গাজায় ৯৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পরও ট্রাম্প বললেন, যুদ্ধবিরতি টিকে আছে
Published: 20th, October 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের নৃশংসতা কমছে না। গাজায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবে, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ১১ দিনে উপত্যকাটিতে অন্তত ৯৭ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এরপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি টিকে আছে।
গাজায় গণমাধ্যম দপ্তর থেকে আজ সোমবার প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি চলাকালে এই হত্যাকাণ্ডসহ ৮০ বার যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। এই লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে গাজাবাসীর ওপর সরাসরি গুলি, কামান ও ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ এবং আকাশপথে হামলা। একই সময়ে গাজার অনেক বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
আজও গাজার মধ্যাঞ্চলে দেইর আল–বালাহ, দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস ও উত্তরে সুজাইয়া এলাকায় বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এদিন ইসরায়েলের হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র। আর ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘হলুদ সীমা’ অতিক্রম করা কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজায় যে সীমা বরাবর ইসরায়েলি বাহিনী সরে এসেছে, তাকে ‘হলুদ সীমা’ বলা হয়। এই সীমানা পেরোনোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ফিলিস্তিনিদের। গাজার বাসিন্দারা বলছেন, এই সীমা ম্যাপে থাকলেও বাস্তবে ঠিক কোথা থেকে তা শুরু হয়েছে, বোঝার উপায় নেই। তবে রোববার ইসরায়েলের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে বুলডোজার দিয়ে এই সীমানা তৈরির কাজ করতে দেখা গেছে।
যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয় রোববার। দক্ষিণ গাজার রাফায় হামাস ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে এদিন অন্তত ৩৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। যদিও ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করেছে হামাস। আর রোববারের হামলার পর আবার যুদ্ধবিরতিতে ফেরার কথা বলা হয় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে।
এই নৃশংসতার মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি আদৌ টিকে আছে কি না, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে এমন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে উড়োজাহাজে করে ওয়াশিংটনে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, টিকে আছে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে হামাসকে সঙ্গে নিয়ে এই যুদ্ধবিরতি খুবই শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাবে।’
ট্রাম্প যতই আশ্বাস দিক না কেন, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফিলিস্তিনিদের শঙ্কা কাটছে না। রোববার ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে গাজা নগরীর বাসিন্দা আবু আবদাল্লাহ বলেন, ‘মনে হচ্ছিল, যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে। গতকাল রোববার যা হয়েছে, তারপর ভয়ে খাবার কিনতে বাজারে ভিড় করেন ফিলিস্তিনিরা। সুযোগ পেয়ে লোভী ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি খুবই নড়বড়ে।’
দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা
গাজায় ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ চলছে। এই ধাপে ২০ জন জীবিত জিম্মিকে ইসরায়েলের কাছে ফেরত দিয়েছে হামাস। মৃত ২৮ জিম্মির মধ্যে ১২ জনের মরদেহও ফেরত দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরুর জন্য ট্রাম্পের জামাতা জেরাড কুশনার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জোর দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল মঙ্গলবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফর করবেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এর আগে গতকাল তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হচ্ছে। তবে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে গাজার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরতির শেষ ধাপে গাজা পুনর্গঠনে ৫০ বিলিয়ন ডলার লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন স্টিভ উইটকফ। সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজকে তিনি বলেন, এই অর্থটা হয়তো কমবেশি হতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর জন্য এই তহবিল দেওয়াটা বেশি কিছু নয়। যদিও উইটকফের সঙ্গে দ্বিমত করে অনেক অধিকারকর্মী বলছেন, গাজা পুনর্গঠনের অর্থ ইসরায়েলকে দিতে হবে।
এদিকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য হামাসের প্রতিনিধিদল আজ কায়রোয় পৌঁছেছে। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হামাস নেতা খলিল আল–হায়া। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন দলগুলোকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসার জন্য একটি সংলাপের বিষয়ে আলোচনার জন্য মিসরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের কথাও রয়েছে তাঁদের।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র ইসর য় ল র জন য র বব র এমন প
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের ‘গঠনমূলক’ আলোচনা
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ‘দীর্ঘমেয়াদি শান্তির প্রতি আন্তরিক অঙ্গীকার’ দেখাতে রাশিয়ার প্রতি যৌথ আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ মধ্যস্থতাকারীরা। সম্প্রতি মস্কোতে হওয়া আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত না আসার পর তাঁরা এ আহ্বান জানালেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় দুই দিনের একটি বৈঠকে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি রুস্তেম উমেরভ।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁদের মধ্যে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে। এতে বলা হয়, ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ হওয়া নির্ভর করছে ‘উত্তেজনা কমানো ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধের পদক্ষেপ’ গ্রহণে রাশিয়ার আগ্রহের ওপর।
আলোচনায় অংশ নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও। শনিবার তৃতীয় দিনের মতো এ আলোচনা চলার কথা রয়েছে।
এদিকে ফ্লোরিডার বৈঠকে উইটকফ ও উমেরভ শান্তিচুক্তির সহায়ক হবে এমন একটি নিরাপত্তা কাঠামোর বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। দুজন টেকসই শান্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ সক্ষমতা নিয়েও আলোচনা করেন। তবে বিবৃতিতে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
ফ্লোরিডার বৈঠকে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলকে গত সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ পররাষ্ট্র দূতের মধ্যে হওয়া আলোচনা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা করেন উইটকফ। এরপরও মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার খসড়া নিয়ে ‘কোনো আপসে পৌঁছানো যায়নি’ বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
ক্রেমলিন বলেছ, মার্কিনদের সঙ্গে ‘যতবার দরকার, ততবার আলোচনা’ চালিয়ে যেতে রাজি আছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের অঙ্গীকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইউক্রেন ও দেশটির মিত্ররা।
গতকাল শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘মস্কোর বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে এবং যুদ্ধটাকে দীর্ঘায়িত করতে আর কী কী অজুহাত দিয়েছেন পুতিন, তার পূর্ণ বিবরণ’ জানতে চান তিনি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার প্রথম সংস্করণ ফাঁস হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছে, সেটা রাশিয়ার পক্ষে গেছে। এরপর সেই শান্তি পরিকল্পনার খসড়া পুনর্মূল্যায়নের জন্য চাপ দেয় কিয়েভ। পরবর্তী সময়ে ওই পরিকল্পনা কয়েক দফা পরিবর্তনও করা হয়, যদিও সাম্প্রতিক সংস্করণটি এখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং ভূখণ্ড ছাড়সহ বেশ কয়েকটি বড় মতপার্থক্য এখনো দুই পক্ষের মধ্যে রয়ে গেছে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকার দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড।
আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ভূখণ্ড নিয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি: রুশ কর্মকর্তা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫গতকাল শুক্রবার ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে এই সপ্তাহের মধ্যেই ওই অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যেতে হবে। অন্যথায় রাশিয়া ‘বলপ্রয়োগ করে এই (দনবাস) এলাকাগুলো মুক্ত করবে’।
ক্রেমলিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফরের আগে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সামরিক কমান্ড পোস্টে রুশ সামরিক পোশাক পরা পুতিনকে ব্রিফ করছেন কমান্ডাররা। ভিডিওতে কমান্ডাররা দাবি করছেন, তাঁরা দোনেৎস্ক অঞ্চলের কৌশলগত শহর পোকরোভস্ক এবং আশপাশের অন্যান্য এলাকার দখল নিয়েছেন। যদিও রাশিয়ার এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে ইউক্রেন।
কিয়েভ ও তাদের ইউরোপীয় মিত্ররা মনে করছে, ভবিষ্যতে রাশিয়ার হামলা রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া বা সমন্বিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদান করা।
তবে রাশিয়া এর কঠোর বিরোধিতা করছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বারবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনকে এই সামরিক জোটে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাঁর নেই।
আরও পড়ুনপুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রতিনিধিদের ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও হলো না সমঝোতা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫