যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গতকাল শনিবার ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনি জিম্মিদের মধ্যে চারজনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লার একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাঁরা।

ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী থাকা ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে গতকাল মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর বিনিময়ে গাজায় হামাসের হাতে থাকা তিনজন জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় কয়েক দফায় জিম্মি-বন্দী বিনিময় করেছে হামাস আর ইসরায়েল। মুক্ত হওয়া ইসরায়েলি জিম্মিদের সুস্থ-সবল দেখা গেলেও ফিলিস্তিনি বন্দীদের অনেককেই বেশ শীর্ণ দেখা গেছে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কারও কারও হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছিল। এরই মধ্যে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চারজনের হাসপাতালে ভর্তির কথা জানা গেল।

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া ফিলিস্তিনি আমির আবু রাদাহ আল-জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলের নাফহা ডেজার্ট কারাগারে ১৮ মাস বন্দী ছিলেন তিনি। সেখানে কর্তৃপক্ষ পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল।

আমির আবু রাদাহ আরও বলেন, ‘খুব কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা কারাগারে ছিলাম। কেউই এটা সহ্য করতে পারছিল না। দেড় বছর আমরা বাইরের কারও সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারিনি। পুরো বিশ্ব থেকে আমাদের কার্যত বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছিল।’

সাম্প্রতিক বিনিময়ের আওতায় মুক্ত হওয়া আরেকজন ফিলিস্তিনি বন্দী হাজেম রাজাব আল-জাজিরাকে বলেন, যুদ্ধ শুরুর মাস দুয়েক পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে আটক করা হয়। এর পর থেকে তাঁর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

হাজেম রাজাব আরও বলেন, ‘ইসরায়েলিরা আমাদের বলেছিল “নরকে স্বাগতম”। সেটা আসলেই একটি নরক ছিল।’ স্মৃতি হাতরে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমাদের প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ওই মারধর ছিল নৃশংস, কঠিন আর অসহনীয়।’

আরও পড়ুনইসরায়েলি ৩ জিম্মি মুক্ত, কারামুক্তি পেলেন ৩৬৯ ফিলিস্তিনি১৯ ঘণ্টা আগে

এমনকি মুক্তি দেওয়ার শেষ কয়েক ঘণ্টায়ও মারধরের শিকার করার কথা জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি বন্দীরা, এমনটাই বলেন আল-জাজিরার নউর ওদেহ। তিনি বলেন, ইসরায়েলি বন্দিশালাগুলো থেকে মুক্ত হওয়া ফিলিস্তিনিদের শারীরিক অবস্থা আসলেই শোচনীয় ছিল। তাঁরা গত ১৫ মাসে না খেয়ে থাকা আর অপুষ্টিতে ভোগার মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। এমনকি তাঁদের পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী দেওয়া হতো না। ১০ দিনে একবার গোসল করার অনুমতি দেওয়া হতো।

আরও পড়ুনগাজা নিয়ে ট্রাম্পের ‘ধোঁকা’, প্রত্যাখ্যান আরব নেতাদের ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক র গ র ম ক ত হওয়

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ