কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

আজ রোববার দুপুরে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুন্সি আবদুল মজিদের আদালত এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কক্সবাজার জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো.

সিরাজ উল্লাহ। গত বছরের ৩ জুলাই এ নিয়ে প্রথম আলোতে ‘২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলা: ঘষামাজা করে নিজের নাম কেটে দেন সাবেক ডিসি’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পিপি সিরাজ উল্লাহ বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল ও স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন সাবেক ডিসি রুহুল আমিন। আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপর চার আসামি পলাতক রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতি করে নিজের নাম কেটে দেন প্রধান আসামি মো. রুহুল আমিন। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেন অপর চার আসামি। ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার।

দুদকের কক্সবাজার আদালতের আইনজীবীরা জানান, মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে রুহুল আমিন, সাদিকুল ইসলামসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করেন বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। গত জুলাই মাসে তদন্ত শেষে আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। জালিয়াতির ঘটনায় সহযোগিতা করায় আসামি করা হয় বাদীপক্ষের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং স্টেনোগ্রাফার মো. জাফর আহমদকে। মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় দুদকের কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমানের নামে।

মাতারবাড়ীতে তাপভিত্তিক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। চিংড়িঘেরের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা, যা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ নিয়ে ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘শুরুতে লুট ২২ কোটি টাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় পরের দিন মামলা হয়।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর বাদীর আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী মামলার সব কাগজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমদের কাছে দাখিল করেন। ওই দিন আদালতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রুহুল আমিনসহ ২৮ জনের নামে আবেদনটি দুদকের প্রধান কার্যালয়ের (অনুসন্ধান ও তদন্ত) পরিচালক বরাবর পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ মোট আসামি ছিলেন ২৮ জন। পরে প্রধান আসামি রুহুল আমিনকে বাদ দিয়ে ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলমকে প্রধান আসামি করা হয়। আসামি ২৮ জনের জায়গায় ২৭ জন করা হয়। বাদীর জাল স্বাক্ষর দেওয়া হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখায় ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়। বাদীর জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপি বিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগের একটি দুর্নীতির মামলায় ২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র হ ল আম ন ল ইসল ম আইনজ ব তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে: কায়সার কামাল

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে দেশের মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। দেশের প্রতিটি ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটিকে বর্তমানে উপস্থাপন করা হয়নি। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা দেখেছি, শেখ হাসিনা জাতিকে প্রতারিত করেছিল, কিন্তু এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে—এটা লজ্জাজনক।’

আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন কায়সার কামাল।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, ‘জুলাই সনদের কিছু অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২৬০ দিনের মধ্যে যদি সংবিধানে সন্নিবেশিত করা না হয়, তাহলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্নিবেশিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও এ ধরনের নজির নেই। তাই প্রতারণা বন্ধ করে অবিলম্বে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদ জাতির সামনে উপস্থাপন করেন। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না। ফ‍্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এর উৎকৃষ্ট নজির।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে কায়সার কামাল বলেন, ‘যে ভোটের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছিল, সেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে দেশের মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন। নির্বাচনের তারিখ নিয়ে টালবাহানা করলে আইনজীবী সমাজ মেনে নেবে না।’

আইন উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে কায়সার কামাল বলেন, ‘দেশের মানুষ আইনের শাসনে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান আইন উপদেষ্টা মাঝেমধ্যেই জুডিশিয়ারি বিষয়ে তির্যক মন্তব্য করছেন। দেশের আইনজীবী সমাজ এটা ভালোভাবে নিচ্ছে না, থামুন। না হলে আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।’

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এনায়েতুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব মমরুজুল হাসান, আইনজীবী নেতা নূরুল হক, রেজাউল করিম চৌধুরী, মাসুদ তানভীর তান্না প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত
  • শহিদনগর বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে বাবুলের উঠান বৈঠক
  • পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডের সেলিম প্রধান রিমান্ডে
  • সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির আরিফ ও নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো
  • প্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা
  • রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজ বাসা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার
  • নির্বাচনের আগে একটি দল জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায়: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • এখন দেখছি নতুন প্রতারকের জন্ম হয়েছে: কায়সার কামাল
  • টেকনাফে মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কা, নিহত ১