ইউক্রেনে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার ড্রোন হামলা, শীতে বিপর্যস্ত মানুষ
Published: 17th, February 2025 GMT
রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিকোলাইভে একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে তীব্র শীতের মধ্যে ওই এলাকার প্রায় ৪৬ হাজার মানুষকে বিদ্যুৎহীন রাত কাটাতে হয়েছে। ঘরবাড়ি গরম করার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ তাঁরা পাননি। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিস শিমহাল এ কথা জানান।
বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, যাতে শূন্যের নিচে তাপমাত্রায় মানুষকে তীব্র শীতের মধ্যে রাখা যায়। মানবিক বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি করা যায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, এ হামলার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। হামলার জেরে শহরটির এক লাখ বাসিন্দা তীব্র শীতের মধ্যে উত্তাপ পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় ইউরোপকে যুক্ত করা হবে না: ট্রাম্পের দূত১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এক্স পোস্টে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘শহরটি খুবই সাধারণ। বেসামরিক অবকাঠামোও সাধারণ। এর সঙ্গে শত্রুতা কিংবা সম্মুখ যুদ্ধ পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই।’ মিকোলাইভবাসীকে শীত থেকে রক্ষা করতে ও তাপের ব্যবস্থা আবারও চালু করতে ‘নিরলসভাবে কাজ করা’ হচ্ছে বলেও জানান জেলেনস্কি।
রুশ বাহিনী রাতভর ইউক্রেনে ১৪৩টি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, এর মধ্যে তারা ৯৫টি ড্রোন ভূপাতিত করতে পেরেছে। ৪৬টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারেনি। ড্রোন হামলা ঠেকাতে বৈদ্যুতিক চুম্বক প্রতিরোধব্যবস্থা ব্যবহারের কারণে সম্ভবত এটা সম্ভব হয়েছে।
ইউক্রেনে রাতভর এসব ড্রোন হামলায় অন্তত একজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেশটির কিয়েভ অঞ্চলে কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রোববার রাতে মিকোলাইভ শহরের তাপমাত্রা মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার কথা ছিল।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের টিকে থাকার সম্ভাবনা কম: জেলেনস্কি১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এদিকে জার্মানির মিউনিখে তিন দিনের নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। রোববার সম্মেলন শেষ হয়েছে। বৈঠকের ফাঁকে জেলেনস্কি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদারে সহায়তার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর তৃতীয় বর্ষপূর্তি সামনেই। বর্তমানে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ধীরগতিতে হলেও ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনী অগ্রসর হচ্ছে।
ইউক্রেনে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় গত সপ্তাহজুড়ে আকাশপথে প্রায় ১ হাজার ২২০টি বোমা হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর মধ্যে ৮৫০টির বেশি ড্রোন হামলা। ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ৪০টির বেশি। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ কথা জানান জেলেনস্কি।
এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
আরও পড়ুনচেরনোবিলে রুশ ড্রোন হামলা১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হাইফা কেন গুরুত্বপূর্ণ, কেন ইরানের নিশানায় শহরটি
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফা। শহরটি নিশানা করে গতকাল শনিবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে। খবরে হাইফায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়ার তথ্যও জানানো হয়।
খবরে আরও বলা হয়, হাইফার উত্তরের কিছু শহরেও গতকাল ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। বদলা হিসেবে হাইফাসহ ইসরায়েল বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা চালানোর কথা জানিয়েছে ইরান।
হাইফায় ইরানের হামলা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দাবি করা হয়, গতকাল ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছোড়া হয়, যার লক্ষ্য ছিল হাইফা ও তেল আবিব।
চ্যানেল ১২, টাইমস অব ইসরায়েলসহ ইসরায়েলি গণমাধ্যমে হাইফায় বিস্ফোরণ, বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের খবর দিয়ে বলা হয়েছে, এগুলো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাব।
অন্যদিকে বিবিসি প্রথমে বলেছিল, হাইফায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। সেখানে পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে আবার বিবিসি বলে, হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানার খবরটি ঠিক নয়।
হাইফা ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। কিন্তু ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের উপকূলীয় এ শহরটি কেন গুরুত্বপূর্ণ, কেনইবা ইরানের লক্ষ্যবস্তু হাইফা?
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, হাইফায় ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি আছে। এ ছাড়া এখানে বেশ কিছু তেল শোধনাগার ও বহু রাসায়নিক কারখানা আছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার হাইফা এলাকায় অবস্থিত।
হাইফা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটি বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, হাইফা ইসরায়েলের প্রধান গভীর সমুদ্রবন্দর। ইসরায়েলের সামুদ্রিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এখান থেকে পরিচালিত হয়। ইসরায়েলের মোট পণ্য পরিবহনের প্রায় অর্ধেকই এই বন্দর দিয়ে পরিবাহিত হয়।
বাণিজ্যিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে হাইফায় আয়রন ডোম স্থাপনসহ নানা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ইসরায়েল গ্রহণ করে রেখেছে বলে জানায় রয়টার্স।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইফায় অবস্থিত নৌঘাঁটি, তেল শোধনাগার ও রাসায়নিক কারখানাগুলো তেল আবিবের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
হাইফায় ইরানি হামলা প্রত্যাশিত ছিল বলে উল্লেখ করেছে আল–জাজিরা। কারণ হিসেবে বলা হয়, এই শহরে গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস অবকাঠামো রয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে হাইফায় ইরানের হামলা এই ইঙ্গিত দেয় যে তেহরান তার অঙ্গীকার অনুযায়ী পাল্টা জবাব দিচ্ছে। কারণ, তেহরান বলেছিল, ইসরায়েল যদি ইরানের বেসামরিক অবকাঠামো বা জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায়, তাহলে তারাও ঠিক একই রকম জবাব দেবে।