বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছে, যা কেবল বিচার বিভাগ নয়, রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যান্য ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে আশা করা যায়।

গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান প্রতিবেদন জমা দেন। এই প্রতিবেদনের যে বিষয়টি আমাদের বাড়তি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেটি হলো রাষ্ট্রপতির ক্ষমার এখতিয়ার নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ।

আমাদের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।’ এই বিধান আরও অনেক দেশে আছে। কিন্তু এই বিধানের সুযোগ নিয়ে অতীতের সরকারগুলো যেভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার যথেচ্ছ প্রয়োগ করেছে, তা কেবল উদ্বেগজনক নয়; আইনের শাসনেরও পরিপন্থী।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধানটি রাখা হয়েছিল বিশেষ ক্ষেত্রে। কিন্তু ক্ষমতাসীনেরা এটাকে দলীয় অপরাধীদের বেকসুর খালাস দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধান থাকলেও এটি শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী বা নির্বাহী প্রধানের এখতিয়ার হয়ে পড়ে। নির্বাহী বিভাগ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়, তিনি সেখানে সই দেন মাত্র। অনেক ক্ষেত্রে যাঁর দণ্ড মওকুফের জন্য সুপারিশ করা হয়, রাষ্ট্রপতি হয়তো তাঁকে চেনেনও না। 

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিধানের অপব্যবহার করা হয়েছে সব সরকারের আমলেই। বিরোধী দলে থাকতে যাঁরা এই ক্ষমার বিরোধিতা করেন, ক্ষমতায় গিয়ে তাঁরা নিজ দলের দণ্ডিত কর্মীদের মুক্তি দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এই প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার এখতিয়ার নিয়ন্ত্রণ করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে কমিশন একটি নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার যেকোনো আবেদন এলে তিনি এই বোর্ডের কাছে পাঠাবেন। বোর্ড যদি মনে করে আবেদনকারী ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য, তাহলে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন, যদি মনে করে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নন, নাকচ করে দেবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। 

এ প্রসঙ্গে গত ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টে করা একটি রিটের কথা উল্লেখ করা যায়। ওই রিটে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। আবেদনকারী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাশান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ঘটনাদৃষ্টে সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের অপব্যবহার হয়, যেখানে রাজনৈতিক আদর্শ বিবেচনায় দণ্ডিতকে ক্ষমা করতেও দেখা যায়। এটি সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সে জন্য ক্ষমা করার এই ক্ষমতা প্রয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক। 

হাইকোর্টে আবেদনকারী ও বিচার সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। বোর্ড গঠিত হলেও নীতিমালার ভিত্তিতে তাদের কাজ করতে হবে। অতএব, আমরা মনে করি, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রপতির ক্ষমার সুযোগ নিয়ে প্রতিটি সরকারের আমলে একের পর এক দণ্ডিত অপরাধী খালাস পেয়ে যাবেন, এটা হতে পারে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র শ কর সরক র র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল

মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর)  বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। 

সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।” 

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”

এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ঢাকা/চন্দন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ