চল্লিশ বছর আগে, ১৯৮৫ সালে কাজী আনোয়ার হোসেন সৃষ্ট কালজয়ী চরিত্র মাসুদ রানা সিরিজের একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল ‘চারিদিকে শত্রু’ নামে। চার দশক আগের এই বইয়ের নামটি কীভাবে আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল সেই কথায় আসছি, তবে তার আগে সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের একটি সাক্ষাৎকারের শিরোনামটাও তুলে ধরছি, ‘আগে শত্রু মনে হতো একটা, এখন মনে হচ্ছে চতুর্মুখী’।

নাহিদ ইসলাম সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাঁর চিন্তার জায়গাটি নিশ্চয়ই ভিন্ন, পরিসর অনেক ব্যাপক। তবে আমাদের মতো আমজনতার উদ্বেগটাও নীতিনির্ধারকেরা একটু ভেবে দেখতে পারেন, কারণ এই বিষয়টিও একেবারে ফেলনা নয়। এখন ঘরে-বাইরে চারদিকে এমন এক অস্বস্তিকর অনুভব, যেন চারদিকে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত লড়াই করছি। এবং বলাই বাহুল্য, এই লড়াইয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শত্রুর জয় নিশ্চিত হচ্ছে।

ফেসবুকে ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ নামে একটি গ্রুপের সদস্য হিসেবে নিয়মিত ট্রাফিক পরিস্থিতির আপডেট পাই। কোন রাস্তা কখন বন্ধ, কোথায় আকস্মিক আন্দোলনের ভোগান্তি চলছে, কোথায় দীর্ঘ যানজট ইত্যাদি। তবে কয়েক মাস ধরে নগরীর ট্রাফিক পরিস্থিতি ছাপিয়ে সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে রাজপথের নিরাপত্তাহীনতা, অরাজকতা আর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা।

কয়েক দিন আগে এই প্রথম আলোতেই আমরা দেখেছি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ভয়াবহ চিত্র। পাঠকদের অবগতির জন্য ‘ট্রাফিক অ্যালার্ট’ গ্রুপে দেওয়া ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় কিছু ঘটনা তুলে ধরছি:

ঘটনা এক: অঞ্জন আহমেদ সানভী ৬ ফেব্রুয়ারি দেওয়া একটি পোস্টে বলেছেন, ‘মাওয়া থেকে আসার পথে পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে নেমে মোচড়েই মোবাইল ছিনতাই করা হচ্ছে বাস থেকে টান দিয়ে! আমাকে ভিডিও করতে দেখে মোবাইল টান দিয়ে ভেগেছে অন্যদিক দিয়ে! সবাই একটু সাবধান থাকবেন প্লিজ! আর এদের কাছে চাপাতি থাকে তাই একা কেউ যেয়েন না সামনে দয়া করে!’

এই পোস্টের সঙ্গে ছিনতাইকারীর ছবিও যুক্ত করেছেন তিনি।

ঘটনা দুই: জুনায়েদ আহমেদ নামের আরেকজন ৫ ফেব্রুয়ারি দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘খুব বাজে একটা অবস্থা এয়ারপোর্ট থেকে কাওলা পর্যন্ত! আমি জ্যামের কথা বলছি না! আমি বলছি ছিনতাইকারীর কথা। আজকে সময় ৭:২০ (রাত) এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার থেকে নামতেই দেখলাম ৬ জন একসাথে মাঝখান দিয়ে হাঁটতেসে, অবাক হইয়া দেখলাম কী করে। হঠাৎ ৬ জনের একজন একটা গাড়িকে টার্গেট করে বাকিদের ডাক দিল যাতে অ্যাটাক করে। এখন বলতে পারেন সবাই আমি কেন আটকাইলাম না! কারণ, আমি একা ছিলাম কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি, ঠিক ১০০ গজ সামনেই ২ জন পুলিশ দাঁড়ানো ছিল রেকার নিয়ে, আমি সামনে গেলাম পুলিশকে বললাম কাহিনি, বলতেসে উনার সময় নাই। মেজাজ খারাপ হয়ে গেসিলো পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়ায় অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলাম বাট লাভ হলো না, ওরা চুপ ছিল! আমিও বুঝলাম আসলে ওদেরকে বলে লাভ নাই। মনে কষ্ট নিয়া চলে আসছি বাসায়। আপনারা চাইলে আমাকে কমেন্টে গালাগালি করতে পারেন ফর নট স্টপিং দ্য থাগস (দুষ্কৃতকারীদের না থামানোর জন্য)! আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করেন আমিন!’

ঘটনা তিন: ৫ ফেব্রুয়ারিতেই দেওয়া আরেকটি পোস্টে শাহারিয়ার পিয়াস বলছেন, ‘চৌরাস্তা, গাজীপুর রাত ৩.

২৪ মিনিট দুই ছিনতাইকারী অটোরিকশা আটকানোর চেষ্টা করে; কিন্তু আমার গাড়ি দেখে দুজন দুদিকে সরে যায়। খেয়াল করলে দেখতে পারবেন তাদের হাতে বড় ধারালো অস্ত্র ছিল।’

পোস্টের সঙ্গে তিনি গাড়ির সামনে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড করা ভিডিও যুক্ত করেছেন, যেখানে যেখা যাচ্ছে একটি অটোরিকশার দুই পাশ থেকে দুজন দ্রুত সরে যাচ্ছেন। ভিডিওতে তাদের হাতে থাকা লম্বা ধারালো অস্ত্রটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

ঘটনা চার: একই দিনে শাহানা পারভীন শিখা একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী দাগু খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় রাতের চিত্র।’

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে চারজন যুবক একজন লোককে জবরদস্তি করে সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে। এ সময় ছিনতাইকারীদের একজনকে চাপাতি হাতে লোকটিতে একটি কোপ দিতেও দেখা যায়।

ঘটনা পাঁচ: মো: রউফুল ইসলাম ৪ ফেব্রুয়ারির একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘সিলেট থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার পথে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি।’

পোস্টের সঙ্গে দেওয়া ভিডিওতে ডাকাতি–পরবর্তী অবস্থায় বিপর্যস্ত মানুষগুলোকে দেখা যাচ্ছে।

ফেসবুকে এ রকম আরও অনেক গ্রুপের মধ্যে মাত্র একটি গ্রুপের তিন দিনের কয়েকটি পোস্টের চিত্র এটি। পরিসংখ্যানবিদ না হয়েও ধারণা করা যায়, সামগ্রিক চিত্রটি আসলে কতটা ভয়াবহ। একটু খুঁজলেই এমন আরও অনেক উদাহরণ মিলবে। সেই তালিকা দীর্ঘ করা অনাবশ্যক।

এই খণ্ডচিত্র থেকেই আমাদের সড়ক-মহাসড়কের বর্তমান অবস্থাটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। অবশ্য আমাদের মতো ছাপোষা মানুষের বোঝা না–বোঝায় কিছুই যায়–আসে না। কোনো কালেই, কোনো সরকারের আমলেই তা যায়–আসেনি। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, কতটা আমলে নিচ্ছেন, জননিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় কত নম্বরে…এমন অনেক বিষয়ের ওপরই নির্ভর করছে আমাদের মতো তুচ্ছাতিতুচ্ছ, অকিঞ্চিৎকর করদাতাদের ভাগ্য।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার কথার জবাবে বলেছেন, সরকার ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোর ডেটা (উপাত্ত) সংগ্রহ করছে। তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা শফিকুল আলমের বক্তব্যে আস্থা রাখতে চাই। আমরা জানতে চাই, সেই উপাত্ত কী বলছে? তার ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? আমাদের জান-মালের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। মূলত গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পরদিনের পত্রিকায় দেখলাম গাজীপুরে ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযানে ৪০ জনকে (রোববার পর্যন্ত সারাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৩০৮ জন) আটক করা হয়েছে। গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) চৌধুরী মো. যাবের সাদেক বলেছেন আটক ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোক। আমরা চাই ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজনের পাশাপাশি ছিনতাইকারী-সন্ত্রাসীদেরও ধরা হোক, যারা আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে দুঃসহ করে তুলছে।

আগেও আমরা দেখেছি, ছিনতাই-ডাকাতি বা সন্ত্রাসী হামলার মতো বিষয়গুলোকে আমলে না নিয়ে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দিতে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, মানুষের মনের কষ্ট, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাগুলো জানার-বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের কথা শুনুন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বিষয় আপনারা আমলে নিয়েছেন, নিচ্ছেন। সেটা পুরস্কার প্রদানই হোক, বা কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর মতো সিদ্ধান্তই হোক। এখন নিরাপত্তাহীন মানুষের শঙ্কার কথাগুলো শুনুন। সরাসরি সম্ভব না হলে অন্তত ফেসবুকে চোখ রাখুন। এটুকুই অনুরোধ।

গোলাম কিবরিয়া গণমাধ্যম বিশ্লেষক ও উন্নয়নকর্মী

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র আম দ র র একট

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ