে ঢুকে দোকান ভাঙচুর করছে। হামলায় অন্তত ৩০ দর্শনার্থী আহত হয়েছেন।
ট্রাকচালক আবদুল করিম বলেন, পার্কিংয়ের বাইরে সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড়ালে স্থানীয় কয়েকজন বাধা দেন। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চালকদের মারধর করেন। পরে অন্য চালক ও স্থানীয়রা পার্কের ভেতর ঢুকে ভাঙচুর চালান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুবার লরি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়েরের দাবি, রাস্তায় গাড়ি দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে ডিসি পার্কে থাকা লোকজন চালকদের ওপর হামলা চালান। এতে ৬০-৭০ জন চালক আহত হন। তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বন্দর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডিসি পার্কের সামনে পার্কিংয়ে থাকা লোকজন এ হামলা চালিয়েছে।
তবে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দাবি, ডিসি পার্ক সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাক-লরির চালক ও শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়, যা সহিংস রূপ নেয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো.
সীতাকুণ্ডের ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিসি পার্ক সংলগ্ন রাস্তায় ট্রাক-লরির চালক ও শ্রমিকদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সহিংসতা পার্শ্ববর্তী ডিসি পার্কে ছড়িয়ে পড়ে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল উৎসব চ লকদ র র কর ন
এছাড়াও পড়ুন:
তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।
মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।
সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।
প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।
আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।
মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।