খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় সাক্ষ্য শেষ, আত্মপক্ষ শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি
Published: 5th, February 2025 GMT
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলমের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক সাহেদুর রহমান জবানবন্দি শেষ করেন। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। পরে আদালত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ঠিক করেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলা তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত বছরের ১৯ মার্চ একই আদালত খালেদা জিয়াসহ ৮ আসামির অব্যাহতির আদালত নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন।
অপর আসামিরা হলেন—প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী,বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম। এদের মধ্য প্রথম তিন জন পলাতক আছেন।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়
নেতা–কর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, আমরা যদি সতর্ক না থাকি তাহলে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আইনজীবীদের ভূমিকা: আলোচনা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কিন্তু খুব একটা সূক্ষ্ম তারের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু চারদিকে আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন, চারদিকে একটু চোখ–কান খোলা রাখেন। দেখবেন কতগুলো ঘটনা ঘটছে, যে ঘটনাগুলোর আলামত ভালো না। এদিকে একটু লক্ষ রাখতে হবে।’
দেশের মানুষ সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন কী, সেটি বোঝে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই সংস্কার হোক। সাধারণ মানুষ কিন্তু চায় যে একটা নির্বাচন হোক, সে নির্বাচন থেকে নতুন সরকার আসুক। যে সরকার তারা নির্বাচিত করতে পারবে, যে প্রতিনিধি তারা নির্বাচন করবে। তাদের কথা বলার লোক তারা পার্লামেন্টে (সংসদ) নিতে চায়। এটা খুব সহজ হিসাব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই যে বিষয়গুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এই বিতর্কগুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এর পেছনে আপনি যদি মনে করেন এমনি এমনি করা হচ্ছে, তা নয়। এর পেছনে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্যটা সেই এক–এগারোতে ফিরে যাবেন, সেই উদ্দেশ্যটা, সেই একেবারে ফিরে চলে যাবেন এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা দখল করা পর্যন্ত। এ দেশে গণতন্ত্রকে চলতে দিতে চায় না। একটা মহল আছে যারা বারবার গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানও এই কাজটা করেছেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তন করে।’
বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেসি (উদার গণতন্ত্র) চায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশের জনগণ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাক। সে ভোট দিক। ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি সে নির্বাচিত করুক। পার্লামেন্ট (সংসদ) তৈরি হোক, সরকার তৈরি হোক। তারা চালাবে পাঁচ বছর। সেই পাঁচ বছরে যদি তারা ব্যর্থ হয়, না পারে, আবার নির্বাচন হবে। নির্বাচনে জনতা তাদের বাদ দিয়ে দেবে, অন্য দলকে দেবে। তাই তো? এই জায়গাটায় যেতে এত তর্ক–বিতর্ক কেন?
নির্বাচনের জন্য আর দেরি করা অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের জন্য সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ডেডলাইন (সময়সীমা), এর পরে হলে আপনি যে সম্মান নিয়ে এসেছেন, সমগ্র বিশ্বে আপনার যে সম্মান, সেই সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’
সভায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত এক বছরে বাংলাদেশের জন–আকাঙ্ক্ষার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং পুরা জিনিসটাই আপনি সংস্কারের নামে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে এত বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন; শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমার ব্যক্তিগত অপিনিয়ন (মতামত), সংস্কারের নামে অপসংস্কার কুসংস্কার তৈরি করে নিয়ে যাবেন। একটু থামেন, আপনার তো এত ম্যান্ডেট নাই। সবকিছু নিয়েই আপনি বসে পড়েছেন। জুলাই সনদ হবে, জুলাই ঘোষণা হবে, সবই ঠিক। আর কত সময় নেবেন?
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে কিন্তু খুব বেশি সময় নাই। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো ব্যত্যয় যেন না ঘটে। আইনজীবীসহ সারা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আবার রাজপথের আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আমাদেরকে বাধ্য করবেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঐকমত্য দেখি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেখি না। গণতন্ত্রের পথে হাঁটুন, আইনজীবীরা কালো কোট পরে মাঠে নামলে কেউ থাকতে পারে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে বিদায়ের চিন্তা করুন।’ সরকারে থাকা দুই তরুণ উপদেষ্টাকে যেন তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেই আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রতি জানান তিনি।
সভার শুরুতেই একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।