মিউটেশন (নামজারি), ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, খতিয়ান ও ম্যাপ সরবরাহের অনলাইন সিস্টেমের আরো উন্নত ও সমন্বিত সংস্করণ চালু করা হয়েছে।

জনগণকে উন্নত ও সমন্বিত ভূমি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে।

নাগরিকরা land.gov.bd ওয়েবসাইটে মাত্র একবার নিজের মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করে লগইনের মাধ্যমে ই-মিউটেশন, ভূমি উন্নয়ন কর, পর্চা-খতিয়ান ও ম্যাপ বের করতে পারবেন। এগুলো সহজেই প্রিন্ট দিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে। 

আরো পড়ুন:

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আইনের আওতায় আনা হবে: উপদেষ্টা

পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ উদ্যোগ

মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয় উপসচিব সেলিম আহমেদের সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, নতুন সফটওয়্যারগুলো চালুর পর কিছু কারিগরি ত্রুটি ও আন্তঃসমন্বয়-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সাধারণ জনগণ প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু সেবা পেতে ভোগান্তির মুখে পড়েছিল। বিষয়টি নজরে আসায় দ্রুত তা সমাধান করা হয়েছে। 

গণবিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, এখন ব্যক্তি ও সংস্থার ভূমি উন্নয়ন কর সহজেই অনলাইনে জমা দিয়ে দাখিলা প্রিন্ট এবং অনলাইনে মিউটেশনের আবেদন করা যাচ্ছে। আবেদন মঞ্জুর হলেই ডিসিআর ফি জমা দিয়ে অনলাইনে খতিয়ান প্রিন্ট করা যাচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, ভূমিসেবার ওয়েবসাইটে পর্চা-খতিয়ান ও ম্যাপ তোলার ফি জমা দিয়ে ঘরে বসেই খতিয়ান ও ম্যাপ পাওয়া যাচ্ছে। 

সিস্টেমটি নতুন হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব ভূমিসেবা পেতে কিছু কারিগরি সমস্যার খবর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, যা সঙ্গে সঙ্গে সমাধানও করা হচ্ছে, বলা হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।

এতে বলা হয়েছে, নাগরিকদের অসুবিধা দূর করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে একটি হটলাইন ১৬১২২ চালু করা হয়েছে। 

ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, ভূমিসেবা পেতে সার্ভারসহ যেকোনো সমস্যার মুখে পড়লে নাগরিকরা তাদের সমস্যার কথা ১৬১২২ হটলাইনে জানাতে পারবেন। হটলাইন নম্বরটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা।

এদিকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি বা স্থাবর সম্পত্তি নামজারির বিষয়টি স্পষ্ট করে সম্প্রতি একটি পরিপত্র জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

পরিপত্র্রে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের যৌথভাবে দাখিল করা নামজারির আবেদন বণ্টননামা দলিল ছাড়াই করা যাবে। 

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পর ভূমিসেবা সহজ ও ত্বরাণ্বিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন ও দাপ্তরিক সেবা নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গান-কবিতায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ

ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা ব্যাপি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে গান, কবিতা ও কথায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গতকাল বুধবার দুপুরে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।

এর প্রতিবাদে আজ ‘ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক ও শিল্পী সমাজ’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ জানানো হয়। বেলা ১১টার দিকে প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল এসে মাইকবিহীন কর্মসূচি করতে বলেন আন্দোলনকর্মীদের। কিন্তু প্রতিবাদী কর্মসূচি চলতে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে ডিবি পুলিশের দল। প্রতিবাদী কথা, গান ও কবিতা পড়তে থাকেন কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।

বীক্ষণ আসরের প্রথম আহ্বায়ক কথাশিল্পী সালিম হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মানুষের কথা বলার মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া। বিগত সরকার আমলে দীর্ঘ সময় আমাদের বুকে জগদ্দল পাথর চাপিয়ে আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে গতকাল প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের আশাহত করেছে এবং প্রতিবাদে উজ্জীবিত করেছে। দম্ভের কারণে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরাও দাম্ভিকতা দেখালে পরিণাম ভালো হবে না।’

প্রতিবাদী কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রতিবাদী গান। শিল্পী হিরক সিঙ্গার, মিজান বাউলা, শাহনাজ সাথী বিদ্রোহী গান পরিবেশন করেন। কবি সাঈদ ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কবি শামসুল ফয়েজ, নাফিসা মাহজাবিন, কামরুল হাসান ও শরৎ সেলিম, সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদুল হাসান, সংগীতশিল্পী অঞ্জনা সরকার, আবুল কালাম আল আজাদ, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, নাগরিক নেতা তৌহিদুজ্জামান ছোটন, আন্দোলনকর্মী আরিফুল হাসান, আজিত দাস, আবদুল্লাহ আল নাকীব প্রমুখ।

আশরাফ মীর বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বিনা নোটিশে আমাদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আমারের অন্তরে আঘাত দিয়েছে। কেন মুক্তমঞ্চ বিনা নোটিশে ভেঙে দেওয়া হলো? যার ইঙ্গিতে এই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলো, তিনি অনুতপ্ত হবেন এবং মঞ্চটি পুনরায় নির্মাণ করে দেবেন, এই আশা করি। আমরা জীবন ও বেদনার কথা বলি কবিতায়। আমরা শান্তি চাই, কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।’

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ১৯৮০ সালের ২১ মে ময়মনসিংহে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হয়। আগামীকাল শুক্রবার ছিল বীক্ষণের ২১৪৬তম আসর। শুরু থেকে বিরতিহীন প্রতি শুক্রবার আসরটি বসে, যা বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘতম পাঠচক্রের আসর। একটি মুক্তমঞ্চে কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিকর্মীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গান, আলোচনা করে থাকেন। দেশের বিখ্যাত কবি–সাহিত্যিক এখানের মুক্তমঞ্চে সাহিত্যায়োজনে কবিতা পড়েছেন, সাহিত্য আলোচনা করে গেছেন।

পুনরায় মুক্তমঞ্চ নির্মাণের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাঈদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল গুঁড়িয়ে দেওয়া মঞ্চের সামনে বীক্ষণের নিয়মিত আসর পালন করা হবে। এরপর শনি ও রোববার প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না করলে সোমবার ময়মনসিংহসহ সারা দেশে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমদ দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, নগরের জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ৬ শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেয়। সেই জমিতেই প্রশাসনই মুক্তমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখন সেই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ গতকাল জানিয়েছিলেন, ‘কাগজপত্রে সাহিত্য সংসদ বলতে সেখানে কিছু নেই। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করলে তো হবে না। সাহিত্য সংসদ আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ