জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ‘ডি’, ‘ই’ ইউনিট এবং আইবিএ-জেইউ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

বুধবার (১২ই ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে এ ফলাফল হস্তান্তর করা হয়।

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিগার সুলতানা এবং ইন্সটিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) পরিচালক অধ্যাপক আইরিন আক্তার যথাক্রমে ‘ডি’, ‘ই’ এবং ‘আইবিএ-জেইউ’ এর ফলাফল উপাচার্য অধ্যাপক ড.

মোহাম্মদ কামরুল আহসানের নিকট হস্তান্তর করেন।

ফলাফলে দেখা গেছে, ‘ডি’ ইউনিটে ছাত্রীদের পাঁচটি শিফটে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম শিফটে পাশের হার ৪২.২১ শতাংশ, দ্বিতীয় শিফটে ৪৫.৬০ শতাংশ, তৃতীয় শিফটে ৩৯.১৭ শতাংশ, চতুর্থ শিফটে ৩৮.৫৭ শতাংশ এবং পঞ্চম শিফটে ৫৫.৫০ শতাংশ।

ছাত্রীদের সর্বমোট আবেদন জমা পড়েছিল ৪৭ হাজার ৬৯২টি। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৩৯ হাজার ৯৬৮ জন। পাশ করেছে ১৭ হাজার ৬৬৪ জন। অর্থাৎ গড়ে ৪৪.২২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী পাস করেছে।

এছাড়া ছাত্রদের চারটি শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে প্রথম শিফটে পাশের হার ৩৮.০২ শতাংশ, দ্বিতীয় শিফটে ৪৭.৪৪ শতাংশ, তৃতীয় শিফটে ৪৩.০৪ শতাংশ এবং চতুর্থ শিফটে ৩৮.২৩ শতাংশ।

ছেলেদের সর্বমোট আবেদন জমা পড়েছিল ৩৯ হাজার ৭৬টি। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ৩৩ হাজার ৬৪৯ জন। পাশ করেছে ১৪ হাজার ৪ জন। গড় পাশের হার ৪১.৭০ শতাংশ।

আইবিএ-জেইউ ইউনিটে ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা করে মোট দুইটি শিফটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশের হার ছাত্রদের শিফটে ২৮.৫৪ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ২৩.৬৬ শতাংশ। 

ছাত্রদের জিপিএসহ সর্বোচ্চ নাম্বার ৭২.৮০ এবং ছাত্রীদের জিপিএসহ ৭৪.৫৮ শতাংশ। ছাত্রদের মোট আবেদন সংখ্যা ২ হাজার ৮৩৪টি এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন ২ হাজার ১২২ জন। ছাত্রীদের মোট আবেদন সংখ্যা ১ হাজার ৮৫৪টি এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে ১ হাজার ২৮৫ জন। ছাত্র-ছাত্রীদের গড় উপস্থিতি ৭৩ শতাংশ। ২৫৪ জন ছাত্র এবং ২৫০ জন ছাত্রীর মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। 

এছাড়া একই সময়ে ‘ই’ ইউনিটের ফলাফল উপাচার্যের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত তথ্য হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিগার সুলতানা। 

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “ভর্তি পরীক্ষা একটি টিম ওয়ার্ক। আমরা স্বচ্ছতা ও অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করছি। এতগুলো শিফটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল মাত্র তিনদিনের মধ্যে তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ য র ফল ফল আইব এ ইউন ট

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ