বাংলাদেশি-ভারতীয়দের মধ্যে বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
Published: 17th, February 2025 GMT
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে। তবে রাজনৈতিক এ উত্তেজনার প্রভাব ‘আন্তঃদেশীয়’ বিয়েতে প্রভাব ফেলেনি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের মধ্যে বিয়ের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০০ বাংলাদেশি নারী ভারতীয়দের বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। একই সময় ১১ বাংলাদেশি পুরুষ ভারতীয় নারীকে বিয়ের আবেদন করেন। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালেই বাংলাদেশি-ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিয়ের নিবন্ধন হয়। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৮৬ বাংলাদেশি পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয়দের বিয়ে করার আবেদন করেন।
তবে যেসব বাংলাদেশি ভারতীয়দের বিয়ে করেছেন তাদের কতজন ভারতে অবস্থান করবেন সেটি নিশ্চিত নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, নাগরিকত্ব আইন বিবেচনা করে বলা যায়, তাদের বেশিরভাগেরই ভারতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, যদি অন্য কোনো দেশের নাগরিক ভারতীয়দের বিয়ে করেন তাহলে তারা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া যদি কোনো শিশুর বাবা অথবা মা ভারতীয় হন, তাহলে ওই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে।
রেকর্ড অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ৪১০ বাংলাদেশি নারী ভারতীয় বর বেছে নিয়েছেন। অপরদিকে ৭৬ বাংলাদেশি পুরুষ ভারতীয় বধূ নিয়ে দেশে এসেছেন।
গত বছর যে ১০০ বাংলাদেশি নারী ভারতীয়দের বিয়ে করার আবেদন করেছেন তাদের মধ্যে ৭৯ জন ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ১৬ জন মুসলিম এবং পাঁচজন খ্রিস্টান। অপরদিকে যে ১১ বাংলাদেশি পুরুষ ভারতীয় নারীদের বিয়ে করেছেন তাদের মধ্যে ৯ জনই হিন্দু। বাকি দুজন মুসলিম।
এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেখানে বিদেশিদের ভারতীয়দের বিয়ে করার পদ্ধতিটি সহজ করে দেয়। এরপর থেকে বাংলাদেশি-ভারতীয়দের মধ্যে বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’