ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে এক বছরে ইউটিউবের আয় কত
Published: 7th, February 2025 GMT
ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব এখন বিনোদনের অন্যতম উৎস। শখের বসে বা অনলাইনে আয়ের জন্য অনেকেই ইউটিউবে চ্যানেল খুলে নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করেন। এসব ভিডিও বিনা মূল্যে দেখা গেলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখতে বাধ্য হন দর্শকেরা। ইউটিউব ভিডিওতে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের বিরুদ্ধে অনেকে অসন্তুষ্ট হলেও ইউটিউবের আয়ের মূল উৎসই কিন্তু বিজ্ঞাপন। শুধু তা–ই নয়, বিজ্ঞাপন থেকে পাওয়া অর্থের নির্দিষ্ট অংশ ভিডিও নির্মাতাদেরও দিয়ে থাকে প্ল্যাটফর্মটি। আর তাই ভিডিও নির্মাতা ও ভিডিওর দর্শকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর বিজ্ঞাপন থেকে বিপুল আয় করেছে ইউটিউব। প্রিমিয়াম সেবা নিবন্ধনের মাধ্যমেও আয় বেড়েছে প্ল্যাটফর্মটির।
ইউটিউবের বার্ষিক রাজস্ব প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে শুধু বিজ্ঞাপন থেকেই ৩ হাজার ৬২০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে ইউটিউব। এ বিষয়ে স্ট্রিমটিভিইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউটিউবের এই আয় শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন থেকে এসেছে। এর বাইরে ইউটিউব প্রিমিয়াম সেবা নিবন্ধন ও ইউটিউব টিভি থেকেও আয় করেছে প্ল্যাটফর্মটি। ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ইউটিউব বিজ্ঞাপন থেকে ১ হাজার ৪৭ কোটি ডলার আয় করেছে, যা ইউটিউবের ইতিহাসে এক প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আয়ের রেকর্ড।
আরও পড়ুনইউটিউব চ্যানেল জনপ্রিয় করার ৭ কৌশল১৪ জানুয়ারি ২০২৩২০২৪ সাল ইউটিউবের জন্য রেকর্ড আয়ের বছর হলেও বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, অনস্কিপেবল বিজ্ঞাপন বেশি দেখাচ্ছে ইউটিউব। ফলে অনেকেই বিজ্ঞাপন এড়াতে ইউটিউব প্রিমিয়াম সেবা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে ইউটিউবের সাবস্ক্রিপশন আয়ও বাড়ছে।
আরও পড়ুনইউটিউবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০ চ্যানেলের নাম জানেন কি১৪ অক্টোবর ২০২৪ইউটিউবের তথ্য মতে, বিজ্ঞাপন দেখানোর কারণেই বিশ্বের কোটি কোটি গ্রাহক বিনা মূল্যে ইউটিউব ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। আর তাই অ্যাড ব্লকার গ্রহণযোগ্য নয়। ইউটিউব প্রিমিয়াম সেবা নিবন্ধন করে বিজ্ঞাপন ছাড়া ভিডিও দেখা যায়। ইউটিউব প্রিমিয়ামে নিবন্ধনকারীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ নির্মাতাদেরও দেওয়া হয়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
আরও পড়ুনইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের সুযোগ যেসব কারণে বন্ধ হতে পারে১৩ মার্চ ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’