ভালোবাসা দিবসে প্রকাশ পাচ্ছে সেলিম মার্চেন্টের সঙ্গে সিঁথি সাহার গাওয়া ‘বৃষ্টি বিলাস’। গত কয়েক বছরে দেশ-বিদেশের বেশ কিছু নন্দিত শিল্পীর সঙ্গে দ্বৈত গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে সিঁথির। সেই সুবাদে বলিউডের আলোচিত শিল্পী ও সংগীত পরিচালক সেলিম মার্চেন্টকে পেয়েছেন তাঁর নতুন আয়োজনের সহশিল্পী হিসেবে।
সিঁথি জানান, গত বছর সোমেস্বর অলির লেখা ও সাজিদ সরকারের সুর-সংগীতায়োজনে ‘বৃষ্টি বিলাস’ গানটি তৈরি করেছিলেন। তখনই তাঁর মনে হয়েছিল, ‘বৃষ্টি বিলাস’ দ্বৈত গানে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। সেই ভাবনা থেকে সেলিম মার্চেন্টকে গানটি শুনিয়েছিলেন। একবার শুনেই গানটি পছন্দ করেন সেলিম। এমনকি গানটি গাওয়ার প্রস্তাবেও সাড়া দেন। এভাবেই ‘বৃষ্টি বিলাস’ গানের জন্ম।
সিঁথির কথায়, ‘এটি আমার জন্য অন্যরকম ভালো লাগার যে, সেলিম মার্চেন্টের মতো নন্দিত সংগীতজ্ঞকে দ্বৈত গানের শিল্পী হিসেবে পেয়েছি। সেলিমের কণ্ঠ ও গায়কী নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই, কারণ সংগীতপ্রেমীদের কম-বেশি সবারই তাঁর সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে। এটুকু বলতে পারি, সেলিমকে সহশিল্পী হিসেবে পাওয়ায় গানে নিজের সেরা গায়কী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নিখাদ রোমান্টিক এই গানটি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শিগগিরই আমার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হবে। আশা করছি, গানটি অনেকের হৃদয় স্পর্শ করবে।’
‘বৃষ্টি বিলাস’ ছাড়াও আরও বেশ কিছু বাংলা ও হিন্দি গান রেকর্ড করছেন সিঁথি সাহা। সে তালিকায় রয়েছে উপমহাদেশের আলোচিত শিল্পী সাফকাত আমানত আলীর সঙ্গে গাওয়া দুটি হিন্দি গান। চলতি বছরের বিভিন্ন প্রান্তে গান দুটি প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে সিঁথির।
তিনি জানান, সাফকাত ছাড়াও বিভিন্ন দেশের গুণী আরও কয়েকজন শিল্পী সঙ্গে গান গাওয়ার ইচ্ছা আছে তাঁর। এমনকি সেলিম মার্চেন্টের সঙ্গে একটি হিন্দি গান গাওয়া নিয়েও ভাবছেন। তবে সবকিছু চূড়ান্ত করার পরই এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি।
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি।