চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ছাত্রীসহ ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। সহকারী প্রক্টরকে শারীরিক লাঞ্ছনা, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বেলা তিনটায় উপাচার্যের দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে এ সভা হয়। সভা শেষে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছনার দায়ে এক ছাত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই ছাত্রীর সনদ বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে। বিষয়টি সিন্ডিকেটে পাঠানো হবে। এ ছাড়া একই দিনের ঘটনায় আরও ৯ ছাত্রীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসিক জননেত্রী শেখ হাসিনা হলে ছাত্রীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। ওই হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করা নিয়ে প্রথমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা ওই হলের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগও করেছিলেন। পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করতে যাওয়া ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদেরও লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছিল।

তবে ছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁরা নৌকা ভাঙার বিপক্ষে নন; বরং প্রশাসন যেন এটি ভাঙে, সে দাবি করেছিলেন। এ জন্য তাঁরা আগেই প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। আবার আরও একাধিক ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডিকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

এ ঘটনায় মোট ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার হওয়া ছাত্রীর নাম জানা গেছে। তাঁর নাম আফসানা এনায়েত। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। বাকি নয়জনের নামও দ্রুত জানানো হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে এক ছাত্রীসহ দুজনকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করে আসছিলেন একদল শিক্ষার্থী। বহিষ্কৃত হওয়া ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন এস এম সানবিন সিফাত ও সানিলা জামিল। তাঁরা দুজনই নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সানবিনকে দুই বছর ও সানিলাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সানবিন তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হননি। তাঁর বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ পাওয়ায় দুই বছর, এক ছাত্রী ক্ষমা চাওয়ায় তাঁকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ছ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ