শেয়ারবাজারের এক–তৃতীয়াংশ কোম্পানি এখন জাঙ্ক, কী বার্তা দিচ্ছে
Published: 16th, February 2025 GMT
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় এক–তৃতীয়াংশ বা সাড়ে ২৯ শতাংশ কোম্পানিই এখন দুর্বল মানের। দুর্বল মানের এসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে, যাতে বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হন। তালিকাভুক্ত ৩৫০ কোম্পানির মধ্যে ১০৩টিই এখন দুর্বল মানের কোম্পানি।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা শতক ছাড়িয়েছে। শেয়ারবাজারে জেড শ্রেণিভুক্ত দুর্বল মানের কোম্পানিগুলো জাঙ্ক শেয়ার হিসেবে বেশি পরিচিত।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে ঢাকার বাজারে জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩টিতে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবারই নতুন করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এই ব্যাংক তিন বছর না ঘুরতেই দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এর আগে বুধবারও পাঁচটি কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়। কোম্পানিগুলো হলো সমতা লেদার, গোল্ডেন সন, এসএস স্টিল, আমরা টেকনোলজিস ও আমরা নেটওয়ার্কস। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ না করায় এসব কোম্পানিকে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গোল্ডেন সন বৃহস্পতিবার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ করে দিয়েছে। এ কারণে কোম্পানিটিকে আগামী রোববার থেকে আবারও বি শ্রেণিতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি আদেশ জারি করে। সেখানে কোন ধরনের কোম্পানিকে দুর্বল মানের বা জেড শ্রেণিভুক্ত করা যাবে, তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির সেই নির্দেশনা মেনে কোম্পানির শ্রেণীকরণ করতে গিয়ে শেয়ারবাজারে দ্রুতই বাড়ছে দুর্বল মানের কোম্পানির সংখ্যা। তাতে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা কমছে।
বিএসইসির ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশের ৮০ শতাংশ বিতরণ না করলে ওই কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করার বিধান করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে কোনো কোম্পানি বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করতে না পারলে সেই কোম্পানিকেও জেড শ্রেণিভুক্ত করার বিধান করা হয়। এই দুই বিধানের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির শ্রেণি অবনমন হয়েছে।
বাজারে যখন এক–তৃতীয়াংশ কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ার হয়ে পড়ে, তখন তা দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খারাপ বার্তা দেয়। এ ধরনের খবরে বিনিয়োগে আগ্রহ হারান ভালো বিনিয়োগকারীরাফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসিবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বর্তমানে যে হারে জাঙ্ক বা জেড শ্রেণিভুক্ত শেয়ারের সংখ্যা বাড়ছে, তা বাজারের জন্য উদ্বেগজনক। এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় তা দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এ অবস্থায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি শ্রেণীকরণের পুরো প্রক্রিয়া নতুন করে পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। তা না হলে বাজারে বিনিয়োগযোগ্য শেয়ারের সংখ্যা কমে যাবে। তাতে বাজারে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, তালিকাভুক্ত শতাধিক কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ারে পরিণত হওয়া বাজারের জন্য খুবই খারাপ খবর। একটি বাজারে যখন এক–তৃতীয়াংশ কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ার হয়ে পড়ে, তখন তা দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খারাপ বার্তা দেয়। এ ধরনের খবরে বিনিয়োগে আগ্রহ হারান ভালো বিনিয়োগকারীরা। তাই বর্তমান পরিস্থিতি কোম্পানির শ্রেণীকরণ বা শ্রেণিবিভাজন নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তারা বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে পারে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৬০টির বেশি কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে। সেই হিসাবে গত এক বছরেই সবচেয়ে বেশি কোম্পানি জাঙ্ক শেয়ার হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। বিএসইসির নতুন নিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন বাজার–সংশ্লিষ্টরা।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে বর্তমানে এ, বি, এন ও জেড নামে চারটি শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে যেসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয় ও নিয়মিত বার্ষিক সভা করে, সেসব কোম্পানি এ শ্রেণিভুক্ত। যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো বি শ্রেণিভুক্ত। এ ছাড়া নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে এন শ্রেণিভুক্ত করা হয়। আর যেসব কোম্পানি নিয়মিত বার্ষিক সভা করে না, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় না, লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানিগুলো জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়। শেয়ারবাজারে বর্তমানে বি ও এন শ্রেণির চেয়ে জেড শ্রেণির কোম্পানির সংখ্যা বেশি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্তে শতাধিক কোম্পানি এখন জেড শ্রেণিভুক্ত। এ অবস্থায় আইপিও নীতিমালার আমূল পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি কোম্পানির শ্রেণিবিভাজন নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবেমিনহাজ মান্নান ইমন, পরিচালক, ডিএসইসাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ার জন্য জেড শ্রেণিভুক্ত শেয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকেও একটি কারণ হিসেবে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, যখনই কোনো কোম্পানি জেড শ্রেণিভুক্ত হয়, তখনই এটির লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আবার এ ধরনের কোম্পানিতে ঋণসুবিধাও বন্ধ হয়ে যায়। লেনদেন নিষ্পত্তি হতেও বেশি সময় লাগে। এসব কারণে বাজারে লেনদেনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ডিএসইর বর্তমান বিধান অনুযায়ী, জেড শ্রেণিভুক্ত কোনো শেয়ারে ঋণসুবিধা পান না বিনিয়োগকারীরা। আর জেড শ্রেণির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতে তিন দিন সময় লাগে।
এ ছাড়া দুর্বল মানের এসব কোম্পানি নিয়ে হামেশা শেয়ারবাজারে কারসাজির ঘটনাও ঘটছে। নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে এসব শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। এতে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহেও ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে ৫টিই ছিল জেড শ্রেণিভুক্ত। কোম্পানিগুলো হলো নিউলাইন ক্লথিংস, অ্যাপোলো ইস্পাত, নুরানী ডায়িং, রিংশাইন টেক্সটাইলস ও রেনউইক যোগেশ্বর।
এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন প্রথম আলোকে বলেন, ১৫ বছর ধরে খারাপ কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জসহ বাজার অংশীজনেরা বিরোধিতা করে আসছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব বিরোধিতাকে আমলে নেয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্তে শতাধিক কোম্পানি এখন জেড শ্রেণিভুক্ত। এ অবস্থায় আইপিও নীতিমালার আমূল পরিবর্তন দরকার। পাশাপাশি কোম্পানির শ্রেণিবিভাজন নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও তালিকাচ্যুতির ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে ন্যস্ত করা সময়ের দাবি। পুঁজিবাজার উন্নয়নে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তারা আইপিও নীতিমালা সংশোধন ও কোম্পানির শ্রেণিবিভাজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র বল ম ন র ক ম প ন জ ড শ র ণ ভ ক ত কর শ র ণ ভ ক ত হয় শ র ণ ব ভ জন সব ক ম প ন ব এসইস র এক ত ত য় এ ধরন র ত হয় ছ এসব ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘সমন্বিত রোডম্যাপে ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের টেকসই পথ পুঁজিবাজার’
দেশের ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুঁজিবাজারই হতে পারে টেকসই পথ, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার নতুন ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। এজন্য একটি সমন্বিত রোডম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডআরএ) এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে এ রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
আরো পড়ুন:
সিএসই-৫০ সূচক সমন্বয়, কার্যকর ১১ নভেম্বর
সাইফুল ইসলাম ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জ আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা: পুঁজি কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের অর্থনীতিবিদ হাসনাত আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ।
আলোচনায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিগত সময়ে নন পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ২৮ শতাংশে পৌঁছছে। বর্তমানে আস্থা ফেরাতে মূলধন জরুরি। এ কাজে পুঁজিবাজার এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরি।”
প্রাইম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান ও. রশিদ বলেন, “ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য রেগুলেটরদের সমন্বিত মতামতের ভিত্তিতে একটি ফ্রেম ওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।”
হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এএফএম নেসার উদ্দীন বলেন, “বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের ব্যাংকের বেশি ছাড় দেওয়ার কারণেই মন্দ ঋণ বেড়েছে। মন্দ ঋণের ব্যাংকগুলোকে আস্থা ফেরাতে অবশ্যাই খেলাপী পরিচালকদের বের করে দিয়ে আমানতকারীদের হাতে ব্যাংকের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।”
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নাই। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এ দুইটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে অর্থনীতি আগানো কঠিন হবে। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয় ও আইডআরএ-কে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অন্যতম দূর্বলতা কার্যকর বন্ড মার্কেট না থাকা। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্ড মার্কেট খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশকে অর্থনীতিকে নিয়ে সম্পদভিত্তিক বন্ড মার্কেট দরকার। বন্ডের নীতিমালা শক্তিশালী করে ট্রেজারি বন্ডকে পুঁজিবাজারে লেনদেনযোগ্য করতে হবে। এই বন্ডকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছেও পরিচিত করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি জনপ্রিয় করতে আগামী ১০ বছরের মুনাফার ওপর কর মওকুফ করতে হবে। ক্যাপিটাল গেইনের ওপর যেমন ছাড় ছিল, ঠিক তেমনি বন্ডের ওপর করছাড় দিতে হবে। একইসঙ্গে মার্জার সংক্রান্ত আইনেরও কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। সেটা না হলে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা ফেরানো কঠিন হবে “
সিটি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যাংকের ঋণকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ডে বিচার করতে হবে। ঋণগুলোতে তিনভাগে ভাগ করে পৃথক পৃথক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশকে অবশ্যই অর্থনীতির বৈশ্বিক সূচকগুলো মানতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশের ন্যারেটিভ তৈরি করা সম্ভব নয়।”
পুঁজিবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জানালিস্ট ফোরামের (সিএমএজেএফ) প্রেসিডেন্ট এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেছেন, “পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যে সমস্ত বহুজাতিক কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে আসেনি বা তালিকাভুক্ত হয়নি, সেগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কোম্পানি যেগুলো এখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, সেগুলোতে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে। ভালো ভারো কোম্পানি বাজারে আসলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাংকগুলোর শেয়ার দরে পড়বে। তখন ব্যাংক রাইট ও বোনাস শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলা সম্ভব হবে।”
অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। আর্থিক খাতের উন্নয়নে সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো জরুরি। এছাড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুশাসন ফিরিয়ে আনা জরুরি।”
সিএমজেএফ নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাইজিংবিডি ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান তানিম বলেন, “ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ার ফলে মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলো সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সরাসরি মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। বর্তমানে পুঁজিবাজারই হতে পারে ব্যাংকিং খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনার টেকসই পথ। এজন্য বাস্তবায়নযোগ্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, এনবিআর, আইডআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নীতিগত সমন্বয় প্রয়োজন। সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোতে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
আলোচনার শেষ পর্বে বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে জাতীয় কৌশল নেই। সেইসাথে এই কৌশলের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও নাই। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে রেগুলেটরি ম্যাপিং প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের ক্যাপিটালাইজেশন ও নন পারফর্মিং লোন রিকভারি- এ দুই জায়গাতেই বাধা আছে। সেখানে সুর্নির্ধারিত বা নিয়মিত নীতিমালা নাই। তবে সেটা আলোচনার মাধ্যমে দূর করতে হবে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা একেবারে বড় লাফ দিতে পারব না। স্থানীয় বাস্তবতাকে মাথায় রেখে আমাদের চলতে হবে। সরকারের সহযোগিতা, সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন, আইনগত সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলেই ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
আলোচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ঢাকা/এনটি/মেহেদী