ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া ৪ ফিলিস্তিনি হাসপাতালে ভর্তি
Published: 16th, February 2025 GMT
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গতকাল শনিবার ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনি জিম্মিদের মধ্যে চারজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাঁরা।
ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকা ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে গতকাল মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর বিনিময়ে গাজায় হামাসের হাতে থাকা তিনজন জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় কয়েক দফায় জিম্মি-বন্দী বিনিময় করেছে হামাস আর ইসরায়েল। মুক্ত হওয়া ইসরায়েলি জিম্মিদের সুস্থ-সবল দেখা গেলেও ফিলিস্তিনি বন্দীদের অনেককেই বেশ শীর্ণ দেখা গেছে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কারও কারও হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছিল। এরই মধ্যে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চারজনের হাসপাতালে ভর্তির কথা জানা গেল।
ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া ফিলিস্তিনি আমির আবু রাদাহ আল-জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলের নাফহা ডেজার্ট কারাগারে ১৮ মাস বন্দী ছিলেন তিনি। সেখানে কর্তৃপক্ষ পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল।
আমির আবু রাদাহ আরও বলেন, ‘খুব কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা কারাগারে ছিলাম। কেউই এটা সহ্য করতে পারছিল না। দেড় বছর আমরা বাইরের কারও সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারিনি। পুরো বিশ্ব থেকে আমাদের কার্যত বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল।’
সাম্প্রতিক বিনিময়ের আওতায় মুক্ত হওয়া আরেকজন ফিলিস্তিনি বন্দী হাজেম রাজাব আল-জাজিরাকে বলেন, যুদ্ধ শুরুর মাস দুয়েক পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে আটক করা হয়। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
হাজেম রাজাব আরও বলেন, ‘ইসরায়েলিরা আমাদের বলেছিল “নরকে স্বাগতম”। সেটা আসলেই একটি নরক ছিল।’ স্মৃতি হাতরে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমাদের প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ওই মারধর ছিল নৃশংস, কঠিন আর অসহনীয়।’
আরও পড়ুনইসরায়েলি ৩ জিম্মি মুক্ত, কারামুক্তি পেলেন ৩৬৯ ফিলিস্তিনি১৯ ঘণ্টা আগেএমনকি মুক্তি দেওয়ার শেষ কয়েক ঘণ্টায়ও মারধরের শিকার করার কথা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি বন্দীরা, এমনটাই বলেন আল-জাজিরার নউর ওদেহ। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বন্দিশালাগুলো থেকে মুক্ত হওয়া ফিলিস্তিনিদের শারীরিক অবস্থা আসলেই শোচনীয় ছিল। তাঁরা গত ১৫ মাসে না খেয়ে থাকা আর অপুষ্টিতে ভোগার মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এমনকি তাঁদের পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী দেওয়া হতো না। ১০ দিনে একবার গোসল করার অনুমতি দেওয়া হতো।
আরও পড়ুনগাজা নিয়ে ট্রাম্পের ‘ধোঁকা’, প্রত্যাখ্যান আরব নেতাদের ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক র গ র ম ক ত হওয়
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫