ফ্রান্সের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর কানে প্রতি বছর বসে বিশ্ব সিনেমার মিলনমেলা। ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ এখন চলচ্চিত্র দুনিয়ার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর ।  জা চকচকে এই আসরে ফিল্মি দুনিয়ার তাবৎ বড় বড় তারকাদের উপস্থিতি চোখ জুড়িয়ে দেয় যেনো। লাল গালিচায় মুখরতা আর তারকাদের বাহাড়ি পোশাক চুম্বকের মত আকর্ষণ করে সিনেমাপ্রেমী মানুষদের। 

প্রতিবারের মত এবারই কানে বসছে এই আসর।  এই কান চলচ্চিত্র উৎসবের সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন ফরাসি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম নাম ইরিস নোব্লখ। উৎসবের পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সমকালকে এক মেইলবার্তায় জানিয়েছে কান কর্তৃপক্ষ।

ইরিস নোব্লখ ২০২২ সালের জুলাই থেকে কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম নারী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সে বার্তায় জানানো হয়েছে নতুন এ দায়িত্ব চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হবে এবং ২০২৬, ২০২৭ ও ২০২৮ সালের উৎসবগুলোতে ইরিস নোব্লখ তার দায়িত্ব পালন করবেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত তার নেতৃত্বের প্রতি পুনর্বার আস্থা প্রকাশ করা হলো, যা তার অতীত অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেয় এবং উৎসবের কৌশলগত উদ্যোগগুলো অব্যাহত রাখা নিশ্চিত করে।

এদিকে পরিচালনা পর্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ইরিস নোব্লখ বলেন, ‘পরিচালনা পর্ষদের আস্থা পুনরায় অর্জন করতে পেরে আমি গভীরভাবে সম্মানিত। গত দুই আসরের সাফল্যে আমি গর্বিত এবং ভবিষ্যতে আমাদের মহাপরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো এবং উৎসবের নিবেদিতপ্রাণ দলের সঙ্গে এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবো ভেবে উচ্ছ্বসিত। আমরা একসঙ্গে কাজ করে এই অনন্য উৎসবকে আরও সমৃদ্ধ করবো, যেখানে সব ধরনের চলচ্চিত্র, কণ্ঠস্বর এবং প্রতিভা তাদের স্থান খুঁজে পায়।’

‘উৎসবের শিল্পমূল্য ধরে রাখা, সৃজনশীল স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং মানবিক মূল্যবোধ রক্ষাই হবে আমার প্রধান অগ্রাধিকার। নির্বাচনের স্বতন্ত্রতা রক্ষা করা, নতুন প্রতিভাবানদের সমর্থন দেওয়া এবং নিশ্চিত করা যে কান চলচ্চিত্র উৎসব সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সংযোগস্থল হয়ে থাকবে—এসবের প্রতি আমি অঙ্গীকারবদ্ধ।’ যোগ করেন ইরিস।

আগামীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও, আমি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই যে উৎসবটি যেন সমতার প্রতীক হয়ে থাকে এবং সকলের জন্য স্বীকৃতির স্থান হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, নারীদের সৃজনশীল প্রতিভাকে তুলে ধরতে আমি আরও মনোযোগী থাকবো। প্রায় ৮০ বছর ধরে কান চলচ্চিত্র উৎসব ও চলচ্চিত্রের মধ্যে এক অনন্য ও অটুট ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আমরা এই অসাধারণ প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বব্যাপী শিল্পী ও চলচ্চিত্রের জন্য এক আলোকবর্তিকা হিসেবে ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাব।’

জার্মান বংশোদ্ভূত, প্যারিস-ভিত্তিক প্রাক্তন ওয়ার্নার ব্রোস নির্বাহী ইরিস নোব্লখ ওয়ার্নার ব্রাদার্স ও টাইম ওয়ার্নারে এক অসাধারণ ক্যারিয়ার গড়েছেন, যেখানে তিনি নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, লন্ডন এবং প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করেছেন এবং বিশেষভাবে মিশেল হাজানাভিসিয়াসের ‘দ্য আর্টিস্ট’ ছবিকে সমর্থন দিয়েছেন, যা কান উৎসবে নির্বাচিত হওয়ার পর অস্কারের সেরা চলচ্চিত্র বিভাগে প্রথম ফরাসি ছবি হিসেবে পুরস্কার জিতেছিল।

ইরিস নোব্লখকে ইউরোপীয় মূল্যবোধের প্রতি নিবেদিত ও ফরাসি এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের শক্তিশালী সমর্থকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রশিল্পের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য করা হয়। সৃজনশীল শিল্পে বৈচিত্র্য ও উদ্ভাবনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি তাকে সর্বত্র সম্মানিত করেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব ক ন চলচ চ ত র উৎসব চলচ চ ত র র স জনশ ল উৎসব র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা
  • ভালোবাসার ফ্রেমে মেহজাবীন-রাজীব, পেছনে আইফেল টাওয়ার