ফিক্সিংয়ের দায়ে বাংলাদেশে নারী ক্রিকেটার সোহেলি আক্তারকে নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাঁকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ও শাস্তি মেনে নিয়েছেন সোহেলি।

আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী পাঁচটি ধারা ভঙ্গ করেছেন সোহেলি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একটি পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে ম্যাচের ফল, প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা ও আন্তর্জাতিক ম্যাচে ইচ্ছে করে ভালো না খেলা।

এ ছাড়া আরও যেসব দুর্নীতিবিরোধী ধারা ভঙ্গের কথা স্বীকার করেছেন সোহেলি। সেগুলোর মধ্যে আছে ফিক্সিং বা এর সঙ্গে যোগসাজশের জন্য কোনো কিছু গ্রহণ করা, চাওয়া অথবা প্রস্তাব দেওয়া, সরাসরি অথবা সম্মুখে না থেকেও ম্যাচের ফলকে প্রভাবিত করার জন্য অনুরোধ, প্রলোভন দেখানো, প্ররোচিত করা।

আকসুর দুর্নীতি দমনবিরোধী কোনো ধারা ভঙ্গ করে, এমন প্রস্তাব পেয়েও তা না জানাননি সোহেলি। তদন্তের কাজে দেরি করানো, প্রমাণ নষ্টের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

৩৬ বছর বয়সী অফ স্পিনার সোহেলির এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে অবগত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি)। এ নিয়ে জানতে চাইলে বিসিবি পরিচালক ও নারী বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমূল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু সে শাস্তি মেনে নিয়েছে। এখন আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী তা প্রয়োগ করা হবে।’

সর্বশেষ ২০২২ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন সোহেলি। আট বছর বিরতির পর ওই টুর্নামেন্টের কিছুদিন আগে জাতীয় দলে ফেরেন তিনি। ২০১৩ সালে অভিষক হওয়া এই ক্রিকেটার দেশের হয়ে দুটি ওয়ানডে ও ১৩টি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন।

১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে তাঁর পাঁচ বছরের শাস্তি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিসি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ