সাভারে দিনের বেলায় বাসে ছিনতাই, ছুরিকাঘাতে আহত ৩
Published: 14th, February 2025 GMT
ঢাকার সাভার উপেজলার পুলিশ টাউন এলাকায় আজ শুক্রবার যাত্রীবাহী বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বাসের কয়েক যাত্রী বাধা দিতে গেলে ছিনতাইকারীদের ছুরির আঘাতে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। তাঁদের রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন বাসযাত্রী জানান, মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল শুভযাত্রা পরিবহনের একটি বাস। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাভার উপজেলার পুলিশ টাউন এলাকায় ব্রিজের কাছাকাছি যাত্রী নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটি থামান বাসের চালক। এ সময় ধারালো চাকু (ছোট আকৃতির) হাতে দুজন ব্যক্তি বাসে উঠেন। বাসে উঠেই তাঁরা সামনের দিকের যাত্রীদের তল্লাশি করে মুঠোফোন, ম্যানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন। পরে তাঁরা কয়েকজন নারী যাত্রীর গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নেন।
ছিনতাইকারীরা বাসের পেছনের দিকে গেলে যাত্রীদের কয়েকজন তাঁদের বাধা দেন। এ সময় ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে যাত্রীদের আঘাত করলে বেশ কয়েকজন আহত হন। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান।
ভুক্তভোগী এক নারী যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট থেকে ধানমন্ডি যাওয়ার জন্য শুভযাত্রা বাসটিতে উঠেছিলাম। ব্যাংক টাউন পার হওয়ার পর বাসে দুজন ছিনতাইকারী উঠেন। ছিনতাইকারীরা বাসের সামনের দিকে দুজন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যে করে ওই দুজনের জন্য সমস্যা উল্লেখ করে বাসের অন্যান্য যাত্রীদের কোনো সমস্যা নেই বলে জানান। পরে তাঁরা ওই দুজনসহ বাসের অনেকের কাছ থেকে মুঠোফোন, মানিব্যাগ কেড়ে নেন। আমার গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। পরে একজন বাধা দিলে বাকি যাত্রীরা এগিয়ে আসেন। তখন ছিনতাইকারীরা কয়েকজনকে ছুরিকাঘাত করেন।
বাসযাত্রী আলকামা আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইকারীরা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে মুঠোফোন, ম্যানিব্যাগ, চেইন ছিনিয়ে নেন। ছিনতাইকারীরা বাসের পেছনের দিকে গেলে কয়েকজন যাত্রী তাঁদের বাধা দেন। একপর্যায়ে যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের ধরতে গেলে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে চালকের সহকারীসহ তিনজন আহত হন। দুজনের পায়ে এবং একজনের হাতে মারাত্মক যখম হয়। পরে দ্রুতই তাঁরা বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান। বাসে ১৫-২০ জন যাত্রী ছিলেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি জানার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল