মন্ত্রিসভা থেকে কেন পদত্যাগ করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ
Published: 9th, February 2025 GMT
ডিসেম্বর ১৯৭১। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে এল দৃঢ় এক কণ্ঠস্বর—
‘দেশবাসী সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা,
বাংলাদেশে দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তিসংগ্রাম আজ সাফল্যের তোরণে উপনীত হয়েছে।...’
রেডিওর সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ শোনে, শোনে আর কাঁদে—আনন্দে, গর্বে, বেদনামিশ্রিত বিজয়ের অনুভূতিতে।
সেই কণ্ঠস্বর ছিল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের—পাদপ্রদীপের আড়ালে থাকা দূরদর্শী এক নেতা, যাঁর কৌশলী নেতৃত্ব ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় সম্ভব হতো না। শেখ মুজিব যখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, তখন তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন এক সদ্য জন্ম নেওয়া জাতির—নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী সরকারকে, সামলেছিলেন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি, গড়ে তুলেছিলেন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতির ভিত্তি। তাঁর জীবনের এমন সব ঐতিহাসিক সত্য নিয়েই মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন তাজউদ্দীন নামে একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
এই বইয়ে তাজউদ্দীন আহমদের কর্মজীবন ও রাজনৈতিক জীবনকে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। ভূমিকায় তিনি বলেই দিয়েছেন, ‘এটি তাজউদ্দীন আহমদের জীবনীগ্রন্থ নয়। এটি তাঁর রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্বের আখ্যান। বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায় ১৯৭০ সালে, এই আখ্যানের শুরু সেখান থেকে। শেষ হয়েছে তাজউদ্দীন আহমদের জীবনের বিয়োগান্ত পরিণতিতে, যেদিন তাঁর শরীর ঘাতকের বুলেট আর বেয়নেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।’
তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে নিঃশব্দে কাজ করে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও সে সময় তিনি দলের সহকর্মীদের অনেকেরই সহযোগিতা পাননি। ফলে এটি ছিল তাঁর জন্য একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর ওই সময়ের তৎপরতা ও গৃহীত অনেক সিদ্ধান্ত শেখ মুজিবের অনুমোদন পায়নি বলেই বোঝা যায়। এ জন্য সরকার ও দলের মধ্যে ধীরে ধীরে ব্রাত্য হয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকেও বিদায় করে দেওয়া হয়।
বইয়ে লেখক তাজউদ্দীন আহমদের রাজনৈতিক জীবন, তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা, দলীয় রাজনীতির দ্বন্দ্ব ও ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক সংকটের বিশ্লেষণ করেছেন। বিশেষত, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকারে তাঁর অবস্থান, মুজিবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের জটিলতা এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যাকাণ্ড—এসব বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন লেখক।
মহিউদ্দীন আহমদ দালিলিক প্রমাণ, স্মৃতিচারণা ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তাজউদ্দীন আহমদের জীবন ও রাজনীতির গভীর বিশ্লেষণ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের ২৬ অক্টোবর কেন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তাজউদ্দীন, তা নিয়েও সবিস্তার অনুসন্ধান আছে এখানে। আর এই অনুসন্ধান করতে গিয়ে লেখক তাঁর বিশ্লেষণের সপক্ষে যুক্ত করেছেন বিভিন্নজনের চিঠি ও পেপার কাটিং। ফলে সেই সময়ের বাস্তবতা খুব নির্মোহভাবেই ফুটে উঠেছে। এর বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারত সরকারের সঙ্গে তাজউদ্দীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক টানাপোড়েন সুন্দরভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে এখানে।
সৈয়দ মিজানূর রহমান
তাজউদ্দীন নামে একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন
মহিউদ্দিন আহমদ
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা; প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০২৪; প্রচ্ছদ: আনিসুজ্জামান সোহেল; ২৩২ পৃষ্ঠা; দাম: ৫৮০ টাকা।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে prothoma.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত জউদ দ ন আহমদ র র র জন ত ক মন ত র র জ বন কর ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এবারের নির্বাচনের লড়াইটা কঠিন: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের লড়াইটা হবে কঠিন।
তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচন আওয়ামী আমলের নির্বাচন নয়। নিরপেক্ষ পরিবেশেই ভোট হবে। জয়ী হতে হলে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করতেই হবে।”
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির পঞ্চম দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই নির্বাচন আওয়ামী অভয়ের নির্বাচন নয়। তাই জনগণের মন জয় করাই হবে মূল বিষয়। কে নমিনেশন পেল তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
তিনি আরো বলেন, “গত ৫ আগস্ট আমরা ফ্যাসিস্ট শাসনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেশে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছিল। আমাদের নেতা বিদেশে থাকলেও তিনি আমাদের সংগঠিত রেখেছেন— তার প্রমাণ আপনাদের সামনে।”
তিনি জানান, আজ তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ এসেছে এবং এ নেতৃত্বে থাকবেন তারেক রহমান।
ফখরুল বলেন, “আজকের লড়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিশালী মনোভাব নিয়ে এগোতে হবে। বিএনপির সংস্কার শুরু করেন জিয়াউর রহমান— রেমিট্যান্স, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, উন্মুক্ত অর্থনীতি। পরে বেগম খালেদা জিয়া শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন, যুবকদের কর্মসংস্থান বাড়িয়েছেন।”
গত ১৫ বছরের আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আপনারা দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন— এখন সেই লড়াইয়ের শেষ প্রান্তে। নির্বাচনের মাধ্যমেই এগিয়ে যেতে হবে। বিএনপি কখনো পরাজিত হওয়ার দল নয়।”
১৯৭১ প্রসঙ্গে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের অস্তিত্ব ১৯৭১। অথচ কেউ কেউ বলে ৭১-এর প্রজন্ম নাকি নিকৃষ্ট প্রজন্ম— তারা এমন কথা কীভাবে বলে?”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলেও তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বেগম রোকেয়া সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “নারী জাগরণের অগ্রদূতকে নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য। ৫ আগস্টের ঘটনার পর দেশে কোনো অন্ধ শক্তি সক্রিয় হচ্ছে কি না, সেটিও উদ্বেগের বিষয়।”
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা/মোহাম্মদ/ইভা