জুলাইয়ের শহীদেরা দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিলেন: জামায়াতের আমির
Published: 5th, February 2025 GMT
জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও দুর্নীতি-দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘তাঁদের দিকে তাকিয়ে বিপ্লবের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এমন কোনো অপকর্ম কেউ করবেন না। যদি করেন, শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, তাঁদের রক্তকে অপমান করা হবে।’
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের শহীদ স্মারক’–এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান এ কথাগুলো বলেন। জামায়াতে ইসলামী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকার বাইরে আরও ১০টি জায়গায়—চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও কুমিল্লা মহানগরীতে একযোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই ২০২৪ বিপ্লবের শহীদ স্মারকে ৭১৫ জন শহীদের নাম –পরিচয় এবং তাঁরা কীভাবে শহীদ হয়েছেন, সে তথ্য তুলে আনা হয়েছে। ১০ খণ্ডে আড়াই হাজার পৃষ্ঠার এই স্মারকের কাজ অব্যাহত থাকবে। সে জন্য শহীদ পরিবারের সদস্যদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশ আমাদের সবার, কিন্তু দিন শেষে দেশের পাহারাদারিত্ব করা কিন্তু সব নাগরিকের কর্ম নয়। এই কাজ কিছু লোক করে। আবার কিছু লোক নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নেওয়ার মতো অপকর্মে লিপ্ত হয়। আর অপকর্মটি যারা করে, তারা এটিকে তাদের পেশা মনে করেই করে। একটা সময় তা নিজের অধিকার বলেই মনে করে, জনগণকে নিজের প্রজা মনে করে আর নিজেরা রাজা হয়ে বসে। কিন্তু গাছের ডালে যখন ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, ডালের রাজারা তখন উড়ে গিয়ে পড়ে যায়।’
এখনো পরিপূর্ণভাবে ইতিহাস রচনা করতে পারেননি উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা এখন হতাশায় পড়ে যাচ্ছেন। এ সময় জাতির পক্ষ থেকে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। অতীতে যারা ফ্যাসিস্ট শাসক ছিল, তাদের নাম ধর্মগ্রন্থেও উঠে এসেছে। একই পরিণতি সবাইকে ভোগ করতে হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিস্টরা ইতিহাস পড়ে, কিন্তু তা থেকে শিক্ষা নেয় না।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘পলায়ন করা নেত্রী বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, আমার কী অপরাধ? আল্লাহ যখন ইবলিসকে বিতাড়িত করেছিল, তখন ইবলিস সে কথাই বলেছিল, আমার কী অপরাধ। আমি আদমকে কেন সেজদা করব। দুই হাজার দামাল সন্তানকে হত্যার পর অপরাধ খুঁজে পান না? এর চেয়ে জঘন্য অপরাধ কী হতে পারে!’
অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহীদ মুনতাসির রহমান আলিফের বাবা গাজীউর রহমান, শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা গোলাম রাজ্জাক, শহীদ ফারহান ফায়েজের বাবা শহীদুল ইসলাম, শহীদ মাহফুজুর রহমানের বাবা আবদুল মান্নান ও ইমাম হোসেন তায়েমের ভাই রবিউল আউয়াল বক্তব্য দেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, তাঁদের নিয়ে ভাবনার সময় এখন আর কারও নেই। কেউ কেউ লুটপাট নিয়ে ব্যস্ত। কেউ ১৬–১৭ বছরের বিলুপ্ত প্রায় দল গোছাতে ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার এই সরকারকে দ্রুত ব্যর্থ ও অকার্যকর করে এককভাবে ক্ষমতায় যেতে দ্রুত নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তাঁরা কার কাছে যাবেন?
অনলাইনে যুক্ত হয়ে খুলনা থেকে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার। এতে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সাবেক শিক্ষক সুকোমল বড়ুয়া, ১২–দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম প্রমুখ।
জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন ল ইসল ম অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার
চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপির দুই নেতাকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চাঁদাবাজি, দখলদারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নান লস্কর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। এর মধ্যে মতলব উত্তরের আবদুল মান্নান লস্করকে চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবদুল মান্নান লস্কর ও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই অভিযোগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন গাজীকেও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের (মানিক) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ ব্যাপারে চিঠি এখনো পাননি। যেকোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটি অন্যান্য নেতার জন্যও একটি বার্তা ও শিক্ষা।